ভ্রমণে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা
২৭ জুন ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ১২:০১ এএম
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
এক কিংবা দুজনের ওপর শয়তান প্রভাব বিস্তার করতে পারে, কিন্তু তিনজনের ওপর সম্ভব হয় না। রাসুল (সা.) তিনজনের সফরে একজনকে দলনেতা নির্বাচন করতে বলেছেন। মহানবী (সা.) সফরের সময় সওয়ারি উট বা পশুর ওপর নির্যাতন করতে নিষেধ করেছেন। সফরে রাত্রি যাপনের সময় ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার কথা বলেছেন।
সফরে সঙ্গী-সাথীদের সাহায্য করা : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‹আল্লাহ ঐ বান্দাকে সাহায্য করেন যতক্ষণ সে তার ভাইকে সাহায্য করে।› (মুসলিম শরীফ)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‹প্রতিটি সৎকাজ একটি সদকা।› (বোখারি)। প্রিয়নবী (সা.) আরও বলেন, ‹যে ব্যক্তির সঙ্গে অতিরিক্ত জন্তুযান আছে তার সে যানটি এমন ব্যক্তিকে দিয়ে দেয়া উচিৎ, যার একটিও সওয়ারি নেই। আর যে ব্যক্তির কাছে অতিরিক্ত খাবার আছে, তা এমন ব্যক্তিকে দেয়া, যার কোনো খাবার নেই। এরপর তিনি বিভিন্ন ধরণের সম্পদের কথা বলতে লাগলেন।› এর প্রকৃত নজির আমরা দেখতে পাই। হিজরতের পর আনসার ও মুহাজিরদের পরস্পরের মাঝে যে সৌভ্রাতৃত্বের দৃষ্টান্ত যা মানব ইতিহাসে এক মহান শিক্ষা হয়ে আছে। এমনিভাবে রাসুল (সা.)- এর সফর বা হিজরতে অধ্যায় থেকে আমরা শিক্ষা পেয়ে থাকি তা হলো, নারী শিশু এবং দুর্বলদের কোনো ক্ষতি না করা, এমনকি গাছপালা বা কোনো সৃষ্ট জীবেরও সামান্যতম কষ্ট না দেয়ার শিক্ষা। মহানবী (সা.)- এর জীবনে সফরে আদ্যোপান্ত অর্থাৎ বাড়ি ফেরা পর্যন্ত শিশু, নারী, পুরুষ, সফরসঙ্গী এবং সওয়ারির অধিকারের প্রতি তিনি সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। এছাড়া সফরের মধ্যে চেলাফেরা, ইবাদত-বন্দেগি এবং সতর্ক থাকা ইত্যাদি বিষয়ে বিশাল অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা উম্মতের জন্য তিনি রেখে গেছেন, যা অনুসরণ করলে আমাদের ভ্রমণ কিংবা সফর বা হিজরত নিরাপদ হবে। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
ভ্রমণের আধুনিক কলা-কৌশল ও শিক্ষণীয় বিষয় : বর্তমানে ভ্রমণ পূর্বের তুলনায় অনেক সহজ ও নিরাপদ। কারণ, বিজ্ঞানের যান্ত্রিক আবিষ্কার এবং আধুনিক কলাকৌশল ভ্রমণকে সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু এই সহজ ও সুখকর ব্যবস্থাকেও সহজভাবে আমরা উপভোগ করতে পারছি না, কারণ বর্তমানে পৃথিবী যদিও ছোট হয়ে গেছে। হাজার মাইলের দূরত্ব আজ আর কোনো দূরত্ব নয়। মুহূর্তের মধ্যে মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমনাগমন করতে পারছে। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় এতসব সুবিধা বা সুফল থাকার পরও আমরা সফরকে কেনো নিরাপদ করতে পারছি না? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সফরের অনিরাপদের কারণসমূহ আলোচনা করা হবে ইনশা আল্লাহ। এর পূর্বে আমরা বর্তমানে কি কি কারণ ও প্রয়োজনে সফর করি, এর সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করবো।
সফরের প্রকারভেদ : সফর বা ভ্রমণ বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। যেমন, স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী সফর। দেশের অভ্যন্তরে অথবা বিদেশে সফর, নিয়মিত বা অনিয়মিত সফর, আন্তর্জাতিক সফর, শিক্ষা সফর, ধর্ম প্রচারের জন্য সফর, রাষ্ট্রীয় কাজের জন্য সফর এবং অবকাশের জন্য সফর ইত্যাদি। যেমন, আনন্দ উপভোগের জন্য, বিভিন্ন স্থান ও দেশ দেখার জন্য সফর, আয়-রোজগারের জন্য, বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি বা উদ্বাস্ত, শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী বা বলপূর্বক সফর ইত্যাদি।
বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে নিরাপদ সফর : বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ লোক এখন দেশের বাইরে অর্থাৎ বিদেশে গমনাগমন করছে। তন্মধ্যে অর্ধকোটিরও বেশী লোক বিভিন্ন পেশায় অর্থ উপার্জনের কাজে বিদেশে কর্মরত রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় ২.৫০ লক্ষ মানুষ অন্যান্য দেশের শ্রম বাজারে প্রবেশ করে থাকে। বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা বছরে দেশের মোট আয়ের প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ আয় রেমিটেন্স হিসেবে দেশে পাঠায়। এটা আমাদের জাতীয় আয়ের ক্ষেত্রে বিরাট উল্লেখযোগ্য অংশ। কিন্তু বাংলাদেশে জাতীয় আয়ের ক্ষেত্রে এত ব্যাপক ভূমিকা রাখলেও বিভিন্ন সমস্যা এবং অযোগ্যতার কারণে মানুষ বিদেশ গমনাগমনে প্রতিনিয়ত বাধা ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে। যেমন, পাসপোর্ট জালিয়াতি, গলাকাটা পাসপোর্ট, জাল ভিসা, দালালদের প্রতারণা, কয়েকগুণ বেশী অর্থ নেয়াসহ সীমাহীন দুর্ভোগে ফেলা ইত্যাদি দুর্নীতি শিকার হচ্ছে প্রতিক্ষণ।
এছাড়া যারা শ্রম দিয়ে বিদেশে অর্থ উপার্জনের জন্য যায়, তাতে অনেকের ঘর-বাড়িও বিক্রি করতে হয়। মাথাভারী ঋণের বোঝা রেখে বিদেশে যায়। তারা হাড়ভাঙ্গা শ্রম দেয়ার পরও খুব সামান্য অর্থই রোজগার করতে পারে। কারণ আমাদের শ্রমজীবী প্রবাসীদের অনেকেরই কারিগরির যেমন জ্ঞান নেই, তেমনি তাদেরকে কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিদেশে যেতে হচ্ছে। ফলে লেবারি বা হোটলের মশালচীর কাজ ছাড়া তাদের অনেকেই ভালো কাজ পায় না। এতে তাদের ও পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন তো দূরের কথা, ঋণ পরিশোধ করতে পারে না। আবার যারা প্রতারকের হাতে পড়ে, সর্বস্ব খুইয়ে চোরা পথে হয়তো বিদেশে যেতে পারে। কিন্তু পরক্ষণে হয়তো তারা জেল-হাজতে যেতে বাধ্য হয়, বা দেশে ফেরত আসে। এভাবে কত পরিবার যে ধ্বংস হয়ে যায়, তার খবর রাখে কে? এসব অবস্থার জন্য বিদেশ গমনকারী যেমন দায়ী, তেমনি প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না থাকায় তারা সহজ-সরল মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে ধোঁকায় ফেলতেও সাহস পায়। আমাদের প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‹যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।› প্রতারকদের আল্লাহর রাসুল উম্মত বলে স্বীকার করেননি। আর এই প্রতারকরাই জাল ভিসা ও পাসপোর্টের দালালি করে বড় লোক সাজে। এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া ও আইনের প্রয়োগ যেমন সময়ের দাবী, তেমনি এটা আমাদের ইমানেরও দাবী।
প্রতারণা থেকে মুক্তির উপায় : সংক্ষেপে এর উত্তর হলো, বাংলাদেশ সরকার বিদেশে যাওয়া ও গমনাগমনের জন্য পাসপোর্ট করার, অর্থ প্রেরণের যত সহজ উপায় তৈরি করে রেখেছেন, সেটা অবশ্যই প্রশংসা যোগ্য। অজ্ঞতার কারণেই মানুষ দালালের খপ্পরে পড়ছে ও প্রতারিত হচ্ছে। পাসপোর্ট করার সময় সব তথ্য নির্ভুল ও ঠিকভাবে দেয়া হয়েছে কিনা, সেটা যাচাই করে দেখাও নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এরপর ভিসায় চুক্তি স্বক্ষরের পূর্বে চাকুরীটা কি, শর্তাবলি কি, বেতন কত ইত্যাদি দেখে নেয়া উচিৎ। সবশেষে বিদেশে গমনের পূর্বে রেজিষ্ট্রেশন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট এবং সকল সঠিক কাগজ-পত্র বুঝে নেয়ার পর সফর করা।
হালাল রোজগারের জন্য জমীনে ছড়িয়ে পড়তে মহান রাব্বুল আলামিন নির্দেশ দিয়েছেন। সফর করার মাধ্যমে হালাল উপার্জন, জ্ঞান অর্জনসহ সর্বপ্রকার কল্যাণের কথা কুরআন ও হাদিসে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত পন্থায় আমরা দেশ-বিদেশে নিরাপদ সফর করে যেনো কল্যাণ অর্জন করতে পারি, মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সেই তাওফিক দিন। আমিন! (সমাপ্ত)
লেখক: প্রিন্সিপাল, শ্যামপুর কদমতলী রাজউক মাদরাসা ঢাকা-১২০৪
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এসেই অধিনায়ককে ফেরালেন মুস্তাফিজ
নতুন চাকরিতে ক্লপ
ফ্যাসিবাদী হাসিনার শ্রেণি বিন্যাস আইন বরদাশত করা হবে না মানববন্ধনে বায়রা নেতৃবৃন্দ
৩ ওভারে ২ উইকেট নেই ভারতের
কলকাতা মেডিকেল চিকিৎসকদের গণপদত্যাগ
রাজশাহীর বাঘায় বজ্রপাতে গাছ কাটা শ্রমিকের মৃত্যু
রামগড়ে শারদীয় দূর্গা পূজা মন্ডপ পরিদর্শনে বিজিবি - উপজেলা প্রশাসন
মিল্টনের কবলে আর্জেন্টিনা দল
স্পেনকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান ড. ইউনূসের
কোকোকে আওয়ামী লীগ তিলে তিলে নির্যাতন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শামীম
উচ্চতম ১৪টি শৃঙ্গ জয়ের রেকর্ড ১৮ বছর বয়সী নেপালী তরুণের
৬ সপ্তাহ মাঠের বাইরে আলিসন
গফরগাঁওয়ে পুজা মন্ডপের জন্য ৯মেঃ টন জি আর বরাদ্দ : পর্যাপ্ত কঠোর নিরাপত্তা
ইরানের হাইপারসনিক মিসাইল মাত্র ৪ মিনিটে ইসরায়েলে আঘাত হানতে সক্ষম
পুলিশের গুলিতে সিলেটে নিহত সাংবাদিক তুরাব হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে পিবিআই
কুষ্টিয়ায় আন্দোলনে নিহত ২ জনের মরদেহ উত্তোলনে পরিবারের বাধা
দেশে ৩ কোটিরও বেশি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন
দৌলতপুরে বজ্রপাতে গৃহবধূ সহ ৪ জনের মৃত্যু : আহত-৫
হিজবুল্লাহর রকেট হামলায় উত্তর ইসরাইলে ২ জন নিহত
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