শীতের সকাল
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম
ঝিলি, মিলি, আর রৌদ্রর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ ।পরিক্ষার পরেই পুরো একটানা পনেরো দিনের
বন্ধ দিয়েছে স্কুল। ওদের বাবা শিশির আহমেদ একজন বেসরকারি চাকুরী জীবি। মা বিন্দু বেগম গৃহীনি। মেয়ে ঝিলি সবার বড় সে এবার নবম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। তারপর মিলি সপ্তম শ্রেণীতে। আর সবার ছোট ছেলে রৌদ্রর সে দ্বিতীয় শ্রেণীতে। মেয়ে দুটি পিঠোপিঠি হলেও ছেলে রৌদ্রর বোনদের চেয়ে প্রায় পাঁচ ছয় বছরের ছোট।
অবশ্য এমনটা হওয়ারও ঢের কারণও আছে।
মেয়ে ঝিলি আর মিলির জন্মের পর ওদের বাবা-মা, শিশির আহমেদ আর বিন্দু বেগম ভেবেছিলো তারা আর কোন সন্তান নেবে না।
মেয়ে দুটোকে নিয়েই তারা তাদের বাকি জীবনটা পার করে দেবে। ছেলে হয়নি তাতে কি? বাংদেশে এমন অনেক পরিবার আছে। যেসব পরিবারের
মেয়েরা পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষিত হয়ে আজ তারা সব সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে চাকরিবাকরি করছে।
তারা সব নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বাবলম্বী হয়ে তাদের বাবা-মার দায়িত্বও নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে। শিশির আর বিন্দুর দুজনের এমন চিন্তা
ভাবনা থাকলেও। তাদের উভয়ের পিতৃলয়ের লোকজন। বিশেষ করে তাদের মা-বাবাদের জোরাজুরিতে শেষমেশ তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়েছে। একদিকে শিশিরের মা-বাবা বলে, আমরা পুঁতার মুখ দেখে মরতে চাই। অন্যদিকে বিন্দুর বাবা-মা বলে আমরা নাতির মুখ দেখতে চাই। এদিকে শিশির আর বিন্দু দুজন মনে মনে একটু ভয়ও পাচ্ছিল।
এই ভেবে যে, ছেলের আশায় আবারো যদি তাদের মেয়ে হয়! যাহোক বিশ্বের মহান স্রষ্টা তার বান্দা-বান্দীর জন্য যেটাই করেন মঙ্গলের জন্যই করেন। স্রষ্টার উপর ভরসা করেই তারা শেষে সন্তান নিলে ছেলে রৌদ্রর জন্ম হয়।
শিশির আর বিন্দুর জন্মস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চল। খুলনা বিভাগের পশ্চিমে বৃহৎ বাণিজ্যিক স্থলবন্দর বেনাপোল সীমান্তের প্রায় নিকটবর্তী। যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানার অদূর দক্ষিণে আট কিলোমিটার দূরে নারাংগালী গ্রামে। চাকুরির সুবাদে শিশির বউ সন্তান সবাইকে
নিয়ে এখন ঢাকা ধানমন্ডির একটা ফ্লাটে ভাড়া থাকেন। শিশিরের স্ত্রী বিন্দুর বাপের বাড়ি নারাংগালীর গ্রামের পশ্চিম পাশের গাঁ পানিসারা
গ্রামে। বর্তমান যে গ্রাম ফুল চাষে বিখ্যাত। আর
পানিসারা গ্রামের একটু উত্তরে যশোর বেনাপোল
সড়কের সাথে গদখালি বাজার। যে বাজারটিকে
বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী নামে কমবেশি সকলেই চেনে জানে।
শিশির আহমেদ সন্ধ্যার পরে বাসায় ফিরার পর
পরিবারের সবাই ডাইনিং টেবিলে রাতের ডিনার করতে বসেছে। শিশিরের স্ত্রী বিন্দু সবার পাত্রে খাবার তুলে দিচ্ছে। খেতে খেতে হঠাৎ রৌদ্রর বললো, জানো আব্বু আমাদের আজ স্কুল থেকে শীতের বন্ধ দিয়েছে হুম..।
শিশির,..মুখে হাসির রেশ টেনে বললো তাই নাকি বাবা ? খুব ভালো।
তারপর, ঝিলি, মিলির দিকে তাকিয়ে বললো কি মা-মণিরা তোমাদেরও স্কুল বন্ধ দিয়েছে নাকি?
ঝিলি, বললো জ্বি, আব্বু দিয়েছে।
মিলি: আমাদেরও স্কুল বন্ধ দিয়েছে আব্বু।
বিন্দু চুপচাপ ওদের বাপ ছেলে মেয়েদের কথা শুনছে আর শিশিরের পাশের চেয়ারে বসে খাচ্ছে।
শিশির বললো: হুম, এজন্য দেখছি আজ সবার
মনটা ভীষণ হাসিখুশি। আমার সারা বাড়িটা এত
রাতেও জ্যোস্নার আলোয় ঝলমল করছে।
তা- এখন তো তোমাদের কারোর বই পড়া নেই।
এই ছুটির দিন গুলোতে সব কি করবে ভাবছো? ওপাশ থেকে ঝিলি বলে উঠলো চলো না আব্বু, এই শীতের ছুটিতে আমরা সবাই আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। মিলি, তখন একটু উৎফুল্ল দৃষ্টিতে ঝিলির দিকে তাকিয়ে বললো ইশ! তাহলে ভারি মজা হবে আপু। আমিও আব্বু
কে এই কথা বলবো বলে ভাবছিলাম।
রৌদ্রর বললো, কি মজা হবে-রে আপু?
