‘তোমাদের জন্য রাসূল (দ:)-এর জীবনেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ’
০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
অন্ধকার যুগ। ধর্মহীন জীবন। কোথাও শান্তি নেই।অশান্তির প্লাবনে হাবুডুবু খাচ্ছে। অনেকে কোন ধর্ম মানছে না।ঐতিহাসিক গণ এই সময়কে ‘অ্যাইয়ামে জাহিলি’ যুগ হিসাবে উল্লেখ্য করেছেন। হত্যাশা গ্রস্থ জাতির মুক্তির প্রয়োজন। মুক্তির জন্য প্রয়োজন একজন আর্দশবান মানুষ।মহান আল্লাহ তাআলা আর্দশ মানুষ হিসাবে হযরত রাসুল (দ)কে নির্বাচন করেন। আর্দশ মানুষটির মাঝে অনেক গুনের সমাবেশ রয়েছে।তমধ্যে সর্বত্তোম গুনটি হলো রাহমাতাল্লিল আলামিন। এরশাদ হচ্ছে,‘তোমাদের জন্য রাসুলের (দ) জীবনেই রয়েছে সর্বোত্তম আর্দশ’।উন্নত জীবনের জন্য প্রয়োজন উত্তম আর্দশের। হযরত রাসুল (দ)পৃথিবীর বুকে সর্বোত্তম আর্দশ মানুষ। মহান আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সবার জন্য আল্লাহর রাসুল (দ) হিসাবে আর্বির্ভুত হয়েছি’। তিনি নিজেই ঘোষনা দিলেন,মুহাম্মদ (দ) একজন রাসুল।তিনি ইহকাল ও পরকালের কান্ডারী।তাছাড়া রাসুল (দ) বলেন,‘আমাকে সচ্চরিত্রের পুর্ণতা সাধনের নিমিত্তেই প্রেরণ করা হয়েছে’। চারিত্রিক বৈশিষ্টে তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ মহা মানব।আর্দশের দিক দিয়ে জাতি,বর্ণ,ধর্ম,গোত্র,সম্প্রদায়,দেশ, কাল সর্বক্ষেত্রে ছিলেন আর্দশের প্রতীক।
আমরা মানুষ,আল্লাহর বান্দা। তার ইবাদত বন্দেগী করি।চাই আল্লাহর ভালোবাসা। তার ভালোবাসা,অনুসরন ও নৈকট লাভের একমাত্র মাধ্যম রাসুল (দ)। বিশ^ নবী (দ)এর আর্দশ অসুরসন ব্যতীত আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করা সম্ভব নয়।ইরশাদ হচ্ছে,‘হে রাসুল আপনি বলে দিন,তোমরা যদি আল্লাহর ভালোবাসা চাও তাহলে আমাকে অসুসরন করো। তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবে’। হযরত রাসুল (দ) এর জীবর্নাদশ অনুসরন করা আমাদের জন্য পালনীয় বটে। আমরা ব্যক্তিগত,পারিবারিক,সামাজিক জীবনে তাঁর আর্দশ মেনে চলি। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘তোমাদের রাসুল যা নিয়ে এসেছে তা আকঁড়ে ধরো,আর যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থেকো’। আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ দু’টোই পালন করা ফরজ।সে হিসাবে আল কোরআনের আদেশ নিষেধ,ইসলামী শরীয়তের বিধি বিধান যথাযথ ভাবে পালন করার চেষ্টা করছি।বিশ^ নবী (দ) শুধু একজন আর্দশ মহা মানবেই নয়,তিনি একজন আর্দশ শিক্ষক। রাসুল (দ) বলেন, ‘আামাকে প্রেরন করা হয়েছে মানবতার শিক্ষ হিসাবে’।তিনি লেখা পড়া জানতেন না।কিন্তু ছিলেন মহা জ্ঞানের অধিকারী। সারা বিশ^ বাসিকে উত্তম শিক্ষা দিয়েছেন।তার উত্তম শিক্ষা নীতির মাধ্যমে পৃথিবী থেকে অশিক্ষা,কুশিক্ষা,জুলুম,অত্যাচার, কুসংস্কার এবং সামাজিক বৈষম্য, ইত্যাদি দুর করা সম্ভব হয়েছে। হযরত রাসুল (দ) ছিলেন, দয়া ও মায়ার জীবন্ত প্রতীক। প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষমতা ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও চরম শত্রুকে ক্ষমা করে দিতেন। মক্কা বিজয়ের দিনে তিনি ঐতিহাসিক ভাষনে বলেছিলেন,‘হে কুরাইমগণ!তোমরা আমার কাছে কেমন ব্যবহারের আশা করো? তারা বলল,সম্মানিত ভাই ও ভ্রতুস্পুত্রের মতো।তিনি বলেন তোমরা চলে যাও।আজ তোমরা মুক্ত’। তিনি প্রতিশোধে বিশ^াসি ছিলেন না। তিনি মানুষের বিপদ আপদ বুঝেন। নিজের অপুর্ব করুনা দ্বারা তা সমাধান করার চেষ্টা করেন। ভুলে জান শত্রু ভেদাভেদ,হিংসা বিদ্বেষ। সারা বিশ^ ছিল অন্ধকার।অন্ধকার যুগকে দ্বীনের আলোয় আলোকিত করে সোনালি যুগে পরিনত করেন। যার কারনে,নবুয়ত লাভের ২৩ বছরে সভ্যতা ও সংস্কৃতির আমুল পরিবর্তন সাধিত করেন। প্রতিষ্টা করেন, ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতি । এমনি ভাবে,বিশ^ নবী(দ) এর পরশ পেয়ে এক দল উত্তম আর্দশ ও চরিত্র বান সৎ মানুষ তৈরী হলেন। যারা ছিল,একমাত্র আল্লাহর খাটি বান্দা ও মোমেন। তারা অশান্ত ও অভিশপ্ত পৃথিবীতে ন্যায়,নিরাপত্তা,শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাসুল (দ) সাহায্য করেন। তার ছোয়ায় চারি দিকে ইসলামের আলো ছড়িয়ে পরে। পরিবর্তন আসে ব্যক্তি,পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্রে জীবনে।এরশাদ হচ্ছে‘মুহাম্মদ হলেন, আল্লাহর রাসুল। আর তার সঙ্গে যারা রয়েছেন তারা কাফেরদের প্রতি অত্যান্ত কঠোর,কিন্ত নিজেরা পরস্পর খুবেই রহমশীল’। তার ছোয়ায় এসে সাহাবীরা পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ মানুষের পরিনত হলেন। আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন। এরশাদ হচ্ছে,‘আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর পাকের ওপর সন্তুষ্ট’।
হযরত রাসুল (দ) সারা বিশ^বাসির কাছে রহমতের প্রতীক।করুনার সাগর। মহান আল্লাহ তার প্রিয় হাবিবকে সর্বোত্তম গুনের অধিকারী করে সৃষ্টি করেছেন।পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে,‘হে নবী! আমি আপনাকে সমগ্র বিশ^বাসির জন্য করুনার প্রতীক হিসাবে প্রেরণ করেছি’। তিনি হলেন,আল্লাহর পক্ষ থেকে করুনার প্রতীক। তার করুনা ও কথার পরশে সবাই মুগ্ধ। যেন পরশ পাথর। আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘হে রাসুল আপনি সর্বোন্নত চারিত্রিক মাধুয্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন’। তিনি নৈতিক চরিত্র ও উত্তম আর্দশের উপর প্রতিষ্ঠিত।তিনি ছিলেন আল আমিন,আস সাদিক। আরব বাসিরা তাকে আস সাদিক উপাধি দিয়ে ভুষিত করেছেন। রাসুল (দ) এর নৈতিক চরিত্র বনর্না দিতে গিয়ে হযরত আয়েশা রা) বলেন,‘আাল-কোরআন ছিল তার চরিত্র’। তিনি মানুষের কাছে শুধু কোরআনের শিক্ষা দিয়ে চুপ ছিলেন না বরং নিজেকে কোরআনের জীবন্ত নমুনা হিসাবে তুলে ধলেছেন। আল কোরআন একটি জীবন্ত মোজেজা। কিয়ামত পর্যন্ত আল কোরআন জীবন্ত মোজেজা হিসাবে থাকবে।সুস্পষ্ট ভাবে প্রমান হয় যে,বিশ^ নেতা রাসুল (দ) সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী একজন মহা মানব। আল্লাহর ভালোবাসা,আনুগত,আদেশ নিষেধ পালন করার জন্য রাসুল (দ) শ্রেষ্ঠ একজন মানুষ। সে হিসাবে আল্লাহ পাক রাসুল (দ)কে নির্বাচন করেন। যা মোমেন বান্দার জন্য নিঃসন্দেহে সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। রাসুল (দ) এর শৈশব-কৈশরের অনেক ঘটঁনা আমরা জানি।তিনি জাতিকে ধব্ংসের হাত থেকে বাচানোর জন্য ‘হিলফুল ফুযুল’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।কাব্বা ঘর নির্মাণের সময় তার প্রচেষ্টায় হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরটি যথাস্থানে রাখা সম্ভব হয়েছে।বিশ^ নবী ছিলেন একজন আর্দশ স্বামী।তিনি বলেছেন,‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। আর আমি আমার সব স্ত্রীর কাছে উত্তম ব্যক্তি’।তিনি আরো বলেন,‘ফাতেমা আমার কলিজার টুকরা,নয়নের মনি। যে ব্যক্তি ফাতেমাকে কষ্ট দিল সে যেন আমাকেই কষ্ট দিল। আর যে ব্যক্তি ফাতেমাকে সন্তুষ্ট করল সে যেন আমাকেই সন্তুষ্ট করল’।আরব সমাজে নানা রকম কৃসংস্কার বিরাজমান ছিল। সে সময় আরব বাসিরা নারী বা কন্যা সন্তানকে অলক্ষন ভাবতো। রাসুল (দ) ঘোষনা কররেন,‘যে ব্যক্তি যথাযথ ভাবে কন্যা সন্তানের অধিকার আদায় করবে,সে জান্নাতে নবীজী (দ) এর কাছা কাছি থাকবে’। বিশ^ নবী (দ) ছিলেন শ্রেষ্ট দানশীল ব্যক্তি।