আবহাওয়া অধিদফতরের ব্যর্থতা অর্থনীতির জন্য অপরিমেয় ক্ষতি
১৫ মে ২০২৩, ০৮:২৭ পিএম | আপডেট: ১৬ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
বহুল আলোচিত ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগ বাংলাদেশের কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনকে স্পর্শ করে মিয়ানমারের সিটুয়ে উপকূল অতিক্রম করে চলে গেছে। দেশের কথিত এলাকায় কিছু বাড়িঘর ও গাছপালার ক্ষতিসাধন ছাড়া তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ঘূর্ণিঝড়টি যেখান দিয়ে যাবার কথা ছিল, সেপথই অনুসরণ করেছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর যেভাবে মোখা নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে, মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-আতংকের বিস্তার ঘটিয়েছে, সেরকম কিছু যে হয়নি, সেটাই রক্ষা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ-বিপর্যয়ে ক্ষয়ক্ষতি না হওয়া বা কম হওয়া আল্লাহর অপার রহমত। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আবহাওয়া অধিদফতর আবারো জরাগ্রস্থতা, অর্থবতা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। শুরু থেকেই মোখা নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতর অতি প্রচারকে মুখ্য কৌশল হিসেবে নিয়েছে, প্রকৃত বাস্তবতার সঙ্গে যার বড়দাগে অমিল প্রত্যক্ষ করা গেছে। প্রচার-প্রচারণা যত গর্জেছে তত বর্ষেনি। বিষয়টি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ আলোচনা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর থেকে মোখার গতি-প্রকৃতি এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত যেসব তথ্য ও বার্তা প্রদান করা হয়েছে তার বেশিরভাগই সত্যরূপে প্রতিভাত হয়নি। ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছিল, মোখা ১১ থেকে ১২ মে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর থেকে তখন বলা হয়, মোখা ৮ মে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। প্রকৃতপক্ষে আঘাত হানে ১৪ মে। মোখা সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে, এমন প্রচারণা সত্য হয়নি। সিডরের চেয়েও মোখা শক্তিশালী, এ প্রচারণাও মিথ্যা সাব্যস্ত হয়েছে। ১৩ মে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে বলা হয়, মোখা প্রবল গতিতে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পূর্বাভাসের প্রভাব বাংলাদেশে লক্ষ করা যায়নি। মোখা বাংলাদেশ উপকূলে যখন আঘাত করে, তখন এর গতি ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। বন্দরসমূহে ও উপকূলীয় এলাকায় দেয়া বিপদ সংকেতেরও কোনো গ্রহণযোগ্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট এলাকায় মানুষের বাসাবাড়িতে অবস্থান ও ঘোরা ফেরা করতে দেখা গেছে। আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে তাদের মধ্যে অনাগ্রহ লক্ষ করা গেছে। এ জন্য তাদের অসচেতনতা, না আবহাওয়া দফতরের প্রচারণার সঙ্গে দৃশ্যমান অমিল ও অবিশ্বাস দায়ী, সেটাই প্রশ্ন। আবহাওয়া অধিদফতরের তরফে সর্বশেষ জানানো হয়, মোখার প্রভাবে ঢাকাসহ চার বিভাগে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত ভারি বর্ষণ কেন, ছিটাফোটা বৃষ্টিও দেখা যায়নি।
আবহাওয়া অধিদফরের এই ভুল, অতিরেক ও প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রদান ও প্রচারণার কারণ কী, সেটাই প্রশ্ন। আবহাওয়া অধিদফতর সরকারের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিদফতর, যা কিনা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বান-বন্যা ইত্যাদির পূর্বাভাস দিয়ে একদিকে জনমানুষকে সর্তক-সচেতন করে, অন্যদিকে সেসব মোকাবিলায় সরকারের প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী করে তোলে। এই অধিদফতরের যে কোনো ব্যর্থতা দেশ ও মানুষের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে। এবারের ঘটনায় আবহাওয়া অধিদফতরের প্রতি মানুষের আস্থা উদ্বেগজনকভাবে কমে যেতে বাধ্য। অধিদফতরের এ ব্যর্থতার কারণ কারিগরি, না দক্ষ জনবলের অভাবজনিত, নাকি অন্য কিছু? আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে উন্নত যন্ত্রপাতির বিকল্প নেই। একইভাবে পর্যবেক্ষণকৃত তথ্য-উপাত্ত মূল্যায়ন, বিশ্লেষণ ও মতামত তৈরি করার জন্য উপযুক্ত গবেষকেরও বিকল্প নেই। বার্তা, বিজ্ঞপ্তি ও প্রচারণার সঙ্গে বাস্তবতার গরমিল এতবেশি কেন হলো, সেটা অনুপুংখভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। যদি যান্ত্রিক কারণ এর জন্য দায়ী হয়, তবে উপযুক্ত ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দ্রæত প্রতিস্থাপন করতে হবে। আর যদি দক্ষ-অভিজ্ঞ জনবলের অভাব দায়ী হয়। তবে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ছাড়া গত্যন্তর নেই। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, আবহাওয়া অধিদফতরের মোখা নিয়ে প্রচার-প্রচারণার সঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের হয়তো সংযোগ থাকতে পারে। দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। তা থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে নেয়া উদ্দেশ্য হতে পারে। অবশ্য এটা কোনো ভালো লক্ষণ বলে গণ্য হতে পারে না। আবহাওয়া অধিদফতরের ওপর জনগণের আস্থায় চিড়ধরা নয়, তা দৃঢ়বদ্ধ হওয়া আবশ্যক।
আবহাওয়া অধিদফতরের ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ও প্রচার-প্রচারণায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দেশের অর্থনীতির। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর অবনমন যখন স্পষ্ট, তখন শিল্পে উৎপাদন বড় রকমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট প্রকট হয়েছে। লোডশেডিং বেড়েছে। গ্যাসের অভাবে অনেক স্থানে রান্নাবান্না পর্যন্ত করা যায়নি। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট আগামী আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ওদিকে পাকার আগেই অনেক এলাকায় ধান কেটে ফেলা হয়েছে। আম, লিচু আগাম পাড়া হয়েছে। এতে চাষিরা অহেতুক ক্ষতির শিকার হয়েছে। দেশে এমনিতে খরা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। পানির অভাবে শাক-সবজি, তরিতরকারির আবাদ পর্যন্ত করা যাচ্ছে না। এইসঙ্গে নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করার যেন কেউ নেই। সরকারের এদিকে দৃষ্টি নেই। সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মোকাবিলায় অধিক ব্যস্ত। সাধারণ মানুষের জীবন দুবির্ষহ বললেও কম বলা হয়। তারা ক্রমাগত নিরূপায় ও নিরালম্ব হয়ে পড়ছে। তারা কোথায় যাবে, কী করবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় অস্থির। এমতাবস্থায়, সরকারের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের কল্যাণে ভূমিকা রাখা। দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ সরকারের নেই। মনে রাখা দরকার, কোনো কিছু দিয়ে কোনো কিছু আড়াল করা যায় না। যত কঠিনই হোক, জনহিতে সরকারকে কাজ করতে হবে। এখন আমাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও স্থিতি সর্বাগ্রে দরকার। সরকারকে সে লক্ষ্যেই সর্বোচ্চ চেষ্টা নিয়োজিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে
দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১
নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন
ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের
আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া
ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী
সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির
রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার