শীতে বাড়ে অ্যাজমা
২২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৫ এএম
অ্যাজমা খুবই পরিচিত একটি রোগ, এটি ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী অসুখগুলোর একটি। আমাদের দেশে অনেকেই এটাকে হাঁপানী বলে জানি। শীতের ঠান্ডা, ধুলিবালি আর ভাইরাসের আধিক্যে এটা বাড়তে দেখা যায়। এক ধরণের প্রদাহ শ্বাসনালীকে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের প্রতি অতিসংবেদনশীল করে তোলে। শ্বাসনালীর এই অতিসংবেদনশীলতাই অ্যাজমা উপসর্গের কারণ। এই অসুখে মূলত শ্বাসকষ্ট হয়। শ্বাসনালীর মাংশপেশী সংকুচিত হয়ে যাওয়া, ভেতরের পর্দা ফুলে যাওয়া ও অতিরিক্ত শ্লেষ্মা তৈরী হওয়াই রোগীর উপসর্গের জন্য দায়ী। একজন মানুষ জীবনের যেকোন সময় অ্যাজমায় আক্রান্ত হতে পারেন। বিগত কয়েক দশকে সারা বিশ্ব জুড়ে অ্যাজমার ব্যাপকতা উল্লেখ্যযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে বিশ্ব জুড়ে তিনশত উনচল্লিশ মিলিয়ন মানুষ অ্যাজমায় আক্রান্ত। অ্যাজমার প্রকৃত কারণ অজানা। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন জন্মগত ও পরিবেশগত- দুটো উপাদানই দায়ী। কোন একজনের এলার্জিজনিত সমস্যা থাকলে তার অ্যাজমা হবার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ অ্যাজমা ও এলার্জিকে একে অন্যের স¤পূরক বলা যায়। সাধারণত অ্যাজমা আক্রান্ত রোগীর পরিবারের অন্য সদস্যদেরও একই ধরনের উপসর্গ থাকে। তবে অ্যাজমা এলার্জীজনিত এবং এলার্জীবহিভূর্ত দুই ধরনেরই হতে পারে। বেশীরভাগ রোগীদের অ্যাজমা এলার্জীজনিত। চারপাশের বিভিন্ন এলার্জিক উপাদান এতে প্রভাব ফেলে যেমন আরশোলা, হাউজডাস্ট মাইট (এক ধরণের কীট), গৃহপালিত পশুর লোম ও খুশকি, ফুলের পরাগ, ছত্রাক, ধূলোবালি, ধোঁয়া (সিগারেট, লাকড়ির চুলা, কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া)। কিছু খাবার এবং এসবে ব্যবহৃত উপাদানসমূহ, কিছুকিছু ঔষুধ যেমন এসপিরিন, ব্যাথানাশক ওষুধ ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত বিটাব্লকার ওষুধ ব্যবহারে অ্যাজমা আক্রান্ত রোগীদের অ্যাজমার উপসর্গ বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রচন্ড মানসিক চাপেও অ্যাজমার উপসর্গ বাড়তে পারে। প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরোপুরি তৈরি হবার আগেই শিশু বয়সে বারবার শ্বাসনালীর সংক্রমণে আক্রান্ত হলে পরবর্তীতে অ্যাজমার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্যাভ্যাস এবং ধুমপান বাচ্চার অ্যাজমা হবার জন্য দায়ী।
অ্যাজমার সাধারণ উপসর্গগুলো হচ্ছে শ্বাসকষ্ট, কাশি, শ্বাসের সাথে বুকে একধরণের শব্দ তৈরি হওয়া, বুকে চাপ বোধ করা- যেগুলো সাধারণত শেষ রাতে বা ভোরের দিকে বাড়ে। তবে সব রোগীর উপসর্গ একরকমের হয় না। অনেকে শুধু দীর্ঘমেয়াদী শুকনো কাশিতে ভুগতে পারেন। একে কাফ ভ্যারিয়েন্ট অ্যাজমা বলা হয়ে থাকে। আমেরিকান অ্যাজমা ও এলার্জী অ্যাসোসিয়েশনের মতে শতকরা ৯৩ ভাগ রোগীর অ্যাজমার উপসর্গ বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, ব্যায়াম করার সময় বেড়ে যেতে পারে। অনেক সময় সাধারণ মানুষেরও এমন হতে পারে। একে এখনকার দিনে ব্যায়ামজনিত শ্বাসনালীর সংকোচন বলা হয়। আগেকার দিনে একে ব্যায়ামজনিত অ্যাজমা বলা হত।
অ্যাজমার উপসর্গ হঠাৎ বেড়ে গেলে এবং রোগীকে দ্রুত চিকিৎসার অধীনে না নিলে তা রোগীর জন্য প্রাণঘাতীও হতে পারে। এই সঙ্কটাপন্ন অবস্থার উপসর্গগুলো হচ্ছে - প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট, বুকের পিঞ্জর শ্বাসের সাথে ভেতরে ঢুকে যাওয়া, বাইরে থেকে বুকে এক ধরনের শব্দ শুনতে পাওয়া, অক্সিজেনের অভাবে রোগীর নীল হয়ে যাওয়া (বিশেষ করে ঠোঁট, নখ, হাতের তালু), ঘাম হওয়া। এমতাবস্থায় রোগী মৃত্যু ভয়ে ভীত হয়ে যেতে পারেন। এমন হলে রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেওয়া এবং পরবর্তীতে বক্ষব্যাধি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরী। চিকিৎসক সাধারণত রোগীর বিস্তারিত অসুখের বিবরণ, পারিবারিক ইতিহাস ও রোগীর শারীরিক পরীক্ষা করেই অ্যাজমা আছে কিনা তা বলে দিতে পারেন। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হতে পারে।
