আলোর পথ : অন্ধকারের পথ
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৩ পিএম | আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “অন্ধ ও চক্ষুস্মান সমান নয়, না অন্ধকার ও আলো সমান পর্যায়ের, না শীতল ছায়া ও রোদের তাপ একই পর্যায়ের এবং না জীবিত ও মৃত সমান।”(সুরা ফাতির:১৯-২২)
এ আয়াতের উপমাগুলোতে মু’মিন ও কাফেরের বর্তমান ও ভবিষ্যতের পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। এদের এক ব্যক্তি প্রকৃত সত্য থেকে চোখ বন্ধ করে আছে। সে একবারও দেখছে না বিশ্ব জাহানের সমগ্র ব্যবস্থা এবং এমনকি তার নিজের অস্তিত্ব কোন সত্যের প্রতি ইংগিত করছে। অন্যদিকে আর এক ব্যক্তির চোখ খোলা আছে । সে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে তার ভেতরের ও বাইরের প্রত্যেকটি জিনিস আল্লাহর একত্ব এবং তার সামনে মানুষের জবাবদিহির ওপর সাক্ষ দিচ্ছে। একদিকে এক ব্যক্তি জাহেলী কল্পনা ও ভাববাদ এবং ধারণা, আন্দাজ অনুমানের অন্ধকারে হাতড়ে মরছে এবং নবীর জ্বালানো প্রদীপের কাছাকাছি ঘেষতেও রাজি নয়।
অন্যদিকে অপর ব্যক্তি চোখ একদম খোলা। নবী জ্বালানো আলোর সামনে আসতেই তার কাছে একথা একেবারেই পরিস্কার হয়ে গেছে যে, মুশরিক, কাফের ও নাস্তিক্যবাদীরা যেসব পথে চলছে সেগুলো ধ্বংসের দিকে চলে গেছে এবং সাফল্য ও মুক্তির পথ একামত্র সেটিই যেটি আল্লাহ ও তার রাসুল দেখিয়েছেন। এখন দুনিয়ায় এদের দু’জনের নীতি এক হবে এবং একই সাথে পথ চলবে এটা কেমন করে সম্ভব। দু’জনের পরিণতি এক হবে, দু’জনই মরে খতম হয়ে যাবে, একজন কুপথগামিতার শাস্তি পাবে না এবং অন্যজন সৎপথে চলার জন্য কোন পুরস্কার পাবে না, এটাই বা কেমন কওে সম্ভব। জুলুমাত তথা অন্ধকার ও নুর বা আলো কি করে সমান হতে পারে। জুলুমাত ও নূর শব্দদ্বয়ের মধ্যে নূর একবচন এবং জুলুমাত বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। সত্যিকার অর্থে আলোর পথ একটিই হয় আর জুলুমাত তথা অন্ধাকরের পথ হয় অসংখ্য। যিনি আলোকিত পথে চলেন তিনি একিিট সরল সোজা পথেই দেখতে পান এবং সুনির্দিষ্ট গন্তব্যের পথে চলেন। তিনি যে পথের নির্দেশনা পেয়েছেন, যে পথে চলে তিনি সোজা মকসুদে মঞ্জিলে পৌঁছে যাবেন। পথটি সুষ্পষ্ট ও আলোকিত হওয়ার দরুন তিনি অন্যপথে বা ভুল পথে চলার সম্ভবনা নাই। কারণ আলোর পথটি সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট। পক্ষান্তরে অন্ধকারের পথ সুস্পষ্ট ও সুনির্ধারিত না হওয়ায় অন্ধকারে হাতড়িয়ে যে কোন পথে চলতে পারে। এই চলার পথটি তার ইচ্ছামতো না-ও হতে পারে। চলতে চলতে সে যে কোন গহব্বরে নিমজ্জিত হতে পারে। এজন্য অন্ধকারের পথ হয় অসংখ্য ও অনির্ধারিত। আর এ জন্য জুলুমাত শব্দটিকে বহুবচনে ব্যবহার করা হয়েছে। নুর বা আলো হলো চক্ষুস্মান, সে সুষ্পষ্ট দেখতে পায়। পক্ষান্তরে অন্ধকার হরো অন্ধ বা আলোহীন। সুতরাং আলোর পথ অনুসারী সে চক্ষুস্মান এবং অন্ধকারের পথ অনুসারী হলো চক্ষুহীন অন্ধ ব্যক্তির মতো।