মিলি কথা বলতে যাবে...সেসময় মা, বিন্দু বেগম বললো বুঝতে পারছিস না রৌদ্রর? শহরে যে বন্দী পাখির মত থাকতে হয়। মন খুলে মুক্ত মনে কোথাও ঘুরতে পারেনা। গাঁয়ে গেলে পাখির মত কদিন এদিকসেদিক ডানা মেলে মুক্ত বাতাসে উড়ে বেড়াতে পারবে সেজন্য।
মিলি বললো, আম্মু তুমি যে কি বলোনা। আমি বুঝি পাখি! আমার কি কোন ডানা আছে যে আমি উড়বো?
ঝিলির কথা শুনে সকলেই হেসে উঠলো। বিন্দু বললো, আরে, বাবা ওটা তো আমি কথার কথা
বললাম। তারপর গায়ে হাত বুলিয়ে বললো, ভাগ্যিস আমার মেয়েটার ডানা নেই। তা- না হলে উড়ে কোথা থেকে, কোথায় যেতো। শেষে আর আমার মেয়ে-টাকে খুঁজে পেতাম না।
ঝিলি মুখটা একটু অন্য রকম করে বললো, হুম যাও...আমি তো যেতে চাইছি দাদু নানুদের গাঁয়ের মাঠের এই শীতের খেজুরের রস। আর গরম গরম পায়েশ, পাটিসাপটা, ভাপা পিঠা খাওয়ার জন্য। আর তাছাড়া আম্মু তোমরাই তো বলো। যে, আমরা সব যশোর জেলার মানুষ। যে যশোর জেলা খেজুর রস গুড়ের জন্য সারা বাংলাদেশের মধ্যে বিখ্যাত। কি বলোনা? সেই আমরা যশোরের মানুষ হয়ে যদি রস গুড় পিঠাপুলি ওসব না খায়। তাহলে যশোরের মানুষ বলে গর্ব করার আরকিছু থাকবে আমাদের বলো?
পাশ থেকে রৌদ্রর বললো, তুই ঠিক বলেছিস আপু। আহা! গরম রসের মধ্যে পাট কাঠিতে করে বানিয়ে জড়ি পিঠা খেতে কি যে মজা।
বড় মেয়ে ঝিলি এতক্ষণ মিলি আর রৌদ্রর কথা শুনছিলো। শেষে সে বললো আমার ভালো লাগে সকালে গাছ থেকে পাড়া টাটকা জিরেন কাঠের
রস মুড়ি কিম্বা ছোলা দিয়ে খেতে। (অসমাপ্ত)
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঝিনাইদহ সদরে মিজানুর রহমান মাসুম জয়ী
কারাগার থেকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন সামচুল আলম চৌধুরী
সাধারন সম্পাদককে হারিয়ে সিলেট দক্ষিণ সুরমায় বিজয়ী আ'লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক বদরুল
ভারতে হিন্দু জনতার সংখ্যা কমেছে ৮ শতাংশ! বাড়ছে মুসলমানদের সংখ্যা।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: নড়িয়ায় নির্বাচিত হলেন যারা
সিলেট গোলাপগঞ্জে জেলা আ'লীগ নেতা এলিমকে হারাতে পারলেন না ব্রাজিল যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক উজ্জ্বল
অপার সম্ভাবনাময় দেশের বৃহত্তম বীজ উৎপাদন খামার
আ’লীগে-আ’লীগে টক্কর, সিলেট সদর উপজেলায় জয় পেলেন সুজাত
রাশিয়ায় এক সেনাসহ দুই মার্কিন নাগরিক গ্রেপ্তার
ধানকাটা-ঝড়বৃষ্টির কারণে ভোটার উপস্থিতি কম: ওবায়দুল কাদের
স্বামীর হাত-পা বেঁধে যৌনাঙ্গে ছ্যাঁকা-মারধর, স্ত্রী গ্রেপ্তার
বিজিবির অভিযানে এপ্রিলে ১৩৪ কোটি ৩৬ লক্ষাধিক টাকার চোরাচালান জব্দ
বেইলি রোড অগ্নিকান্ড: কাচ্চি ভাই’ রেস্তোরাঁর মালিক গ্রেপ্তার
বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেও চ্যাম্পিয়নস লীগ অধরাই রয়ে গেল পিএসজির
বগুড়ায় তিন উপজেলায় ভোটার বিহিন উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত
প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জ্ঞান অর্জন করতে হবে: রাজউকের চেয়ারম্যান
ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়ার আহ্বান
ইসলাম বিরোধী শিক্ষা কারিকুলাম মেনে নেয়া হবে না পীর সাহেব চরমোনাই
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আরও একটি দেশের স্বীকৃতি
তেঁতুলিয়া সীমান্তে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