উপসর্গের অন্য কোন কারণ আছে কিনা তা দেখার জন্য। ¯পাইরোমেট্রি শ্বাসনালীর সংকোচন প্রসারণ দেখার জন্য আদর্শ পরীক্ষা। রোগী নিজেও পিক-ফ্লো মিটার ব্যবহার করে বাড়ীতেই নিজের অসুখের অবস্থার পরিবর্তন পর্যবেক্ষন করতে পারেন।
অ্যাজমা নিরাময়যোগ্য রোগ নয় তবে নিয়মিত ওষুধ সেবনে উপসর্গবিহীন থাকা সম্ভব। কিছু ওষুধ তাৎক্ষনিক উপসর্গ নিরাময় করে এবং কিছু ওষুধ দীর্ঘমেয়াদে কাজ করে উপসর্গের বেড়ে যাওয়া প্রতিহত করে। অ্যাজমার ওষুধগুলো ইনহেলারের সাহায্যে ব্যবহার করা উচিত। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হয়। ইনহেলার ব্যবহার করলে পুরো ওষুধটাই ফুসফুসে গিয়ে কাজ করতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত উপসর্গে নেবুলাইজারের মাধ্যমে ওষুধ নেয়া যেতে পারে।
অ্যাজমা রোগীদের জন্য করনীয়
নিয়মিত ওষুধ সেবন করা।
যে সকল খাবার বা উপাদান এলার্জী বাড়ায় সেগুলো পরিহার করা।
ধূমপান পরিহার করা।
খুব ঠান্ডা আবহাওয়ায় ব্যায়াম না করা।
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করা।
ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা, কারণ স্থুলতা অ্যাজমার উপসর্গ বাড়ায়।
উপসর্গ পর্যবেক্ষন ও নিয়মিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
ডাঃ রওশন আরা খানম
বক্ষব্যাধি ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
ইউনাইটেড হাসপাতাল, ঢাকা।
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সউদীতে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু
অবসর ভাতা পাচ্ছেন না সৈয়দপুর রেলওয়ের কারখানার ৩ হাজার ৮৭৩ অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী
যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না-করা
কেএনএফের নারী শাখার প্রধান সমন্বয়ক আকিম বম
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫১ কোটির ড্রোন ভূপাতিত করল হুথিরা
নির্বাচনী মিছিলে প্রতিপক্ষের হামলা, মুন্সীগঞ্জে আহত ১০
তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ
গাজায় তিন জিম্মির মরদেহ উদ্ধার ইসরায়েলের
গাঁজা খেলে আর জেল নয়, আনা হচ্ছে বড় আইন
অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে শিক্ষক পেটানো ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার
নির্বাচনী প্রচারণার মাঠের পাশে ককটেল বিস্ফোরণ, আটক ৫
চীনের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরীর প্রথম সমুদ্রযাত্রার সব পরীক্ষা সম্পন্ন
হামাস গাজায় দীর্ঘমেয়াদে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত
লালমাই পাহাড়ের কান্না কেউ শোনে না অবাধে মাটি কেটে নিচ্ছে অসাধু ব্যক্তিরা
বিটিভির অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত ফোনালাপ ফাঁস, কর্মী বরখাস্ত
জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার
নারী কর্মকর্তার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত সেই এসপি মোক্তারকে শাস্তি
জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে তার সঙ্গেই আছি : আইনমন্ত্রী
আবারও চার বিভাগে তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা
বদলে যাওয়া বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনা : ওবায়দুল কাদের