তামিমের উপলব্ধি : ‘জীবন আসলে কতটা ছোট’
২৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৩০ এএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৩০ এএম

আগের দিন বিকেএসপিতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শাইনপুকুরের বিপক্ষে মোহামেডানের ম্যাচের আগে হার্ট অ্যাটাক হয় তামিম ইকবালের। নানান অস্থিরতা পেরিয়ে সাভারের কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে হার্টে স্টেন্ট লাগানো হয় তার। অচেতন হয়ে পড়া তামিমকে বাঁচাতে ম্যাচ রেফারি, সতীর্থ, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ট্রেনার এবং এরপর চিকিৎসকদের প্রচেষ্টা ছিল প্রবল। তারা সফলও হয়েছেন। চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়া তামিমের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সেদিনই জরুরি ভিত্তিতে হার্টে স্টেন্ট বসানোর পর তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিলো। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, আগামী কয়েক ঘণ্টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
একদিন পেরিয়ে যাওয়ার পর এবার তারা জানালেন, ‘ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড’ পেরিয়ে তামিম এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন। তবে তাকে আগামী কিছুদিন সতর্ক থাকতে হবে। গতকাল দুপুরে সাভারের কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালের মিডিয়া পরিচালক ড. রাজীব হাসান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘একটা ক্রিটিক্যাল পিরিয়ডে তিনি ছিলেন। পুরোপুরি না হলেও এই ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড পেরিয়ে এসেছি আমরা। উনি (তামিম) সুস্থ আছেন, খাওয়া দাওয়া করছেন। সবার সঙ্গে কথা বলছেন। আমরা খুব সুন্দরভাবে উনাকে ছেড়ে দিতে পারব। কখন ছেড়ে দেব এটা উনাদের পারিবারিক সিদ্ধান্ত।’
সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণের ৪৮ ঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই হাসপাতাল বদলানো হচ্ছে তামিমের। কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে তাঁকে। গতকাল ইফতারের পরই অ্যাম্বুলেন্সে করে কেপিজে হাসপাতাল ছেড়েছেন দেশের সর্বকালের সেরা এই ওপেনার। তামিমের হাসপাতাল বদলের খবরটি নিশ্চিত করেছেন কেপিজে হাসপাতালের কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটের ইনচার্জ রাসেল হোসেন। তিনি বলেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পরবর্তী চিকিৎসা প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হবে, ‘পারিবারিক সিদ্ধান্তেই তাঁকে এভারকেয়ারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওখানেও তিনি পর্যবেক্ষণেই থাকবেন।’
এই ২৪ ঘন্টায় তামিমের জন্য দেশের মানুষও ছিল উদ্বিগ্ন। তামিম জ্ঞান ফিরে পেয়ে টের পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসার আঁচ। গতকাল নিজের ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কঠিন সময়ে তার পাশে দাঁড়ানোয় সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানিয়েছেন তামিম। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসার সংগ্রাম পেরিয়ে সাবেক এই অধিনায়কের উপলব্ধি, ‘জীবন আসলে কতটা ছোট!’ দুই বছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে সহযোগীতার স্মৃতিও মনে করিয়ে দিয়ে তামিম লিখেছেন-
‘দুই বছর আগে এই রোজার সময়েই অনুপের কাছে গিয়েছিলাম। সেদিন জানতে পারলাম, অনুপের বাবা ৪ বছরেও হার্টের অপারেশন করতে পারেননি। হৃদয়ের স্পন্দনই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু এই স্পন্দন যে কোনো ঘোষণা না দিয়েই থেমে যেতে পারে- এই কথাটি আমরা বারবার ভুলে যাই। গতকাল (গতপরশু) দিনটি শুরু করার সময় কি আমি জানতাম, আমার সাথে কী হতে যাচ্ছে?
আল্লাহ তা’আলার অশেষ রহমত আর সকলের দোয়ায় আমি ফিরে এসেছি। আমার সৌভাগ্য, এই বিপদের সময়ে আমি পাশে কিছু অসাধারণ মানুষকে পেয়েছিলাম, যাদের বিচক্ষণতা ও আপ্রাণ প্রচেষ্টায় আমি এই সংকট কাটিয়ে ফিরে এসেছি। কিছু ঘটনা আমাদের বাস্তবতা মনে করিয়ে দেয়, জানিয়ে দেয় যে জীবন আসলে কতটা ছোট! আর এই ছোট জীবনে আর কিছু করতে না পারি, সবাই যেন একে অপরের বিপদে পাশে দাঁড়ায়- এটিই আমার অনুরোধ।
আপনাদের সবাইকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। সবাই আমার জন্য এবং আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের ভালোবাসা ছাড়া আমি তামিম ইকবাল কিছুই না।’
মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এখন কিছুটা থিতু তামিম। তবে এখনও পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নন। ভবিষ্যতে ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাওয়া বা তার মাঠে ফেরার আলোচনার সময়ও এখন নয়। তারপরও তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা আলোচনার ভীড়ে প্রসঙ্গক্রমে জানা গেল, স্বাভাবিক কার্যক্রম ও খেলাধুলায় ফিরতে তাকে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত তিন মাস। কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালের কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) তামিম ও তার পরিবারের সঙ্গে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে সবশেষ খবর জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর।
বেলা ১১টার পর আবু জাফর ও হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ হাসপাতালে আসেন। প্রায় আধঘণ্টা সিসিইউয়ে অবস্থান করেন তারা। তামিম ও তার মা, স্ত্রী এবং বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন তারা। ২৪ ঘণ্টার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পর তামিমের শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। হার্টে স্টেন্ট বসানোর প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধানে থাকা চিকিৎসক মনিরুজ্জামান মারুফ জানান, অল্প অল্প হাঁটাচলা করেছেন তামিম। পরে সংবাদ সম্মেলনে তামিমের সার্বিক অবস্থা জানানোর এক পর্যায়ে আবু জাফর বলেন, তিন মাস পর খেলাধুলায় ফেরার অনুমতি পেতে পারেন তামিম, ‘রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকের কিছু বিষয় থাকে। সেগুলো সবার কাছে বলা সমীচীন নয়। এছাড়া সাধারণভাবে যেসব পরামর্শ দিয়েছি, সেগুলো জানিয়েছি। আজকে সময় যাচ্ছে... ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত হলো ঝুঁকিপূর্ণ। স্বাভাবিক কার্যক্রম অর্থাৎ খেলাধুলায় ফিরতে তাকে অন্তত ৩ মাস সময় দিতে হবে। এছাড়া উনি বাসায় স্বাভাবিক কাজকর্ম, হাঁটাচলা করবেন। তবে বিশ্রামেই থাকতে হবে।’
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

বন্দরে দুইপক্ষের সংঘর্ষে বাড়িঘর ভাঙচুর : আহত ১০

শান্তিপূর্ণভাবে গ্রিনল্যান্ড দখল করবে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে রক্ষা পেলেন ছাত্রী

বেড়ায় ছয় বছরের শিশু ধর্ষিত ধর্ষক গ্রেফতার

জাগ্রত ভয় মনের মাঝে

আর কেউ বেঁচে নেই

সময়

মার্চের পদাবলি

অপসৃয়মাণ রেলগাড়ি

সুখ ও সৌন্দর্যে একটি পাথর

নিশিতে পাওয়া সায়লা

নাডিন গর্ডিমার : এক অসামান্য যোদ্ধার নাম

এখন আরেকদল শেখ হাসিনার মতো ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে: আমীর খসরু

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদিতে ঈদ রোববার

ইতিহাসের চমকপ্রদ কয়েকটি ‘গল্প’

মফস্বলের সাংবাদিকরাই সমাজ পরিবর্তনের অগ্রসৈনিক: গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী

ঈদুল ফিতরের পুরস্কার

ঢালিউডে আসছে 'তান্ডব' সিনেকম্প

কুরআনী বিচার ব্যবস্থা

প্রাণশক্তির ঈদ