সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ কাম্য নয়
২৯ মার্চ ২০২৫, ১২:২৮ এএম | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৫, ১২:২৮ এএম

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টি জোরালো হয়ে উঠে। জনপ্রশাসন, পুলিশ, নির্বাচন কমিশন, সংবিধান, দুর্নীতি দমন কমিশন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয় প্রাধান্য পায়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপর প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এসব সংস্কারের ওপর জোর দেন এবং বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠনের কথা জানান। প্রায় পনেরটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এগুলোর বেশিরভাগেরই গত জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বেশ কয়েকটি কমিশন প্রতিবেদন জমা দিলেও অনেকগুলো তা দিতে পারেনি। সেগুলোর প্রতিবেদন জমার সময় বাড়িয়ে ফেব্রুয়ারি করা হয়। ফেব্রুয়ারিতে সেগুলোর কয়েকটি প্রতিবেদন জমা দিলেও কিছু বাকি থেকে যায়। আরও প্রায় পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি। এগুলোর সময় পুনরায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা নিয়ে দফায় দফায় সময় বাড়নো হলেও সেগুলো সে সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারছে না। এতে সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ বা নির্বাচন বিলম্ব করার কোনো প্রবণতা রয়েছে কিনা, তা নিয়ে পর্যবেক্ষক মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
রাষ্ট্র সংস্কারের পূর্ণাঙ্গ বা আমূল সংস্কার কোনো সহজ কাজ নয়। কোনো নির্দিষ্ট টাইম ফ্রেম দিয়ে সংস্কার করা সম্ভব নয়। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। সময়ের সাথে এবং সময়ের প্রয়োজনে তার পরিবর্তন-পরিমার্জন করতে হয়। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে পুরো রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে দিয়েছিল। ফলে এই কাঠামো পরিবর্তন-পরিমার্জন ও সংশোধন অনিবার্য হয়ে পড়ে। গণঅভ্যুত্থানে হাসিনার পতন ও পলায়নের পর এ ব্যাপারে সকল রাজনৈতিক দল একমত পোষণ করে। এ অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিটি গঠন করে এবং তার প্রতিবেদন নির্দিষ্ট সময়ে জমা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করে। ইতোমধ্যে জমা দেয়া প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা করার জন্য একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সেখানে গিয়ে তাদের প্রস্তাব ও সুপারিশ পেশ করেছে এবং সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করেছে। এর মধ্যে বিএনপি, এনসিপি, জামায়েতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জানিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, একসঙ্গে দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হওয়া, সংসদের মেয়াদ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, এসব বিষয়সহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে সামনের দিনগুলোতে আরও আলোচনা হবে এবং মতদ্বৈততা দেখা দেবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্য পৌঁছতে বা না পৌঁছতে অনেক সময় লাগবে। এ প্রেক্ষিতে, প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সংস্কার ও আলোচনার নামে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেয়া বা সরকারের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়ারে কোনো নেপথ্য উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা? আবার সংস্কার কমিশনের সদস্যরা সরকারি বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার মজা পেয়ে প্রতিবেদন দিতে বিলম্ব করছে কিনা, এমন প্রশনও উঠেছে। এমনিতেই কমিশনের অনেক সদস্যকে নিয়ে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে আপত্তি রয়েছে। এসব কমিশনে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অদক্ষ ব্যক্তি, এনজিও কর্মকর্তাসহ বিতর্কিত ব্যক্তিরা স্থান পেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের কারণে সংস্কার প্রতিবেদন বিলম্ব বা আরও সময় নেয়ার বিষয়টি জড়িয়ে আছে কিনা, তা নিয়ে কথা উঠেছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বা অর্গানের সংস্কার করা হচ্ছে, এমন এক অভিজাত বিষয়কে সামনে রেখে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে, এ সংশয়ও রয়েছে। এতে একদিকে জনগণের অর্থের অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের কমিটমেন্টও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং নানা প্রশ্নের উদ্রেক করছে।
সংস্কার নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। তবে তার ব্যপ্তি ও পরিধি কতটা, তা নির্ধারণ করে সংস্কার করা জরুরি। এটা যেমন অনন্তকাল ধরে চলতে পারে, তেমনি প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমেও মৌলিক কাজ শেষ করা যেতে পারে। যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার অনন্তকালের নয়, তাই তার কাজ প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে বিদায় নেয়া। পাশাপাশি সংস্কারের যে রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে, তা নির্বাচিত সরকারের জন্য পথ নির্দেশক হিসেবে রেখে যাওয়া। যদি এমন ধারণা জন্মায়, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের নামে নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে নিজের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে চাচ্ছে, তাহলে তা কাম্য হতে পারে না। অন্তর্বর্তী সরকারের নানাবিধ সীমাবদ্ধতা থাকে। নির্দিষ্ট মেয়াদ না থাকায় অর্থনীতি, রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে আস্থার কমতি দেখা দেয়। কারণ, প্রত্যেক ক্ষেত্রের স্টেক হোল্ডাররা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের স্থিতিশীল সরকারের সাথে কাজ করতে চায়। এ প্রেক্ষিতে, সংস্কারের নামে অন্তর্বর্তী সরকারের কালক্ষেপণ করা উচিৎ নয়। তার উচিৎ, নির্বাচনের জন্য যতটা সংস্কার দরকার তা করে দ্রুত নির্বাচনের দিকে ধাবিত হওয়া। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট টাইম ফ্রেম দেয়া।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ফুলপুরে নিচের মাটি সরে গিয়ে ঝুলে আছে সেতু, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

যশোর-অভয়নগরে গাছ কাটার সময় গাছের নিচে চাপা পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন পারমাণবিক চুক্তির ভাবনায় ইরান

ফিলিস্তিন স্বীকৃতি ইস্যুতে ম্যাক্রোঁকে এড়িয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র

গোয়ালন্দে পদ্মা নদীতে বিষ দিয়ে অবাধে মাছ শিকার

বিহারে ভারী বর্ষণ-বজ্রপাত, ২৫ জনের মৃত্যু

'মেধা'র বিপরীতে 'সুপারিশ' অভ্যুত্থানের শহীদের রক্তের সাথে প্রতারণার নামান্তর: সারজিস

সামনের সপ্তাহে তিন দেশ সফরে যাচ্ছেন শি জিনপিং

ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের শেষ দেখতে চায় চীন

গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে সেনাদের বরখাস্তে নেতানিয়াহুর সমর্থন

পবিপ্রবিতে কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা আজ

উদ্ধার তৎপরতার মধ্যেই ফের ভূমিকম্প মিয়ানমারে

তারাকান্দার ২১ গ্রামে বিশুদ্ধ পানির সংকট

ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে আখাউড়ায় সাংবাদিকদের মানববন্ধন

মনোহরগঞ্জে পানিতে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু

গফরগাঁওয়ে বিএনপির ৪জন নেতাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত

মুম্বাই হামলার সন্দেহভাজন তাহাউর রানাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করল যুক্তরাষ্ট্র

নরসিংদীতে কিশোরী ধর্ষণ মামলার আসামী গ্রেপ্তার করেছে র্যাব

লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরও ১৬৭ বাংলাদেশি অনিয়মিত অভিবাসী

সিডি জোনের বিরুদ্ধে মালিকানা জালিয়াতির অভিযোগ তুললেন সোহাগ