একবার তার কাছে একজন লোক আসল সাহায্য প্রাথী হয়ে। তিনি তাকে দুই পাহাড়ের মাঝে সব বকরি দিয়ে দিলেন। তারপর লোকটি নিজের সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে বলল,‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম গ্রহন করো। কেননা মুহাম্মদ (দ) এত বেশী পরিমাণ দান করেন যে, তিনি নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার কোন ভয় করেন না’।তিনি ছিলেন উদার। কোন ব্যক্তি কোন কিছু চাইলে তিনি কখনো না বলতেন না।এভাবে তিনি অসংখ্য গুন ও আর্দশের অধিকারী ছিলেন। জাহিলি যুগে সারা পৃথিবীতে মানুষের মাঝে বৈষম্যের পাহাড় ছিল। কেউ বংশীয় কারনে,কেউ আবার জন্ম সুত্রে সম্মানের অধিকারী ছিল। বৈষম্য ছিল সাদা কালোর মাঝে। বিশ^ নবী (দ) এসে সেই বৈষম্য দুর করেন। নবী (দ) এরশাদ করেন.‘হে লোক সকল! তোমাদেও প্রতিপালক এক,তোমাদের পিতা এক। শোন! আরবির উপর অনারবির এবং অনারবির উপর আরবীর,কৃঝ্ষ কায়ের উপর শে^তকায়ের এবং শে^তকায়ের উপর কৃষকায়ের কোন শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নেই। শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্য়াদা আছে তো কেবল ‘তাকওয়ার ভিত্তিতেই’।
পরিশেষে বলতে চাই,হযরত রাসুল (দ) এর চরিত্র ও আর্দশ বনর্না করা কোন লেখকের পক্ষেই সম্ভব নয়। তিনি ছিলেন মহান চরিত্রের অধিকারী। সর্বক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সর্বোত্তম আর্দশের অধিকারী।আল কোরআনে তার চরিত্রের কথা বহুবার উল্লেখ্য রয়েছে। একজন মোমেন বান্দা হিসাবে রাসুল (দ) এর জীবর্নাশকে যথাযথ ভাবে ব্যক্তি,পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনে মেনে চলার দরকার।আমরা তাফসিরুল কোরআন,হাদীস শরীফ,বিশ^ নবীর জীবনী অধ্যায়ন করি। জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাসুল (দ) এর আর্দশ পালন করি। এই হোক মোমেন জীবনের প্রত্যাশা।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক আরবী,গ্রন্থকার, পঞ্চগড় নুরুন আলা নুর কামিল মাদ্রাসা, পঞ্চগড়।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঝিনাইগাতীতে আইন শৃঙ্খলা কমিটিসহ ৪ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
গফরগাঁওয়ে ভিজিডির ৫১ বস্তা চুরি
গোলাপগঞ্জে মাদক সেবনের অপরাধে দুই জনকে জরিমানা ও কারাদণ্ড
ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়ন থেকে রাজনৈতিক দলগুলো শিক্ষা নেয়নি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
ঢাকাকে উড়িয়ে আসর শুরু রংপুরের
নিজ জমিতে যাওয়া হলো না সিলেটে এক ব্যবসায়ীর : হামলা করলো যূবদলনামধারী ভূমিখেকো চক্র
প্রতারণার দায়ে অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে সমন জারি
রেকর্ড পুনরুদ্ধার করে শাহিদির ২৪৬, রেকর্ড গড়ল আফগানিস্তানও
‘ইসলাম প্রচার প্রসারে সউদী সরকার ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে’
টেলিটকের দুটি স্পেশাল ডাটা প্যাকেজের উদ্বোধন করলেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করবে সরকার: প্রেস সচিব
এসিআই লিমিটেড ২০ শতাংশ নগদ এবং ১৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে
এবার ছাত্রদল সভাপতির পাশে দাঁড়ালেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
কোয়ালিফাইয়ারের বাধা টপকাতে চায় রংপুর
খুশদিলের শেষের ঝড়ে রংপুরের বড় সংগ্রহ
চোখের চিকিৎসায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ইস্পাহানী চক্ষু হাসপাতালের যৌথ উদ্যোগ
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সব তথ্য প্রকাশ করা হবে: প্রধান উপদেষ্টা
১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ট দেয়ার ঘোষণা বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের
এনআরবিসি ব্যাংকের বামেলকো কনফারেন্স অনুষ্ঠিত
১৭ দিন মৃত সন্তানকে বহন করেছিল, ফের মা হল সেই ওরকা তিমি