মাগুরার গ্রামে ফুলশোলা তৈরির ব্যস্ততা
০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

মাগুরার শ্রীপুর উপজলোর বরালিদহ, শালিখা উপজেলার শতপাড়া, সান্দরা, সদর উপজেলার দরিমাগুরা, বাটাজোড়সহ ১০টি গ্রামে ফুলশোলার বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন সামগ্রী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অন্তত ৬০টি পরিবার। এর মধ্যে শালিখার শতপাড়ার শঙ্কর মালাকার ফুলশোলা শিল্পে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন। ভূষিত হয়েছেন বিসিকসহ বেশকিছু সম্মাননা পদকে। এ শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত কারুশিল্পীরা এটিকে পেশা হিসাবে আঁকড়ে ধরে অতিবাহিত করেছেন কমপক্ষে ৪ পুরুষ। বর্তমানে তারা বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। তাদের প্রতিটি পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা। প্রতিমাসে পরিবারপ্রতি আয় হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। সারা বছরই তাদের এ শিল্প নিয়ে চলে ব্যস্ততা।
শালিখার শতপাড়া গ্রামে গেলেই দেখা যায়, সেখানে শংকর মালাকারসহ ৬টি পরিবারের পুরুষ, নারী ও ছেলে মেয়েরা নিজেদের পুরোপুরি সম্পৃক্ত করেছেন শোলা শিল্পের সাথে। শংকর মালাকারসহ আরো অনেকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, তাদের পূর্বপুরুষদের কাছেই শিখেছেন শোলাশিল্পের এসব কারুকাজ। তার পূর্বপুরুষ ফুল-শোলাকেই জীবিকার উপকরণ হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। এমনকি তার আগের ৩ পুরুষের পেশা ছিল এই শিল্প। শংকর মালাকারের কাছ থেকে এ কাজ শিখেছেন তার স্ত্রী নিশা রাণী মালাকার, চাচাতো ভাই অমল মালাকার ও তার স্ত্রী ঝর্ণা রাণী মালাকার, পুত্র নিখিল মালকার ও তার স্ত্রী মিতালী রাণী মালাকার, নিমাই মালাকার ও তার স্ত্রী কল্পনা রাণী মালাকার, পুত্র রামপ্রসাদ মালাকার ও স্ত্রী দিপালী রাণী মালাকার, জামাতা রতন মালকার ও তার পরিবারের অপর দুইজন নারীসদস্য। বংশানুক্রমে এ কাজ শিখে পড়াশোনার পাশাপাশি মা-বাবাকে সাহায্য করছে রতœা মালাকার ও লক্ষী মালাকারসহ আরো অনেক স্কুল ও কলেজ পড়–য়া ছাত্রীরা।
শোলা শিল্পীরা জানান, বৈশাখ মাসের শেষের দিকের বর্ষণে ফুল শোলার বীজ বপন করা হয় অথবা এমনিতেই চারা গজাতে থাকে ডোবা জমি কিংবা ধানি জমিতে। মাগুরা জেলাধীন শ্রীপুর উপজেলার বেনিপুরের মাঠ, শালিখা উপজেলার আড়পাড়ার কালার বিল, শালিখার বগনাল বিল ও হিজলিবিল এবং সদর উপজেলার পলিতা গ্রামের কাতলামারি বিল ও কা-বাশের বিলে প্রচুর পরিমাণে ফুলশোলা জন্মায়। কোনো কোনো চাষি তাদের ধানের ক্ষেতে ফুল শোলার চাষ করে থাকেন। প্রতি বোঝা শোলা দু’শ’ থেকে পাঁচশ’ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি বোঝায় ২০০ থেকে ২৫০ পিস শোলা থাকে। ভাদ্র্র-কার্তিক মাস পর্যন্ত ফুল শোলার মৌসুম।
বিল থেকে শোলাগুলো উঠিয়ে এনে প্রথমে শুকানো হয়। তারপর মালাকার সম্প্রদায়ে প্রচলিত যন্ত্র কাইত (ছুরি) দ্বারা শুকানো শোলাগুলো ছেদন করতে হয়। ছেদনকৃত শোলার টুকরোগুলো কাইত (ছুরি) দ্বারা উপরস্থ বাকল পরিষ্কার করা হয়। কাইতই ফুলশোলা কর্তনের প্রধান অস্ত্র। কাজের ধরন অনুযায়ী বড়-মাঝারি-ছোট ৩ আকৃতির কাইত রয়েছে। কাইত দ্বারা ফুল শোলাকে আড়াআড়ি করে কাগজের মতো করে ছেদন করতে হয় যাকে মালাকার সম্প্রদায় কাপ বলে থাকে। এই কাপ থেকে বিভিন্ন ডিজাইনের উপকরণ তৈরি করা হয়। কদমফুল তৈরির ক্ষেত্রে ফুলশোলার ছেদনকৃত টুকরাগুলোকে কদমফুলের শলাকার মতো করো চেরা হয়। কাপে বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করতে তুলোর সুতা পাটের সুতা ব্যবহার করা হয়। এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী রঙ করা হয়। শোলার কারুকাজের উপকরণ তৈরি করতে অন্যান্য যন্ত্র বা বিষায়াদির মধ্যে রয়েছে কাঁইচি, বালিধারা, পিঁড়ি, রঙ, ময়দা, তুঁতে প্রভৃতি। ফুলশোলায় তৈরি উপাদানের মধ্যে রয়েছে বিয়ের ফুল, পূজার ফুল, বিয়ের টোপর, হাতপাখা, বেলিফুলের কুঁড়ি, বেলিমালা, কদমফুল, গোলাপফুল, গোলাপের তোড়া, হ্যাট, মুখোশ, বানর, কবুতর, কাকাতুয়া ও বিভিন্ন রকম খেলনা।
ফুল শোলার তৈরি উপকরণ মাগুরার বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত পূজায় চাহিদামাফিক ফুল সরবরাহ করেন শংকর মালাকারের পরিবার। এছাড়াও তিনি ঢাকার নিউমার্কেট, শ্যাওড়াপাড়া, জুরাইনে এসব উপকরণ সরবরাহ করেন। অংশ নেন বাংলা একাডেমির বৈশাখী মেলা, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ফাউন্ডেশেনের মাসব্যাপী মেলা, বিসিক মেলাসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মেলায়। এসব মেলায় অংশ নিয়ে শংকর মালাকার ২০১৪ সালে বাংলা একাডেমীর বিসিক মেলায় পেয়েছেন কারুগৌরবের পদক।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

