অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা না এলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বা নির্বাচনের দিকে এগোনো ব্যাহত হবে
২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৫ পিএম | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৫ পিএম
‘রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা ছাড়া দ্রব্যমূল্য কমবে না’- ড. আব্দুল মজিদ
জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, অর্থনীতিতে যদি স্থিতিশীলতা বা স্বস্তি না আসে তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বা নির্বাচনী ব্যবস্থার দিকে এগোনোর যে গতি ব্যাহত হবে।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর ইস্কাটনের বিআইআইএসএস মিলনায়নতনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেটিক রিকনষ্ট্রাকশন’ শীর্ষক সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে রাজস্ব আদায়ের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত না হলে পণ্যের উচ্চমূল্যের প্রভাব কমবে না বলে মন্তব্য করেছেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশে শিল্প ও কলকারখানা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট নেই। এনার্জি সংকট রয়েছে। ব্যাংক ও জ্বালানি ক্ষেত্রে প্রয়োজন সুশাসন।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সংস্কার বা স্থিতাবস্থা না থাকলে, সেখানে যদি স্বস্তি না আসে- তবে প্রাতিষ্ঠানিক সংষ্কার, বা নির্বাচনী ব্যবস্থার দিকে এগোনোর যে গতি এই দুটিই কোন না কোনভাবে প্রভাবিত হবে। কেউ যদি মনে করে, শুধু প্রাতিষ্ঠানিক ও নির্বাচনী সংষ্কারের পথে এগোব, কিন্তু অর্থনৈতিক বিষয়গুলো তার মতই (বর্তমান ভঙ্গুর দশায়) চলবে তাহলে আমরা বিভ্রান্ত হচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শেষ বিচারে নির্ধারণ করে দিবে কী গতিতে এবং কী পরিধি নিয়ে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক সংষ্কার করতে পারব, এবং কত দ্রুত বা কত দেরীতে নির্বাচনী ব্যবস্থার দিকে পৌঁছাতে পারব।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, যারা দয়িত্বে আছেন (সরকারে), তাদের এখন বুঝতে হবে কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের নজর দেয়াটা জরুরী। প্রকৃত মজুরি রক্ষা করতে হবে, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য দিতে হবে, সামাজিক সুরক্ষাগুলো রক্ষা করতে হবে। ছাত্রদের আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিতে হবে, স্বাস্থ্যসেবাগুলো যাতে ঠিকমত চলে সেটা দেখতে হবে। আইনশৃঙ্খলার মাধ্যমে সকলকে সুরক্ষা দিতে হবে। একইভাবে দেশের ভিতরে নিশ্চয়তা, স্বস্তির মনোভাব তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থনীতির ক্ষেত্রে যারা দায়িত্ববান আছেন তাদের নীতিমালাকে স্পষ্ট করতে হবে, তাদের কর্মসূচিকে স্পষ্ট করতে হবে। সেটা সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন বা আগামী বাজেট প্রণয়নের মধ্য দিয়েও হতে পারে। শুধু স্পষ্ট করলেই হবে না। সমন্বয়হীনতা দূর করে দ্রুততার সাথে, দক্ষতার সাথে এবং জবাবদিহির মাধ্যমে এটাকে বাস্তবায়ন করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, এখন প্রায়শই শোনা যাচ্ছে এর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে, একে বাজার থেকে তুলে দিতে হবে, একে বিভিন্ন ধরনের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যদি ব্যক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ দেয়া হয় রাজনৈতিক চিন্তা করে- তার একটি অর্থনৈতিক তাৎপর্য আছে। একটি ব্যক্তির রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুন্ন করা হলে-তার অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকারও ক্ষুন্ন হয়। তাই এটা বিবেচনা করতে হবে। ব্যক্তি গোষ্ঠী বা দল তাদের ওপর যখন আমরা রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের কথা বলি-এটার অর্থনৈতিক তাৎপর্য আছে। তার আগামী দিনের সঞ্চয়, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার ওপরও আমরা এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছি। ‘এটা একটা নতুন পরিস্থিতি, নতুন সুযোগ। এখানে অনেক সংষ্কারের দরকার। তার মানে এই না অন্তর্বতীকালীন সরকার একাই সব করে দিয়ে যাবে, তাহলে আমরা ভ্রান্ত জগতে বসবাস করি। তাহলে বিল্পব করাটাই ভুল হয়েছে। এখানে সবাইকেই যার যার দায়িত্ব পালন করতে হবে’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
একই সঙ্গে এটা স্বাভাবিক কোনো সরকার নয়। মাত্র তিন মাস আগে এই সরকার এসেছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের একটা ছেদ হয়েছে। যার কারণে নতুন করে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। আলোচনা হওয়া নীতিগুলোইতো দেড় দশক ধরে আলোচনা করে আসছি। সেগুলো দেড় দশকে কেন বাস্তবায়ন হলো না? তাদের কাছে প্রশ্ন, কেন আপনারা বাস্তবায়ন করতে পারলেন না? রাজনীতিবিদরা এখন ব্যবসায়ী আর আমলারা এখন রাজনীতিবিদ হয়ে গেছে।
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বিশেষ করে উচ্চবর্গের মানুষের ক্ষেত্রে যে ব্যর্থতা আমরা দেখেছি-এটাকে যাতে আমাদের সামনের দিনগুলোতে আর দেখতে না হয়, আমরা যাতে ঠিকমত সংশোধন করতে পারি, সেজন্য কোনভাবেই জবাবদিহিতার জায়গায় শিথিলতার সুযোগ নেই। প্রতি মুহুর্তে প্রত্যেকের কাছে জবাবদিহি না চাইলে, আমাদের কাজটা হবে না। এখন আমাদের প্রত্যেকের জায়গা থেকে নিষ্ঠুর ভালোবাসা দেখানোর সময়, যেমনটা মা তার সন্তানের জন্য করে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, এই সরকার সব সংস্কার করে দিতে পারবে-এইটা মনে করার কোন কারণ নাই। সময় এসেছে যে নির্বাচনী ইশতেহারে তারা (রাজনৈতিক দলগুলো) এই সংষ্কারগুলো কীভাবে দেখেন-সেটিও তুলে ধরতে দাবি করার সময় এসেছে। অর্থাৎ, নির্বাচনী ইশতেহারে সংষ্কারগুলো কেমন করে আসবে- তা তুলে ধরতে হবে।
তিনি বলেন, বিগত বছরে জাতীয় আয়, মঝল্যস্ফীতি, খানা জরিপ, রপ্তানি আয়ের ভুল তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। বিচারবিভাগকে প্রভাবিত করেছে স্বার্থগোষ্ঠীর মাধ্যমে। চুরির ঘটনাও নেয়া যেত না এলাকার নেতার পারমিশন ছাড়া। ডিএনএ টেস্ট ছাড়া ট্রেড লাইসেন্স পেত না। উন্নয়নের কথা বলে টাকা ছাপিয়ে দিল। এরকম একটা ব্যবস্থার পর নতুন একটা সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। রাতারাতি পরিবর্তনতো আসবে না। ওনার (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কোনো নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল না, জবাবদিহিতা ছিল না।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সভাপতি বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিয়েছে। এখনো সুফল না এলেও হয়ত সামনে আসবে। আলোচনায় আরও অংশ নেন সিজিএস- এর চেয়ার মুনিরা খান, সিজিএস- এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান প্রমুখ।##
বিভাগ : অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দুর্নীতিবাজ অর্থ আত্মসাতকারীর বিরুদ্ধে বিজয়নগরে সংবাদ সম্মেলন
পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী র্যাবের হাতে গ্রেফতার
দিনাজপুরে ফ্যাসিষ্ট সরকারের ডিলারদের নামেই মাল বিক্রি করছে বর্তমান সুবিধাভোগীরা
তাবিথ আউয়াল বাফুফের নতুন সভাপতি
নির্মাতা রেদওয়ান রনির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে সাদিয়া আয়মান
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে
সিলটি আওয়াজ ও ক্যাম্পেইন কমিটির ইউকে’র সংবাদ সম্মেলন ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামে মাত্র আন্তর্জাতিক !
২৮ অক্টোবরে লগি-বৈঠার হত্যাযজ্ঞের 'মাষ্টার মাইন্ড' শেখ হাসিনা-কক্সবাজারে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ শাহজাহান
সমৃদ্ধ কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই-পীর সাহেব চরমোনাই
প্রেসিডেন্ট ফ্যাসিবাদের প্রোডাক্ট হলেও সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করা যাবে না: রিজভী
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি মামুনুল হকের
রাজবাড়ীতে বিএনপির দুই নেতাকে আটকে মারধর করায় ১২জনের বিরুদ্ধে মামলা
তরুণ প্রজন্ম আগামী পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করবে: মান্না
ঝিকরগাছায় বিএনপির নেতা নির্বাচন: সভাপতি সাবিরা মুন্নী, সম্পাদক নিপুণ
বিরামপুর থানা পুলিশের অভিযানে হত্যা মামলার- ৩ আসামি গ্রেফতার!
তারেক রহমানের ৩১ দফার দেয়াল লিখন
ঐক্যভঙ্গ হলে আ'লীগ সুযোগ পাবে - রাশেদ প্রধান
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এমডি নিয়োগ নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র
হাবের কর্তৃত্ব দখলে মাঠে নামছে দু’টি গ্রুপ
জামায়াত মদিনার নয় মওদুদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়-আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী