৭৫০ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফায় ইস্টার্ন ব্যাংক

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৬ মার্চ ২০২৫, ০১:২৮ পিএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০১:২৮ পিএম

শেয়ারধারীদের জন্য ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা, ২৩ শতাংশ মুনাফা বেড়েছে ৭৫০ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা করেছে বেসরকারি খাতের ইস্টার্ন ব্যাংক। ব্যাংকের ৩৪ বছরের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। প্রথমবারের মতো গত বছর ব্যাংকটি কর-পরবর্তী এই মুনাফা করেছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৬১১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির মুনাফা ১৩৯ কোটি টাকা বা ২৩ শতাংশ বেড়েছে। ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। এদিকে, রেকর্ড মুনাফা করায় গত বছরের শেয়ারধারীদের জন্য ব্যাংকটি ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে সাড়ে ১৭ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ১৭ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। ২০২০ সালের পর এটিই ব্যাংকটির সর্বোচ্চ লভ্যাংশ। ওই বছর ব্যাংকটি নগদ ও বোনাস মিলিয়ে ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল শেয়ারধারীদের।

 

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে গতকাল মঙ্গলবার শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ ও মুনাফার এ তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। এর আগে গত সোমবার ব্যাংকটির পরিচালনা পরিষদের সভায় লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদনও অনুমোদন করা হয়।

 

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর প্রথম ব্যাংকটির মুনাফা ৭০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ২০১৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকটির মুনাফা বেড়েছে। এর মধ্যে টাকার অঙ্কে মুনাফা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গত বছর। আর শতাংশ বিবেচনায় মুনাফায় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০১৯ সালে। সেবার ব্যাংকটির মুনাফায় ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ইস্টার্ন ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯২ সালে। বহুজাতিক ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল (বিসিসিআই) বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ওই বছর ব্যাংকটির বাংলাদেশ কার্যক্রম পুনর্গঠনের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় ইস্টার্ন ব্যাংক। ১৯৯২ সালে ৩১৪ কোটি টাকার লোকসান নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল ব্যাংকটি।

 

ব্যাংকটির তথ্য অনুযায়ী, যাত্রা শুরুর পর ইস্টার্ন ব্যাংক প্রথম মুনাফার দেখা পায় ১৯৯৫ সালে। ওই বছর ব্যাংকটি ১৪ কোটি টাকা কর–পরবর্তী মুনাফা করেছিল। আর এ ব্যাংক শেয়ারধারীদের প্রথমবারের মতো লভ্যাংশ দিয়েছিল ২০০০ সালে। ওই বছর ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হয় শেয়ারধারীদের। ব্যাংকটির ব্যবসায়ে বড় ধরনের সাফল্য ধরা দেয় ২০০০ সাল-পরবর্তী সময়ে। তখন এ ব্যাংকের ব্যবসা ও মুনাফা দুটোই বাড়তে শুরু করে। ২০১০ সালে এসে ব্যাংকটির মুনাফা ২০০ কোটি টাকা ছাড়ায়।

 

মূলত ২০০০ সাল থেকে ব্যাংকটির নতুন যাত্রা শুরু হয়। ওই বছরের আগস্টে এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন এমজিএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান গাজীউল হক। উদ্যোক্তারা তখন সিদ্ধান্ত নেন যে ব্যাংকটি আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং মডেলে পরিচালিত হবে। ওই বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংকটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে যোগ দেন কাজী মাহমুদ সাত্তার। তিনি ছয় বছর ব্যাংকটির দায়িত্বে ছিলেন। ২০০০ ও ২০০১ সালে কাজী মাহমুদ সাত্তারের সঙ্গে আর কিউ এম ফোরকান, সোহেল আর কে হুসেইন, নাজিম সাফকাত চৌধুরী ব্যাংকটিতে যোগ দেন। এ ছাড়া ২০০৩ সালে মাসরুর আরেফিন, ২০০৪ সালে আলী রেজা ইফতেখার ও ২০০৫ সালে শেখ মোহাম্মদ মারুফ যোগ দেন, যাঁরা বর্তমানে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের হাত ধরেই বড় ধরনের রূপান্তর ঘটেছিল ইস্টার্ন ব্যাংকের।

 

ব্যাংক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শেয়ারধারীদের ব্যাংকটি সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দিয়েছিল ২০১০ সালে। ওই বছর শেয়ারধারীদের ৫৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছিল ২০০৫ সালে। এরপর তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া হয় গত বছর ও ২০২০ সালের শেয়ারধারীদের।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ইস্টার্ন ব্যাংকের রেকর্ড মুনাফার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল বিনিয়োগ আয়। সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করে গত বছর ব্যাংকটি ভালো আয় করেছে। ওই বছরের প্রথম ৯ মাস জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটি বিনিয়োগ থেকে আয় করে ৭৮৯ কোটি টাকা। তবে বছর শেষে এই আয় কত হয়েছে, তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

 

এদিকে, রেকর্ড মুনাফার পাশাপাশি গত বছরের শেষে ইস্টার্ন ব্যাংকের আমানত ও ঋণের পরিমাণ প্রথমবারের মতো ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বছরের শেষে ব্যাংকটির আমানত বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকায়। আর ঋণের পরিমাণ বেড়ে ৪১ হাজার ৭২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। ২০২৩ সালের শেষে ব্যাংকটির আমানত ছিল ৩৬ হাজার ৬১০ কোটি টাকা, আর ঋণ ছিল ৩৫ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে ব্যাংকটির আমানত ৯ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা ও ঋণ ৫ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা বেড়েছে।

 

ইস্টার্ন ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষে সারা দেশে তাদের শাখা ছিল ৮৫টি। উপশাখা বেড়ে হয়েছে ৪৫টি আর এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যা ১১৮। গত বছরের শেষে স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক মিলিয়ে ব্যাংকটির কর্মীসংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৪২৮।

 

 


বিভাগ : অর্থনীতি


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রমজানের সহমর্মিতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যাকাত প্রদান করুন : মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী
বিএটি বাংলাদেশের ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন ৫২তম এজিএম অনুষ্ঠিত
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের নতুন এমডি শাফিউজ্জামান
যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুর থেকে এলএনজি আমদানিসহ ৭ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তরে সহায়তা দেবে চীনা এক্সিম ব্যাংক
আরও
X

আরও পড়ুন

বেড়ায় ছয় বছরের শিশু ধর্ষিত ধর্ষক গ্রেফতার

বেড়ায় ছয় বছরের শিশু ধর্ষিত ধর্ষক গ্রেফতার

জাগ্রত ভয় মনের মাঝে

জাগ্রত ভয় মনের মাঝে

আর কেউ বেঁচে নেই

আর কেউ বেঁচে নেই

সময়

সময়

মার্চের পদাবলি

মার্চের পদাবলি

অপসৃয়মাণ রেলগাড়ি

অপসৃয়মাণ রেলগাড়ি

সুখ ও সৌন্দর্যে একটি পাথর

সুখ ও সৌন্দর্যে একটি পাথর

নিশিতে পাওয়া সায়লা

নিশিতে পাওয়া সায়লা

নাডিন গর্ডিমার : এক অসামান্য যোদ্ধার নাম

নাডিন গর্ডিমার : এক অসামান্য যোদ্ধার নাম

এখন আরেকদল শেখ হাসিনার মতো ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে: আমীর খসরু

এখন আরেকদল শেখ হাসিনার মতো ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে: আমীর খসরু

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদিতে ঈদ রোববার

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদিতে ঈদ রোববার

ইতিহাসের চমকপ্রদ কয়েকটি ‘গল্প’

ইতিহাসের চমকপ্রদ কয়েকটি ‘গল্প’

মফস্বলের সাংবাদিকরাই সমাজ পরিবর্তনের অগ্রসৈনিক: গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী

মফস্বলের সাংবাদিকরাই সমাজ পরিবর্তনের অগ্রসৈনিক: গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী

ঈদুল ফিতরের পুরস্কার

ঈদুল ফিতরের পুরস্কার

ঢালিউডে আসছে 'তান্ডব' সিনেকম্প

ঢালিউডে আসছে 'তান্ডব' সিনেকম্প

কুরআনী বিচার ব্যবস্থা

কুরআনী বিচার ব্যবস্থা

প্রাণশক্তির ঈদ

প্রাণশক্তির ঈদ

ঈদুল ফিতর

ঈদুল ফিতর

নারীর নিরাপত্তা সংকট

নারীর নিরাপত্তা সংকট

ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য

ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য