প্রশ্ন: ইসলামের রুকন কী ঐক্যের বারতা?
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪২ পিএম | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম

উত্তর: ইসলাম চির শান্তির, চির স্বস্তির, চির মুক্তির, চির উন্নতি আর সমৃদ্ধির দ্বীন। তবে এগুলো কোন মুসলিম একা ভোগ করাতে চায় না। সে চায় এই সবগুলো সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। তার হেদায়েত সকল মানুষকে আহবান করে। যারা মুসলিম তারাও একা একা ইসলামের রোকনগুলো সাড়তে পারে না, আদায় নিশ্চিত করতে পারে না। তাকে কোন না কোন মানুষের সাথে নিতে হয়। ইমান থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি কাজের সাথে অন্য জড়িত। কেননা এই দ্বীন তার একার নয়। সকল মানুষের। মানুষের মধ্যে যারা এই দ্বীন গ্রহন করেছে তারা ফারাক হতে পারে না। প্রত্যেকটি রোকনেই তাকে অন্যের সাথে মিলিয়ে দেয়। প্রত্যেকটি রুকন তাকে অন্যের সাথে জুড়ে দেয়। সে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে রুকনগুলো এক্কেবারে ঢিলেঢালা ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।
ইমান: অন্যের সাক্ষ্যর সাথে একজন মুমিনের ইমানও নির্ভর শীল। এক জন মানুষ মুসলিম হতে চায়। সে কালেমা শাহাদাত পাঠ করতে চায়। সে একাকীই তা পড়ে নিতে পারে। সারা জীবন মানুষকে বুঝতে না দিয়ে চুপ থাকতে পারে। না তা কিন্তু হবে না। বিশেষ প্রয়োজনে হয়তো সে ইমান গোপন রাখতে পারে। কিন্তু সুযোগ বুঝে তাকে যে ইমানের ঘোষনা প্রকাশ করতেই হবে। তার জীবন মুসলিম মিল্লাতের সাথে জুড়ে দিতে হবে। একা চলার কোন সুযোগ তার নেই। তাকে কোরআন আহবান করে ওয়ায়তাচিমু বি হাবলিলল্লাহি জামিযাউ ওয়ালা তার্ফারাকু। তোমরা একতাবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে সর্ব শক্তি দিয়ে আকড়ে ধরো। তোমরা পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আরো আল্লাহ বলেন, তোমরা যদি ফারাক হয়ে যাও তবে, তোমাদের শৌর্য বির্য তাদের মন থেকে (কাফের মুশরেক) দুর হয়ে যাবে। অর্থাৎ তারা তোমাদের ভয় কিংবা সমিহ করে চলবে না।
সালাত: ইমানের পর পরই মুসলমানদের যা অবধারিত তা হল সালাত বা নামাজ। একজন লোক যোহরের আগে ইমান এনেছে তাকে অবশ্যই যোহর নামাজ আদায় করতে হবে। নামাজ হল ইমানের ঘোষনার প্রথম বাস্তবায়ন। আর নামাজ হবে জামাতের সাথে। শরয়ী ওজর ছাড়া জামাত থেকে মুসলমানদের বিচ্ছিন্ন থাকার সুযোগ কোথায়? মহান রবের ঘোষনা, তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু করো। এই জামাত মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ভ্রাতৃত্ব বন্ধুত্ব পয়দা করে। জামাতে নামাজের অনেক ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। ফজর ও এশার জামাত ত্যাগকারীকে মুনাফেক বলা হয়েছে। জামাতে নামাজ এক অপরের মধ্য ভ্রাতৃত্ব সম্পীতি সুদৃঢ় করে। আল্লাহর জন্য মসজিদে আসায় একে অপরের মধ্যে শুধু আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্ব তৈরী হয়। একজন অপর জনের প্রতি মায়া মমতার বন্ধনে আবদ্ধ করে। শান্তিতে সংঘাতে একে অপরের সাথে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। যখন ভালবাসা, ঐক্য হয় শুধু আল্লাহর জন্য সেখানে দুনিয়ার কোন কুটিলতা, জটিলতা, পঙ্কিলতা স্পর্শ করতে পারে না। সে ঐক্য হয় শীশা ঢালা প্রাচীরের মত মজবুত।
যাকাত: যাকাত ইসলামের তৃতীয় রুকন। একজন মানুষ বেঁচে থাকতে হলে তাকে খেতে, পরতে হবে। খাদ্য গ্রহন ছাড়া কোন মানুষের টিকে থাকা, ইবাদাত করা, কাজ কর্ম করা কোনটিই সম্ভব নয়। সমাজের কোন মুসলিম যেন অনাহারে না থাকে। ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট না পায়। দারিদ্রতার করুন যন্ত্রনায় একজন মানুষের জীবন প্রবাহ যেন থেমে না যায়। মানুষের মধ্যে যেন একে অপরে দয়া মায়া, সহানুভুতি জাগ্রত থাকে। তাই মহান রব ধনীদের উপর যাকাত ফরজ করে দিয়েছেন। সাথে সাথে এই যাকাতের অর্থ কারা পাবে তাও বলে দিয়েছেন। যাকাত প্রদানে যেমন মহান রবের আদেশ পালন হবে। তেমনি মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, ঐক্যের বন্ধন সুদৃঢ় হবে। এই সুনিপুন ভ্রাতৃত্বে কোন খাদ থাকবে না। এই বন্ধন হবে শীশাঢালা প্রাচীরের ন্যায়। আজ আমাদের সমাজে যাকাত ব্যবস্থা পুরোপুরী নেই বিধায় অনেক অসংগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। দয়া, মায়া, সাহায্য, সহানুভুতির অনুভুতিগুলোও ভোতা হয়ে গেছে।
রোজা: রোজা আল্লাহ ওয়ালা হওয়অর মধ্য মেয়াদী কোর্স। রোজা রাখার উদ্দেশ্য আল্লাহ ওয়ালা হয়ে যাওয়া। ইমান, যাকাত, রোজা অনেক ক্ষেত্রে আমরা বলি ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত। বিশেষত রোজা। কিন্তু একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় সবগুলো রুকনই কোন না কোন ভাবে অন্যের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেয়। একতার আহবান জানায়। রোজা নামাজ দিনের একই সময়ে সকলের উপর ফরজ। এক সাথে জামাতে নামাজ পড়তে হয়। অন্য দিকে একই ভূ খন্ডের মানুষ একই সময়ে রোজা রাখে একই সময়ে ইফতার করে। রোজার শেষে একসাথে জামাতে ঈদের সালাতের মাধ্যমে মাওলার শুকরিয়া আদায় করে। আনন্দ উৎযাপন করে। রোজার ফসল তুলে ঘরে নেয়। এই এক মাস রোজার মাধ্যমে আল্লাহ ওয়ালা হয়ে যায়। আর আল্লাহ ওয়ালা ও আল্লাহ ওয়ালার মধ্যে বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব, একতা ছাড়া অনৈক্য, হাঙ্গামা, রেশারেশি, ঘেষাঘেষি কি আশা করা যায়। কখনোই না।
হজ্জ: হজ্জ সারা বিশ্বের মুসলমানদের একটি মহা সম্মিলন। এখানে জাতি বর্ণ দেশ মহাদেশ নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষ এক সাথে মাওলার দরবারে আলিশানে ধর্ণা দিতে মিলিত হয়। এখানে এক কাপড়ে এক চাদরে অর্থাৎ একই রকম বেশ ধারন করে সকলে লাব্বাইক লাব্বাইক আমি হাজির প্রভু আমি হাজির ধ্বনি দিতে থাকে। এখানে রং, গোত্র, দেশ সবই এক কাতারে থাকে। এই সম্মিলন একতার বিশ্ব বার্তা বহন করে। হজ্জ শেষে একতার আহবান নিয়ে আমরা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ছি না। নিজ দেশে নিজ গৃহে একতার আহবান নিয়ে ফিরে যাচ্ছি না। চিন্তা ভাবনা ধ্যান জ্ঞান শুধু অসংগতি আর অসংগতি। ইসলামের রুকন তথা আমাদের ইবাদাতগুলোকে ধ্যানের গভীরতা নেই, প্রাণের স্পন্দন নেই। ইবাদাতগুলোতে গভীর ভাবনা চিন্তা নেই। শুধু সাওয়াব আর সাওয়াবের হিসাব নিয়ে ব্যস্ত। এমন কি ইবাদাতগুলো হচ্ছে কি না, ইমানে অসংগতি আছে কি না। ইসলামের রুকনগুলো যথাযথ মানছি কি না? এগুলো নিয়ে আমার চিন্তা করার ফুসরত নেই। যেহেতু ইবাদাতে প্রাণ নেই। সেখানে মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য থাকবে কি করে? ফলে কাফের বেইমানরা আমাদেরকে নিয়ে কত যে গুটির চাল চালে তার হিসাব রাখা দায়। আসুন ইসলামের প্রত্যেকটি রুকন যেহেতু আমাদেরকে ঐক্য আর মুসলিম ভ্রাতৃত্বের দিকে আহবান করে। তাই আমরা যদি ইবাদাতকে প্রাণবন্ত করতে পারি, তাহলে আমাদের মধ্যে ঐক্য ভ্রাতৃত্ব এসে যাবে। আমরা হব ইসলামের সোনালী যুগের মত অজেয় অক্ষয়। আমাদেরকে রোখে দেওয়ার সাধ্য আছে কার? কেউ আমাদের অগ্র যাত্রাকে ঠেকাতে পারবে না। সারা পৃথিবীতে ইসলাম কায়েম হবে। আর এর সুফল প্রত্যেকটি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষ এর সুফল ভোগ করবে। রবের সকল সৃষ্টি, রবের সকল পরিবারের সদস্য তার সুফল ভোগ করবে।
উত্তর দিচ্ছেন: মুন্সি আব্দুল কাদির, ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো