দমন-পীড়ন ও গণগ্রেফতারে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৭ এএম
বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের বিষয়ে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এর আগেও একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। গত ২০ অক্টোবর পুলিশের সাঁড়াশি হামলায় বিএনপি’র মহাসমাবেশ ভন্ডুল হওয়ার পর থেকে মূলত দেশের প্রধান বিরোধিদলকে ক্র্যাক-ডাউনের পথ বেছে নিয়েছে সরকার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতা ততই বেড়ে চলেছে। একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিশ্চয়তার মধ্যে সরকার ও বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর সাথে একটি রাজনৈতিক সংলাপ-সমঝোতার অপরিহার্য বাস্তবতা সম্পর্কে প্রায় সব অংশীজন মত দিয়েছে। মূলত সরকারের একগুয়েমি ও একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার প্রবণতা থেকে সবকিছু অস্বীকার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে বিরোধী দল দমন-পীড়নের পথ বেছে নেয়া হয়েছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করাই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল দায়িত্ব। সে দায়িত্বের বদলে বাহিনীগুলোকে সরকারি দলের ক্যাডারের ভূমিকায় ব্যবহারের মাধ্যমে এসব বাহিনীর কর্মকান্ড দেশের সাধারণ মানুষ ও বিশ্বসম্প্রদায়ের কছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এবার ৮টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশে বিরোধীদলের বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও গণগ্রেফতার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
প্রকাশিত খবরের বরাতে জানা যায়, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ৮টি মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতিতে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ চলাকালে বিটিআরসি’র ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা এবং সহস্রাধিক মানুষকে গ্রেফতার এবং পরবর্তী তিনদিনে মোট ১১জনের মৃত্যু ও শত শত মানুষের আহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশে বিরোধী মত দমন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ, শান্তি ও সমঝোতার লক্ষে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। সেই সাথে ১৩ নভেম্বরে জাতিসংঘে অনুষ্ঠিতব্য ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউতে(ইউপিআর) বাংলাদেশে চলমান অবস্থার চিত্র সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে তুলে ধরারও আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিবৃতি ও উদ্বেগ দেশের সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিবর্তনমূলক তৎপরতায় তেমন কোনো প্রভাব ফেলছে বলে মনে হয়না। এরই মধ্যে অন্তত ৯ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এদের অনেকের অবস্থান এখনো অনিশ্চিত বলে জানা যায়। ধরে নেয়ার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্বীকার কিংবা দায় এড়ানোর প্রবণতা খুবই উদ্বেগজনক বিষয়। গ্রেফতারের আইনসম্মত নীতিমালা এবং মানবাধিকারের বিষয়গুলো উপেক্ষিত হওয়ার মাধ্যমে জনমনে উদ্বেগ ও বিক্ষোভের মাত্রা বেড়ে চলেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশের জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আকাঙ্খা ও বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রচেষ্টাকে অগ্রাহ্য করে আরেকটি একতরফা নির্বাচন করে টিকে থাকার সক্ষমতা বাংলাদেশ সরকারের নেই। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা প্রকট হয়ে ওঠার আগেই দেশের অর্থনৈতিক সংকটগুলো প্রকট হয়ে উঠতে শুরু করেছিল। ইতিমধ্যে দেশের তৈরী পোশাক রফতানি খাত বড় ধরণের ঝুঁকির মুখে পড়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ, রাজনৈতিক সহিংসতা, আন্দোলন-অবরোধের কারণে অনিশ্চয়তা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত ঘটনাগুলোকে সামনে রেখে ক্রয়াদেশ বাতিল করে দেশের বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মামলা ও হয়রানি দেশের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠির অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও উৎপাদনশীলতার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। ধারাবাহিক অবরোধে রাজধানী ঢাকা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। একইভাবে পশ্চিমা উন্নয়ন সহযোগী ও বাণিজ্য অংশীদারদের সাথেও সরকারের দূরত্ব বেড়ে চলেছে। পর্দার অন্তরালে নানামুখী তৎপরতার কথা শোনা গেলেও বিরোধীদলের সাথে সংলাপ ও সমঝোতা ছাড়া একটি অংশগ্রহণ নির্বাচন অনুষ্ঠান অসম্ভব। বিএনপি ভেঙ্গে বা ভাগিয়ে নিয়ে বিকল্প প্লাটফর্ম দাঁড় করিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার অপতৎপরতা দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবেনা। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে দলই ক্ষমতায় যাক না কেন, দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, মানবাধিকার এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার কোনো বিকল্প নেই। বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন, গণগ্রেফতার এবং নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে সহিংসতার পথে ঠেলে দিয়ে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কোনো লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ছন্দ হারানো সিটি হারল ব্রাইটনের কাছেও
হাঁটুর চোটে মৌসুম শেষ মিলিতাওয়ের
ভিনির হ্যাটট্রিক,বেলিংহ্যামের গোলে ফেরার রাতে রিয়ালের জয়
রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা
শারজাহতে ৩৪ বছরের অপেক্ষা ঘোচালেন শান্ত
প্রথম আঘাত তাসকিনের
সিলেটে ইয়াকুবিয়া হিফযুল কুরআন বোর্ডের পরীক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত
'ডিডি একা নয় হলিউডে এমন অসংখ্য রাঘব-বোয়াল রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে'
শরণখোলায় বিএনপি.র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
সম্মানসূচক ডক্টরেট অর্জন করেছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশী সমাজকর্মী ফয়েজ উদ্দিন এমবিই
পাঠ্যবইয়ে মুসলমানদের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে
যুক্তরাষ্ট্রের নারী প্রেসিডেন্ট কি অধরাই থেকে যাবে?
গণঅভ্যুত্থানের সাবলিমিটি : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন
গণতন্ত্রের স্বার্থে এ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে
পরিবর্তনের হাওয়া লাগেনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অফিস চালাচ্ছেন আওয়ামী কর্মকর্তারা !
ড. ইউনূসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ করলেন লন্ডনে পলাতক আনোয়ারুজ্জামান
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বন্ধে কাজ করতে আগ্রহী ট্রাম্প
হতাশ মার্কিনিরা দেশ ছাড়তে চাচ্ছেন
সহিংসতায় ফের উত্তপ্ত মণিপুর নারীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা
‘সংখ্যালঘু’ তকমা ফিরে পাচ্ছে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়