রবিউল আউয়ালের তাৎপর্য
০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
মহানবী (সা.) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তাঁর পবিত্র জন্মও হয়েছে অলৌকিক পন্থায়। তাঁর জন্মে গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর স্মরণ সব জাতি, সব যুগে করেছে। কিন্তু কবে এই মহামানব জন্মগ্রহণ করেছেন, তা নিয়ে সব আলোচনা রবিউল আউয়াল মাস ঘিরেই হয়ে থাকে। পবিত্র ১২ রবিউল আউয়াল। ইসলামের ইতিহাসে দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যম-িত।
বিশেষত দুটি কারণে ১২ রবিউল আউয়াল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। প্রথমত, সব ইতিহাসবিদের ঐকমত্য বর্ণনা মতে, এই দিনেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) লক্ষ-কোটি ভক্ত-অনুরক্তকে এতিম বানিয়ে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, প্রসিদ্ধ অভিমত অনুযায়ী এই ১২ রবিউল আউয়ালই মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন।
মহানবী (সা.)-এর জন্মের তারিখ খ্রিস্টীয় পঞ্জিকা অনুযায়ী ৫৭১ খ্রিস্টাব্দে মহানবী (সা.) ভূমিষ্ঠ হন।
তাঁর জন্ম তারিখ ২০ এপ্রিল। আরবি হিজরি সন অনুযায়ী তাঁর জন্ম তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ কেউ বলেন, রবিউল আউয়ালের ৮ তারিখ মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন। বেশির ভাগ হাদিসবিশারদ একে বিশুদ্ধ বলেছেন। মহানবী (সা.)-এর জীবনীকারদের মধ্যে ইবনে ইসহাক প্রথম সারির জীবনীকার। তিনি বলেন, মহানবী (সা.) হাতিবাহিনীর ঘটনার বছর ১২ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেছেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম, খ--১, পৃ. ১৫৮)
আধুনিক যুগে সিরাত বিষয়ে ‘আর রহিকুল মাকতুম’ নামক গ্রন্থটির বেশ আলোচনা আছে। সেই গ্রন্থে এসেছে : সায়্যিদুল মুরসালিন মক্কায় বনি হাশিমের ঘাঁটিতে সোমবার সকালে ৯ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন, যে বছর হাতির ঘটনা ঘটে। সে বছর পারস্য দেশের বাদশাহ আনু শিরোয়ার ক্ষমতা গ্রহণের ৪০ বছর পূর্ণ হয়। (আর রহিকুল মাকতুম, খ--১, পৃ. ৪৫)
তাফসিরে মা’আরেফুল কোরআন প্রণেতা মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.) মহানবী (সা.)-এর জন্ম তারিখ সম্পর্কে আরো কিছু অভিমত উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন : এ বিষয়ে সবাই একমত যে নবী করিম (সা.)-এর জন্ম রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার দিন হয়েছিল। কিন্তু তারিখ নির্ধারণে চারটি বর্ণনা প্রসিদ্ধ আছে—২, ৮, ১০ ও ১২ রবিউল আউয়াল। এর মধ্যে হাফিজ মুগলতাই (রহ.) ২ তারিখের বর্ণনাকে গ্রহণ করে অন্য বর্ণনাগুলোকে দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু প্রসিদ্ধ বর্ণনা হচ্ছে ১২ তারিখের বর্ণনা। ‘তারিখে ইবনে আছির’ গ্রন্থে এ তারিখই গ্রহণ করা হয়েছে। গবেষক মাহমুদ পাশা জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোকে ৯ তারিখ গ্রহণ করেছেন। এটি সবার মতের বিপরীত ও সূত্রবিহীন উক্তি। যেহেতু চাঁদ উদয়ের স্থান বিভিন্ন, তাই গণনার ওপর এতটুকু বিশ্বাস ও নির্ভরতা জন্মায় না যে তার ওপর ভিত্তি করে সবার বিরোধিতা করা যাবে। [মুফতি মুহাম্মদ শফি (করাচি) : সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, ইসলামিয়া কুতুবখানা, ঢাকা, ১৯৯৬, পৃষ্ঠা ১৭]
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম তারিখ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দিন হিসেবে সোমবার সম্পর্কে কোনো মতভেদ নেই। কারণ জীবনচরিতকাররা একমত যে রবিউল আউয়াল মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে সোমবার দিন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম। এই সোমবার ৮ অথবা ৯ কিংবা ১২ এটুকুতেই হিসাবের পার্থক্য রয়েছে মাত্র। (ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ) মহানবী (সা.)-এর জন্মের দিনের বিস্ময়কর ঘটনাবলি সোমবার প্রভাতের সময়। কয়েক মাস হলো, আবরাহার হাতিবাহিনী কাবা শরিফে হামলা করেছে। ২০ বা ২২ এপ্রিল, ৫৭১ খ্রিস্টাব্দ। রাত ৪টা ২০ মিনিট। এ সময় পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। এ সময় জন্মগ্রহণ করেছেন বিশ্বনবী, প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। আবদুর রহমান বিন আউফ (রা.)-এর মা শিফা বিনতে আসওয়াদ (রা.)। তিনি মহানবী (সা.)-এর মা হজরত আমেনা বিনতে ওহ্হাবের সঙ্গে দায়া বা নার্স হিসেবে ছিলেন। তিনি মহানবী (সা.)-এর জন্মের সময়ের বিস্ময়কর কিছু ঘটনা বর্ণনা করেছেন। মহানবী (সা.) যখন এলেন, গোটা কামরা আলোকময় হয়ে গেল। হজরত শিফা দেখলেন, সদ্য ভূমিষ্ঠ এ সন্তান একেবারে সাফ-সুতরো জন্মগ্রহণ করেছে। কোনো ধরনের ময়লা-আবর্জনা, রক্ত-শ্লেষ্মা তাঁর দেহে নেই। অন্য যেকোনো নবজাতক ভূমিষ্ঠ হলে তার শরীরে মায়ের পেট থেকে বিভিন্ন বস্তু লেগে থাকে। কিন্তু মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন সম্পূর্ণ পবিত্র হয়ে। অন্যান্য শিশুর আঁত ও নাভি একসঙ্গে থাকে। পরে সেটা কেটে ফেলা হয়। মহানবী (সা.) ভূমিষ্ঠ হয়েছেন নাভি কর্তিত অবস্থায়। অন্যদের বেলায় দেখা যায়, মুসলিম ছেলেশিশু বড় হলে তাদের মুসলমানি করাতে হয়। কিন্তু মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন মুসলমানি করা অবস্থায়। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মহান আল্লাহ আমার প্রতি যে সম্মান দেখিয়েছেন তার অন্যতম হলো, আমি খতনাবিশিষ্ট অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছি, যাতে আমার লজ্জাস্থান কেউ যেন না দেখে। (মুজামে আওসাত, হাদিস : ৬১৪৮)
হজরত শিফা বিষয়টি দেখে অভিভূত হলেন। তিনি বিয়য়টি হজরত আমেনাকে দেখিয়েছেন। তিনিও অভিভূত হলেন। মা আমেনা মহানবী (সা.)-কে কোলে নিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু মহানবী (সা.) পার্শ্ব পরিবর্তন করেন। তিনি সেজদায় অবনত হলেন। এ দৃশ্য দেখে তাঁরা উভয়ে ভীত হয়ে পড়লেন। এরপর মহানবী (সা.) উভয় হাতে ভর করে সেজদা থেকে ওঠেন। উঠেই তিনি ডান হাতের শাহাদাত বা তর্জনী আঙুল দিয়ে আসমানের দিকে ইশারা করেন। হঠাৎ পুরো ঘর আলোতে ভরে গেল। হজরত আমেনা বলেন, ‘আমি ওই আলোতে ইরান, সিরিয়া ও হীরার রাজপ্রাসাদ দেখতে পেলাম।’ কাজি আয়াজ বলেন, আবদুর রহমান ইবনে আউফের মা শিফা থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর ধাত্রী ছিলেন। তিনি বলেন, যখন তিনি তাঁর হাতে এলেন তখন চিৎকার করলেন। তিনি এক ঘোষককে বলতে শুনেছেন : ‘আল্লাহ তোমার ওপর অনুগ্রহ করুন।’ সে জায়গা থেকে একটি নূর বের হলো, যা দ্বারা রোমের প্রাসাদ দেখা গেল। (তাফসিরে ইবনে কাসির, খ--২, পৃ. ৩২৪)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একসময় শয়তান আসমানে যেতে পারত। গিয়ে ফেরেশতাদের গায়েবি সংবাদ শ্রবণ করত। এরপর তাদের গণকদের কাছে তা পৌঁছে দিত। যখন হজরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন তখন তাদের তিন আসমান থেকে বহিষ্কার করা হয়। আর যখন মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেন তখন তাদের সব আসমান থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর পর থেকে তাদের কেউ যখন কিছু শ্রবণ করার জন্য আসমানে যায় তখন তাদের আগুনের স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ করে বিতাড়িত করা হয়। (তাফসিরে কবির, খ--১৯, পৃ. ১৩০)
যে রাতে মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেন, সেই রাতে পারস্য ও ইরানের রাজপ্রাসাদে কম্পন ধরে। সেখান থেকে ১৪টি গম্বুজ ভেঙে পড়ে। এর মাধ্যমে তাদের ১৪ জন বংশধর ক্ষমতাবান হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়। তাদের ১০ জন পরবর্তী চার বছরে ক্ষমতায় আসে। আর বাকিরা উসমান (রা.) শহীদ হওয়া পর্যন্ত ছিল। মহানবী (সা.)-এর জন্মের দিন পারস্যের আগুন নিভে যায়, যা হাজার বছর ধরে প্রজ্বলিত ছিল। সে দেশের ছোট ছোট নদীর পানি শুকিয়ে যায়। (বায়হাকি, দালাইলুন নবুয়্যাহ, খ--১, পৃ. ১২৬) (চলবে)
লেখক- গবেষক, কলামিস্ট, পাঠান পাড়া, (খান বাড়ী) কদমতলী, সদর, সিলেট-৩১১১।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শহীদ জিয়ার মিঠাছড়া খাল খননে হাজারো কৃষকের ভাগ্য খুলেছিল ' - মীর হেলাল
ঝিনাইগাতীতে আইন শৃঙ্খলা কমিটিসহ ৪ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
গফরগাঁওয়ে ভিজিডির ৫১ বস্তা চুরি
গোলাপগঞ্জে মাদক সেবনের অপরাধে দুই জনকে জরিমানা ও কারাদণ্ড
ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়ন থেকে রাজনৈতিক দলগুলো শিক্ষা নেয়নি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
ঢাকাকে উড়িয়ে আসর শুরু রংপুরের
নিজ জমিতে যাওয়া হলো না সিলেটে এক ব্যবসায়ীর : হামলা করলো যূবদলনামধারী ভূমিখেকো চক্র
প্রতারণার দায়ে অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে সমন জারি
রেকর্ড পুনরুদ্ধার করে শাহিদির ২৪৬, রেকর্ড গড়ল আফগানিস্তানও
‘ইসলাম প্রচার প্রসারে সউদী সরকার ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে’
টেলিটকের দুটি স্পেশাল ডাটা প্যাকেজের উদ্বোধন করলেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করবে সরকার: প্রেস সচিব
এসিআই লিমিটেড ২০ শতাংশ নগদ এবং ১৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে
এবার ছাত্রদল সভাপতির পাশে দাঁড়ালেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
কোয়ালিফাইয়ারের বাধা টপকাতে চায় রংপুর
খুশদিলের শেষের ঝড়ে রংপুরের বড় সংগ্রহ
চোখের চিকিৎসায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ইস্পাহানী চক্ষু হাসপাতালের যৌথ উদ্যোগ
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সব তথ্য প্রকাশ করা হবে: প্রধান উপদেষ্টা
১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ট দেয়ার ঘোষণা বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের
এনআরবিসি ব্যাংকের বামেলকো কনফারেন্স অনুষ্ঠিত