নজরুল সাহিত্যের বিষয়বস্তু ও কাব্য বিশ্লেষণ
২৪ মে ২০২৪, ১২:২০ এএম | আপডেট: ২৪ মে ২০২৪, ১২:২০ এএম
কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলার বিদ্রোহী কবি নামে পরিচিত।১৮৯৯ সালে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং বাঙালি আধুনিকতার পথিকৃৎ।
নজরুলের প্রাথমিক জীবন কষ্ট এবং সংগ্রামের ছিল। কারণ তিনি অল্প বয়সে তার পিতাকে হারিয়েছিলেন। অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, নজরুল ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি ও সঙ্গীতে অসাধারণ প্রতিভা প্রদর্শন করেছিলেন। তার কাব্যিক প্রতিভা শীঘ্রই কলকাতার বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যেখানে তিনি তার কিশোর বয়সে লেখালেখি এবং সঙ্গীতে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য চলে যান।
কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ এই কবিতায় তিনি চেতনা এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মূর্ত প্রতীক। এটি স্বৈরাচারের উৎখাত এবং একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতীক। এছাড়াও সাম্যবাদী কবিতা ও অসংখ্য কালজয়ী গান রচনা করেছেন।
শতবর্ষ আগে ১৯২২ সালে বাংলা কবিতা ও গানের চলমান ধারায় প্রবল প্রকম্প সৃষ্টি করে জ্বলে উঠেছিল অগ্নিগিরির জ্বালামুখ যার নাম ‘অগ্নিবীণা‘। এটি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম প্রকাশিত কাব্য যা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা অবদান।
যখন কবি বলতে সবাই রবীন্দ্রনাথকেই বুঝতো, তখন রবীন্দ্রবলয়ের বাইরে এসে সম্পূর্ণ ভিন্নধারার কবিতা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতায় অনুপ্রাস, উপমা, রূপক এবং ছন্দপ্রয়োগে অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন নজরুল।
‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবির উচ্চারণ :তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!/তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল্-বোশেখির ঝড়।/তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!/তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!/কবি যেমন ছিলেন চিরনতুন ও চঞ্চল, তেমনি নতুনদের আহ্বান জানিয়েছেন নবছন্দে :
ঐ ভাঙা-গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডর?
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!/বধূরা প্রদীপ তুলে ধর!!
কাল ভয়ঙ্করের বেশে এবার ঐ আসে সুন্দর!/তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!/তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!/কবিতাটিতে কবি নতুনের জয়গানে মুখর হয়েছেন। কবি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, নতুনেরাই পারে নবকিছু সৃষ্টি করতে। নজরুল তাঁর বিখ্যাত ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় বলছেন :
বল বীর/বল উন্নত মম শির!/শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির/বল বীর/বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’ চন্দ্র সূর্য গ্রহতারা ছাড়ি’/ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া/খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,/উঠিয়াছি চির বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!/
নজরুল তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় আবেগের সাথে অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তার অবাধ্যতা ঘোষণ করে, নিজেকে একজন নির্ভীক যোদ্ধা হিসাবে চিত্রিত করেছেন এবং নিপীড়িতদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। কবিতাটির শক্তিশালী চিত্রকল্প ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী বক্তৃতা বিদ্রোহের চেতনাকে ধারণ করেছে যা নজরুলের সাহিত্যিক রচনাকে সংজ্ঞায়িত করে। যা পরবর্তী প্রজন্মকে অত্যাচার প্রতিরোধ করতে এবং ন্যায়ের জন্য লড়াই করতে অনুপ্রাণিত করে।
‘বল বীর’/আমি চির উন্নত শির!/আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথীবির বিদ্রোহী’ কবিতায় কবি অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিভাবে জ্বলে উঠতে হয়, তাই বলেছেন কবিতার পঙক্তিগুলোতে।
‘আমি দুর্বার,/আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,/আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!/আমি মানি না কো কোন আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!/আমি ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর/আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর’ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন : ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব, ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলন, তুরস্কে কামাল পাশার আবির্ভাব, বাংলা সাহিত্যের এসব পটভূমি নজরুলকে বিদ্রোহীর মতো কবিতা লেখার জন্য প্রভাবিত করেছে। তিনি তার কবিতাকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। অত্যাচারী শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য যারা প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে চেয়েছিল। তাঁর শক্তিশালী চরণগুলো অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতা প্রকাশ করে পাঠকদের অধিকারের জন্য জেগে ওঠার আহ্বান জানায়।
‘গিরি-সংকট, ভীরু যাত্রীরা, গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ
কান্ডারী! তুমি ভূলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
‘করে হানাহানি, তবু চল টানি’, নিয়াছ যে মহাভার!’
বিদ্রোহের পাশাপাশি কবিকে আমরা দেখতে পাই প্রেমিকরূপেও। কবি বলেন : ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য ধূমকেতু কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত অর্ধ-সাপ্তাহিক পত্রিকা। বিপ্লবীদের মুখপত্র এ পত্রিকাটি ১৩২৯ বঙ্গাব্দের ২৬ শ্রাবণ (১১ আগস্ট ১৯২২) আত্মপ্রকাশ করে। এর প্রথম সংখ্যায় নজরুলের অনলবর্ষী দীর্ঘ কবিতা ‘ধূমকেতু’ প্রকাশিত হয়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়সহ অনেক দেশবরেণ্য ব্যক্তি এবং অমৃতবাজার পত্রিকা ধূমকেতুর আবির্ভাবকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। শরৎচন্দ্রের কিছু নিবন্ধও এতে প্রকাশিত হয়। বিপ্লব, কৃষক-মজদুর ও মধ্যবিত্তের জাগৃতি ছিল এর মূল লক্ষ্য তাঁর অগ্নিঝরা ভাষা ও নির্ভীক বক্তব্যের জন্য পত্রিকাটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ধূমকেতুতে নজরুল ইসলাম মানুষের স্বাধীনতা, সাম্য ও মুক্তির আকাঙ্খাকে ভাস্বর করে দুরন্ত আবেগে যেসব সম্পাদকীয় নিবন্ধ, বিবৃতি ও কবিতা লিখেছিলেন। ধূমকেতুতে প্রকাশিত নজরুলের গদ্য রচনাগুলো পরে ‘দুর্দিনের যাত্রী’ ও ‘রুদ্র মঙ্গল’ গ্রন্থে এবং কবিতা গুলো ‘বিষের বাঁশী’ ও ‘ভাঙার গান কাব্যগ্রন্থে সংকলিত হয়।
রবীন্দ্রনাথের হাতে লেখার হুবহু প্রতিলিপি হিসেবে এই আশীর্বাণী প্রকাশিত হতো:
‘আয় চলে আয় রে ধূমকেতু,/আঁধারে বাঁধ্ অগ্নিসেতু,
দুর্দিনের এই দুর্গশিরে/উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন!
অলক্ষণের তিলক রেখা/রাতের ভালে হোক্ না লেখা,
জাগিয়ে দেরে চমক্ মেরে,/আছে যারা অর্ধচেতন!’
বাঙালি সাহিত্যিকদের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম প্রথম কবি যিনি সাম্যবাদী চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে সাহিত্য রচনা করেন। মানবতার মহৎ আদর্শে উদ্বুদ্ধ কবি নজরুলের কাব্য-সাধনার এক প্রধান অংশজুড়ে আছে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি কামনা। নজরুল মানসে হিন্দু-মুসলমান বৈপরীত্যের দ্যোতনা না হয়ে পরিপূরক হয়েছে তাঁর অসামান্য সাম্যবাদী চেতনার ফলে। হিন্দু-মুসলমানই শুধু নয় ‘মহামানবের মিলনকামী কবি উদাত্ত কণ্ঠে গেয়েছেন’
‘যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রিশ্চান।’
দুঃখের বিষয় এই যে, খেলাফত আন্দোলন এবং অসহযোগ আন্দোলন কেন্দ্রিক হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। অল্পকালের মধ্যেই এ সম্প্রীতিতে ভাঙন ধরে এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হয়। এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নজরুল ইসলাম অত্যন্ত মর্মাহত হন। দাঙ্গা উপলক্ষ্যে সাপ্তাহিক ‘গণবাণী’তে ‘মন্দির ও মসজিদ’ এবং ‘হিন্দু-মুসলমান’ নামে দুটি প্রবন্ধ লেখেন। দাঙ্গা বিক্ষুব্ধ পরিবেশেই ১৯২৬ সালের কংগ্রেসের বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনের উদ্বোধনী সংগীত হিসেবে লেখেন ‘কান্ডারি হুঁশিয়ার’ ‘এখানে কবি তরুণকে তার অমিত যৌবন শক্তি মহাবিদ্রোহীর মতো কাজে লাগাতে আহ্বান করেছেন’‘অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ/কান্ডারি! আজ দেখিবো তোমার মাতৃমুক্তি পণ!/‘হিন্দু না ওরা মুসলিম?’ ঐ জিজ্ঞাসে কোন জন?/কান্ডারি! বলো, ডুবিছে মানুষ—সন্তান মোর মা’র! কাজী নজরুল ইসলাম দেশের তরুণসমাজকে সমস্ত দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে থেকে মানবতার উচ্চাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশসেবায়, মানব কল্যাণে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মনে রাখতে বলেছেন।
‘আমরা শক্তি আমরা বল/আমরা ছাত্রদল।
মোদের পায়ের তলায় মুর্সে তুফান/উর্ধ্বে বিমান ঝড়-বাদল।
আমরা ছাত্রদল।। ( কাব্যগ্রন্থ: সর্বহারা)
মানুষের একত্ব, সমানতা, এবং ধর্ম, জাতি, দেশ, কাল - এই সবগুলি প্রশাসন এবং বাস্তবতা একে অপরের সাথে তুলনা না করে তিনি লেখেন: সাম্যের গান গাই: মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান!/নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি, সব দেশে, সব কালে, ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।- (কবিতা মানুষ)
কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রকৃতির মাধুর্য, ও সৌন্দর্যের সাথে প্রেমের গভীরতার চিত্র অংকন করেছেন। তার কবিতার মাধ্যমে প্রেম ও প্রকৃতির সৌন্দর্য ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা উভয়ই সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে। বইছে আবার চৈতী হাওয়া গুম্রে ওঠে মন,/পেয়েছিলাম এম্নি হাওয়ায় তোমার পরশন।/তেম্নি আবার মহুয়া-মউ/মৌমাছিদের কৃষ্ণ-বউ/পান ক’রে ওই ঢুল্ছে নেশায়, দুল্ছে মহুল বন,/ফুল-সৌখিন্ দখিন হাওয়ায় কানন উচাটন!
(কবিতা: চৈতি হওয়া)
আবার তিনি কখনো তার কবিতায় এক অদ্ভুদ উদাসীনতা ও দুঃখ প্রকাশ করেন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের বিশেষত সন্ধায় সান্ত¡না খুঁজেছেন। উদাস দুপুর কখন গেছে এখন বিকেল যায়,/ঘুম জড়ানো ঘুমতী নদীর ঘুমুর পরা পায়!/শঙ্খ বাজে মন্দিরে, সন্ধ্যা আসে বন ঘিরে,/ঝাউ-এর শাখায় ভেজা আঁধার কে পিঁজেছে হায়!/মাঠের বাঁশী বন্-উদাসী ভীম্পলাশী গায় (কবিতা: চৈতি হওয়া)
দেশপ্রেম ছিল নজরুলের রচনায় আরেকটি পুনরাবৃত্ত থিম। কারণ তিনি আন্তরিকভাবে নিজের দেশ এবং এর স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের গুরুত্বে বিশ্বাস করতেন। মাতৃভূমির প্রতি তাঁর আবেগপ্রবণ ভালোবাসা তাঁর কবিতা, ছড়া ও গানে স্পষ্ট ছিল। যা জাতীয়তাবাদের চেতনা উদযাপন করে এবং জনগণকে তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায়।
স্বদেশেপ্রেমে নজরুল সীমা ছাড়া!/আমাদের মাতৃভূমি পৃথিবীর স্বর্গ।” /এই দেশের মাটি জল ও ফুলে ফলে মহিমান্বিত এই বাংলার স্থান দিয়েছেন তিনি অকল্পনীয় উচ্চতায়,/কিছুতেই যেন ভুলিতে নারি এ মাটির মায়ের মায়া/মোর ধ্যানে হেরি আল্লার পাশে এই বাংলার ছায়া।” নদী ফুল পাখী ছাড়া তার কবিতা হয় না। এত ফুল এত পাখী অন্য কোনো কবির কবিতায় নেই।
‘ওরে ও ভোরের পাখি . . যে গান গাহিলি তোরা
তারি সুর লয়ে ঝরিবে আমার গানের পাগল-ঝোরা।’
ফুল সুবাসে মাতোয়ারা কবি নিজেই হয়ে যান কখনো সন্ধ্যামালতী, কখনো বকুল-চাপা, কখনো অপরাজিতা, রজনীগন্ধা।” ওরা যে আমার কোটি জনমের ছিন্ন অশ্রু-হার!”
এই যে স্বদেশ যার রূপে তিনি আত্মহারা, যার সুবাসে মাতোয়ারা,যাকে নিয়ে তার এত অহঙ্কার, সেই ভারতবর্ষ পর-পদ-আনত, লাঞ্ছিত, লুন্ঠিত। ‘মোদের উঠান-ভরা শস্য ছিল হাস্য-ভরা দেশ ঐ বৈশ্য দেশের দস্যু এসে লাঞ্ছনার নাই শেষ।’
যখন থেকে তার জ্ঞানের উন্মেষ সেই শৈশব থেকেই ঐ লুটেরাদের হাত থেকে স্বদেশকে উদ্ধারের অঙ্গীকার তার।
‘বাংলা মায়ের বুক হতে ঐ নীল বাঁদরদের তাড়াও॥
হায়দরী হাঁকে, হাতে লাঠি ধরে, বাঙালির জয় গাও॥’
বন্দী থাকা হীন অপমান। ‘দেশের স্বাধীনতা বেহেশতের চেয়েও মূল্যবান-তার উপমাস্বাধীন-তুর্কী,’/আজ স্বাধীন এ দেশ! আজাদ মোরা বেহেশ্তও না চাই!/ভারতের বিদেশী দখলদার ইংরেজদের তিনি হুঁশিয়ার করেন-
‘এদেশ ছাড়বি কি না বল/নইলে কিলের চোটে হাড় করিব জল।’/মোরা মারের চোটে ভূত ভাগাব/ মন্ত্র দিয়ে নয়। মোরা জীবন ভরে মার খেয়েছি/আর প্রাণে না সয় ॥”
বাঙালির সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চেতনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কাজী নজরুল ইসলামের গান।
কবিতার পাশাপাশি, নজরুল একজন প্রতিভাধর সংগীতশিল্পী ছিলেন। যিনি তার আত্মা-আলোড়নকারী গান এবং সুরের জন্য পরিচিত যা সময়ের চেতনাকে ধারণ করেছিল। তার গান, ‘নজরুল সঙ্গীত’ নামে পরিচিত। প্রেম এবং আধ্যাত্মিকতা থেকে দেশপ্রেম এবং সামাজিক ন্যায়বিচার পর্যন্ত বিস্তৃত থিমকে অন্তর্ভুক্ত করে। একইভাবে, তাঁর ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ তার ন্যায়ের সন্ধানে অদম্য বাধার সম্মুখীন এক একা যোদ্ধার সংগ্রামকে মর্মস্পর্শীভাবে চিত্রিত করেছেন। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ‘ভাঙার গান’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে। ১৯৭০ সালে জহির রায়হান পরিচালিত ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে কারারুদ্ধ রাজনৈতিক বন্দীরা গেয়ে ওঠেন ‘কারার ঐ লৌহকপাট’। আজও এই গান মুক্তিকামী বাঙালির সংগ্রামী চেতনার প্রতীক হয়ে আছে।/কারার ঐ লৌহকপাট/ভেঙ্গে ফেল্ করে লোপাট রক্ত জমাট/শিকল পূজার পাষাণ বেদী!/ওরে ও তরুণ ঈশান! বাজা তোর প্রলয় বিষাণ ! ধ্বংস নিশান/উঠুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি’।।পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘নজরুল সহায়িকা’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটি নজরুল লিখেছিলেন ১৯২১ সালে। সে সময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক গুরু দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ইংরেজ সরকারের হাতে বন্দী হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। তার প্রতিবাদ জানাতে ওই সময়ের সাপ্তাহিক ‘বাংলার কথা’ একটি সংখ্যা বের করে। দেশবন্ধুর স্ত্রী বাসন্তী দেবী সেই সংখ্যার জন্য কবির কাছে একটি লেখা চেয়ে পাঠান। নজরুলের সাহিত্যের ভা-ার শুধু কবিতা ও গানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এছাড়াও তিনি একজন বিশিষ্ট নাট্যকার ছিলেন।
তার প্রথম প্রকাশিত নাটক: ঝিলিমিলি (নাট্যগ্রন্থ) ১৯৩০
আলেয়া (গীতিনাট্য) ১৯৩১[৩]/যেখানে বাস্তবজীবনে প্রেম ও বিরহ ঝিলিমিলি নাটকের উপজীব্য বিষয়। এই নাটকে প্রকৃতির প্রতিবাদী সত্ত্বা তুলে ধরা হয়েছে। কবি কাজী নজরুল ছিলেন ক্ষণজন্মা মহান এক পুরুষ। তাঁর কর্ম ও জীবন বাংলা ও বাঙালির চিন্তা ও চেতনাকে আজও দারুণভাবে নাড়া দেয়। নজরুল ছিলেন এমন এক মহৎ প্রাণ, যিনি বাঙালির অফুরন্ত আবেগ, বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস আর প্রবল প্রাণশক্তিকে আপন আত্মায় ধারণ করে সারাজীবন দ্রোহ, প্রেম, সাম্য ও মানবতার বাণী শুনিয়েছেন। অনাচার ও অত্যাচার প্রতিরোধে উৎপীড়িতের চিরদিনের প্রেরণা তিনি।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম
সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত
আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: যুক্তরাষ্ট্র জাগপা