দুদকের মামলা : আমানউল্লাহ আমান ও তার স্ত্রীর দন্ডাদেশ বাতিল

অন্তর্বর্তী সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে অর্থনীতি আরো সঙ্কটে পড়েছে : রিজভী

বাংলাদেশ-মিয়ানমার একমত হলে করিডোর চালু করতে পারে জাতিসংঘ

কলকাতায় হোটেলে আগুন নিহত ১৪

ইউক্রেন খুব শিগগিরই ‘ধ্বংস’ হবে: ট্রাম্প

টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়কে অবরোধ

প্রশ্ন : ঈদের বাজারে জীনদের বাজার করা প্রসঙ্গে।

ভ্যান চালক হত্যাচেষ্টা: অভিনেতা সিদ্দিকের ৭ দিনের রিমান্ডে

রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা ছাড়া রাখাইনে মানবিক করিডোর দেয়া থেকে বিরত থাকুন

প্রোটন বাজারে আনল দেশীয় অ্যাসেম্বল এক্স৭০ এসইউভি গাড়ি

হজযাত্রীদের জন্য বাংলাদেশি টাকায় রবির রোমিং প্যাকেজ

উত্তরপ্রদেশে মুসলিম ছাত্রের উপর অমানবিক অত্যাচার

দেশের স্থিতিশীলতার জন্য দ্রুত নির্বাচন চায় বিএনপি: কাজী শিপন

ফেনীতে প্রধান উপদেষ্টার আবাসন পেল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ পরিবার

বিএনপির তৃণমূলের কর্মীদের কাছে পরীক্ষা দেওয়া ছাড়া কেউ নেতা হওয়ার সুযোগ নাই: আবুল কালাম

বিরামপুর হাসপাতালে দুদকের অভিযান, পেয়েছে নানা অনিয়ম

মাছ রক্ত,স্মৃতি ও দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়

এই গরমে ত্বকের রোগ

ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে চাই সচেতনতা

পান সুপারি ক্ষতিকর