শীতল ছায়া ও রোদের তাপ সমান নয় এর মধ্যে এ পরিণতির দিকেই ইংগিত করা হয়েছে যে, একজন আল্লাহর রহমতের ছায়া আশ্রয় লাভকারী এবং অন্যজন জাহান্নামের উত্তাপে ঝলসানো ব্যক্তি। কোন উদ্ভট চিন্তায় মাতোয়ারা ব্যক্তি ছাড়া কেউ বলবে না বা বিশ্বাস করবে না যে, এরা দু’জন একই পরিণাম ভোগ করবে। মু’মিনকে জীবিতের সাথে এবং হঠকারী কাফেরদেরকে মৃতদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ মু’মিন হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার মধ্যে অনুভূতি, উপলব্ধি, বিচেনাবোধ, জ্ঞান, বুঝ ও চেতনা আছে এবং তার বিবেক তাকে ভালো ও মন্দের মধ্যকার পার্থক্য থেকে সবসময় সজাগ করছে। এর বিপরীত যে ব্যক্তি কুফরীর অন্ধতায় পুরোপুরি ডুবে গেছে তার অবস্থা এমন অন্ধের চেয়েও খারাপ যে অন্ধকারে পথ হারিয়েছে। তার অবস্থা এখন এমন মৃতের মতো যার মধ্যে কোন অনুভূতি নেই।
“(এ ব্যক্তির আচরণই সুন্দর না সেই ব্যক্তির আচরণ সুন্দর) যে অনুগত, রাতের বেলা দাঁড়ায় ও সিজদা কওে আখেরাতকে ভয় করে এবং নিজের রবের রহমতের আশা করে? এদের জিজ্ঞোস করো যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি পরস্পর সমান হতে পারে? তেবল এিবক-বুদ্ধিও অধিকারীরাই উপদেশ গ্রহণ করে।(সুরা যুমার:৯) এ আয়াতেও দুই শ্রেনীর মানুষের মধ্যে তুলনা করা হচ্ছে। এ শেনীর মানুষ দু:সময় আসলে আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে গায়রুল্লাহর বন্দেগী করে। আরেক শ্রেনীর আল্লাহর আনুগত্য এবং তাঁর দাসত্বকে তাদেও স্থায়ী নীতি বানিয়ে নিয়েছে। রাতের অন্ধকারে তারা একনিষ্ঠ আল্লাহর ইবাদাত করে। প্রথম দলকে আল্লাহ জ্ঞানহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ক্ষেত্রে তারা বড় বড় গ্রন্থাগার চষে থাকলেও তারা মূর্খ। আর দ্বিতীয় দলের লোকেরা জ্ঞানী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে একেবাওে নিরক্ষর হলেও কিছু এসে যায় না। কারণ প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে প্রকার ব্যাপার হচ্ছে সত্য সম্পর্কে জ্ঞান ও তদানুযায়ী কাজ। এর উপড়েই মানুষের সাফল্য নির্ভরশীল। আল্লাহ তা’আলা বলেন, এই দুই শ্রেনীর মানুষ কি করে সমান হতে পারে। কি করে সম্ভব যে, তারা দুনিয়ায় মিলে মিশে একই নিয়ম পন্থায় চলবে এবং আখিরাতে একই পরিণামের সম্মুখীন হবে।
মানুষ এ পৃথিবীতে জীবন, আয়ু, জ্ঞান বুদ্ধি, শরীর, শক্তি, যোগ্যতা উপায় উপকরণ এবং সুযোগ সুবিধা যত জিনিস লাভ করেছে তার সমষ্টি এমন একটি পূঁিজ যা সে পার্থিব জীবনের কারবাওে খাটায়। কেউ যদি এ পূঁজির সবটাই এ অনুমানের ওপর ভিত্তি করে কাটায় যে, কোন ইলাহ নেই কিংবা অনেক আছে আর সে তাদের বান্দা। তাকে কারো কাছে হিসেব দিতে হবে না, কিংবা হিসেব-নিকেশের সময় অন্য কেউ এসে তাকে রক্ষা করবে, তাহলে তার অর্থ হচ্ছে সে ক্ষতিগ্রস্ত হলো এবং সব কিছু খুইয়ে দেউলিয়া হয়ে বসলো। কোন ব্যক্তির কারবারে খাটানো সমস্ত পূঁজি যদি নষ্ট হয়ে যায় এবং বাজারে তার পাওনাদারদের সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে, নিজের সবকিছু দিয়ে সে দায়মুক্ত হতে পারে না তাহলে এরূপ অবস্থাকেই সাধারণভাবে দেউলিয়াত্ব বলে। দ্বিতীয় ক্ষতি হচ্ছে, এ ভ্রান্ত অনুমানের ভিত্তিতে সে যত কাজই করলো সেসব কাজের ক্ষেত্রে সে নিজেকেসহ দুনিয়ার বহু মানুষ, ভবিষ্যত বংশধর এবং আল্লাহর আরো বহু সৃষ্টির ওপর জীবনভর জুলুম করলো। তাই তার বিরুদ্ধে অসংখ্য দাবী আসলো। কিন্তু তার কাছে কিছুই নেই যে, সে এসব দাবী পূরণ করতে পারে। তাছাড়া আরো একটি ক্ষতি হচ্ছে, সে নিজেই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হলো না, বরং নিজের সন্তান-সন্তুতি, প্রিয়জন ও আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধু বান্ধব ও স্বজাতিকেও তার ভ্রান্ত শিক্ষা দীক্ষা এবং ভ্রান্ত দৃষ্টান্ত দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত করলো। এ তিনাট ক্ষতির সমষ্টিকে আল্লাহ তা’আলা সুষ্পষ্ট ক্ষতি বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“তোমরা তাঁর ছাড়া দাসত্ব করতে থাকো। বলো, প্রকৃত দেউলিয়া তারাই যারা কিয়ামাতের দিন নিজেকে এবং নিজের পরিবার-পরিজনকে ক্ষতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ভাল করে শুনে নাও, এটি হচ্ছে স্পষ্ট দেউলিয়াপনা।“(সুরা যুমার:১৫) এরা হলো. প্রথম শ্রেনীর দলভুক্ত যারা অন্ধ, যারা অন্ধকারে নিমজ্জিত, যারা মৃত তারা জানে না। এদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন,“তাদেরকে মাথার ওপর থেকে এবং নীচে থেকে আগুনের স্তর আচ্ছাদিত করে রাখবে । এ পরিণাম সম্পর্কেই আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ভীতি প্রর্দশন করেন, হে আমার বান্দারা, আমার গযব থেকে নিজেদের রক্ষা করো।”(সুরা যুমার:১৬)
দ্বিতীয় দল যারা জানে, যারা চক্ষুস্মান, যারা আলোকিত জীবনের অধিকারী, যারা জীবিত তারা জানে। তাদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “কিন্তু যে সব লোক তাগুতের দাসত্ব বর্জন করেছে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে তাদের জন্য সু-সংবাদ। (হে নবী) আমার সেসব বান্দাদের সুসংবাদ দিয়ে দাও। যারা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনে এবং ভাল দিকটি অনুসরণ করে। এরাই সেসব মানুষ যাদের আল্লাহ হিদায়াত দান করেছেন এবং এরাই বুদ্ধিমান।”(সুরা যুমার:১৭-১৮) অর্থাৎ তারা যে কোন শুনলেই তা অনুসরণ করে না। তারা প্রত্যেকের কথা শুনে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং যেটি ন্যায় ও সত্য তা গ্রহণ করে। কিংবা তারা কোন কথা শুনে তার ভুল অর্থ করার চেষ্টা করে না বরং তার ভালো অর্থ গ্রহণ করে।
(হে নবী!) “যে ব্যক্তিকে আযাব দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে তাকে কে রক্ষা করতে পারে? যে আগুনের মধ্যে পড়ে আছে তাকে কি তুমি রক্ষা করতে পার? তবে যারা তাদের রবকে ভয় করে চলছে তাদের জন্য রয়েছে বহুতল সুউচ্চ বৃহৎ প্রাসাদ যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে। এটা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি। আল্লাহ কখনো তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।”(সুরা যুমার:১৯-২০)
লেখক: গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন