ব্রুকসিজম বা দাঁত কাটা

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম

এটি আর কোন গোপন কথা নয় যে আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় মানসিক চাপ সবার নিত্যসঙ্গী। দিনের বেলায় অনেকেই যখন রাগান্বিত থাকেন বা দুঃশ্চিন্তাগ্রন্থ থাকেন তখন অবচেতন মনে দাঁত কামড়ান, ঠোঁট কামড়ান। ডাক্তারী ভাষায় দাঁত কাটা বা কামড়ানোকে ব্রুকসিজম বলা হয়। ঘুমের মধ্যেও অনেকেরই দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস রয়েছে যা স্লিপ ব্রুকসিজম নামে পরিচিত। শিশুরা ঘুমের মধ্যে দাঁত কামড়ালে অনেক অভিভাবকই চিকিৎসকের নিকট এসে বলেন শিশুর পেটে কৃমি হয়েছে। আবার অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াও শিশুদের কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করিয়ে থাকেন। আসলে দাঁত কামড়ানোর সাথে পেটে কৃমি থাকার কোন ধরণের সম্পর্কই নেই। তবে আমাদের দেশে স্বাস্থ্য সচেতনতা কম বলে শিশুদের বা বড়দের এমনিতেই কৃমি থাকতে পারে। দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস খুব অল্প হলে এটি তেমন কোন ক্ষতি করে না। কিন্তু যদি অনবরত বা মাত্রাতিরিক্ত দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস থাকে তাহলে এ অবস্থা থেকে চোয়ালের সমস্যা, মাথা ব্যথা, দাঁতের ক্ষয় এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। স্লিপ ব্রুকসিজম যাদের রয়েছে, সমস্যা না হওয়া পর্যন্ত তারা এ সম্পর্কে অনেক সময়ই অবগত হন না। তাই পাশে থাকা প্রিয়জনদের একে অন্যের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি।
ব্রুকসিজম বা দাঁত কামড়ানোর লক্ষণসমূহ:

* দাঁতে দাঁতে ঘর্ষণ অনেক সময় পাশে ঘুমিয়ে থাকা ব্যক্তিকে পর্যন্ত জাগিয়ে দিতে পারে।
* দাঁতের উপরিভাগ ক্ষয় হয়ে সমান হয়ে যাওয়া।
* দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে যাওয়া।
* দাঁতের সংবেদনশীলতা বেড়ে যাওয়া।
* চোয়ালের ব্যথা অথবা চোয়ালের মাংশপেশী শক্ত অনুভব করা।
* কানে ব্যাথ্যাঃ- ক্রমাগত চোয়ালের মাংশপেশীর সংকোচনের কারণে কানে ব্যথা হতে পারে। তার মানে এই নয় যে, কানের সমস্যার কারণে এমন হয়েছে।
* সকাল বেলা হালকা মাথা ব্যথা হতে পারে।
* মুখেও ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ব্রুকসিজম এর কারণসমূহ:
যদি প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে উপরের এবং নীচের চোয়ালের অবস্থান যথাযথ না হয়।
প্রায়ই দেখা যায় মানসিক চাপ ব্রুকসিজম সৃষ্টি করে। যেমন ক) দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, ভীতি। খ) অবদমিত রাগ ও হতাশা। গ) অতি প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব, আক্রমণাত্মক, অতিচঞ্চল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এমন হতে পারে।

শিশুদের ক্ষেত্রে ব্রুকসিজম বা দাঁত কামড়ানো গ্রোথ এবং ডেভেলপমেন্ট এর সাথে সংযুক্ত থাকতে পারে।
গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন শিশুদের ক্ষেত্রে দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস হয়ে থাকে এজন্যই যে তাদের উপরের এবং নীচের দাঁত সব সময় সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না।
অন্যরা মনে করেন শিশুরা দাঁত কামড়ায় ভয়, রাগ, এলার্জিজনিত সমস্যা থেকে।
এছাড়া কান বা দাঁতের ব্যথা থেকেও শিশুরা এমনটি করতে পারে।

শতকরা ৩০ ভাগ শিশুদের ৫ থেকে ৬ বছর বয়সের মধ্যে ব্রুকসিজম দেখা দিয়ে থাকে। এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে যাদের সেরিব্রাল পালসি এবং মারাত্মক মানসিক চাপ বা দাঁতের সমস্যার কারণে সৃষ্টি হয়। পারকিনসনস্ রোগের জটিলতা হিসাবেও ব্রুকসিজম দেখা যেতে পারে।
বিষণœতানাশক ঔষধসহ মানসিক রোগের অন্যান্য ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবেও কমক্ষেত্রে ব্রুকসিজম দেখা যেতে পারে।
ক্যাফেইন, টোবাকো, কোকেন, এম্ফিটামিন বা ইয়াবা ট্যাবলেট সেবনের কারণে ব্রুকসিজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

¯œায়ুর প্রদাহের কারণে ব্রুকসিজম হতে পারে।
ব্রুকসিজম হলে আপনার উপরের পাটি ও নিচের পাটির যে কোন দাঁত বাধানোর ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তার মানে এই নয় যে, আপনার দাঁত বাধানো যাবে না। এছাড়া আপনার ব্রুকসিজমের অভ্যাস থাকলে এবং তা পরিত্যাগ করতে না পারলে দাঁতের ইমপ্ল্যান্টের ক্ষেত্রে অবশ্যই সমস্যা দেখা দিবে। তাই এই বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে। ব্রুকসিজম থাকলে এবং পাশাপাশি আপনার দাঁত যদি যথাস্থানে না উঠে থাকে তবে সেক্ষেত্রে যথাযথ কামড় বা বাইট না পড়ার কারনে আপনার মুখের অভ্যন্তরে মিউকাস মেমব্রেনে আঘাত লেগে মুখের আলসার হতে পারে। এক্ষেত্রে খুব সতর্কতার সাথে সমস্যা সমাধান করতে হবে। মুখের আলসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক সময় টুথ গ্রাইন্ডিং বা দাঁত সামান্য ঘষে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা হয়। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, আদৌ টুথ গ্রাইন্ডিং এর প্রয়োজন আছে কি না? বা বিকল্প কোনো উপায়ে সমস্যা সমাধান করা যায় কি না? তাই এসব ক্ষেত্রে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে সময় নিয়ে রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস জেনে রোগ নির্ণয় করে তবেই একটি সঠিক সিদ্ধান্তে এসে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

ব্রুকসিজমের চিকিৎসা: শিশুদের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৬ বছর বয়সে ব্রুকসিজম বা দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস দেখা যেতে পারে। সাধারণত ১০ বছর বয়সের মধ্যে ভাল হযে যায়। তবে অন্য কোন রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সবার জন্য অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুঃশ্চিন্তা এড়িয়ে চলতে হবে। নেশাজাতীয় দ্রব্যাদি গ্রহণে বিরত থাকতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে প্র¯্রাবের বেগ থাকলে প্র¯্রাব করে ঘুমোতে যেতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। রোগীর অবস্থাভেদে মানষিক চাপ মুক্ত করার জন্য কিছু বিষণœতানাশক অথবা ঘুমের ঔষধ প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে একটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে, সব রোগীর জন্য একই ঔষধ প্রয়োগ করা যায় না, যদিও রোগের ধরন একই। তাই চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া চিকিৎসা গ্রহণ করা যাবে না। নিজ থেকে কোনো ঘুমের ঔষধ সেবন করবেন না।

ডা. মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল: ০১৮১৭-৫২১৮৯৭
ই-মেইল: [email protected].


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুবাই ফেরত যাত্রীর কাছে মিলল সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ!

দুবাই ফেরত যাত্রীর কাছে মিলল সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ!

অসহায় শিশুর জীবন বাঁচাতে যা করলেন সোনু সোদ

অসহায় শিশুর জীবন বাঁচাতে যা করলেন সোনু সোদ

সউদীতে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

সউদীতে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

অবসর ভাতা পাচ্ছেন না সৈয়দপুর রেলওয়ের কারখানার ৩ হাজার ৮৭৩ অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী

অবসর ভাতা পাচ্ছেন না সৈয়দপুর রেলওয়ের কারখানার ৩ হাজার ৮৭৩ অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না-করা

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না-করা

কেএনএফের নারী শাখার প্রধান সমন্বয়ক আকিম বম

কেএনএফের নারী শাখার প্রধান সমন্বয়ক আকিম বম

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫১ কোটির ড্রোন ভূপাতিত করল হুথিরা

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫১ কোটির ড্রোন ভূপাতিত করল হুথিরা

নির্বাচনী মিছিলে প্রতিপক্ষের হামলা, মুন্সীগঞ্জে আহত ১০

নির্বাচনী মিছিলে প্রতিপক্ষের হামলা, মুন্সীগঞ্জে আহত ১০

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

গাজায় তিন জিম্মির মরদেহ উদ্ধার ইসরায়েলের

গাজায় তিন জিম্মির মরদেহ উদ্ধার ইসরায়েলের

গাঁজা খেলে আর জেল নয়, আনা হচ্ছে বড় আইন

গাঁজা খেলে আর জেল নয়, আনা হচ্ছে বড় আইন

অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে শিক্ষক পেটানো ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার

অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে শিক্ষক পেটানো ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার

নির্বাচনী প্রচারণার মাঠের পাশে ককটেল বিস্ফোরণ, আটক ৫

নির্বাচনী প্রচারণার মাঠের পাশে ককটেল বিস্ফোরণ, আটক ৫

চীনের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরীর প্রথম সমুদ্রযাত্রার সব পরীক্ষা সম্পন্ন

চীনের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরীর প্রথম সমুদ্রযাত্রার সব পরীক্ষা সম্পন্ন

হামাস গাজায় দীর্ঘমেয়াদে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত

হামাস গাজায় দীর্ঘমেয়াদে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত

লালমাই পাহাড়ের কান্না কেউ শোনে না অবাধে মাটি কেটে নিচ্ছে অসাধু ব্যক্তিরা

লালমাই পাহাড়ের কান্না কেউ শোনে না অবাধে মাটি কেটে নিচ্ছে অসাধু ব্যক্তিরা

বিটিভির অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত ফোনালাপ ফাঁস, কর্মী বরখাস্ত

বিটিভির অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত ফোনালাপ ফাঁস, কর্মী বরখাস্ত

জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার

জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার

নারী কর্মকর্তার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত সেই এসপি মোক্তারকে শাস্তি

নারী কর্মকর্তার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত সেই এসপি মোক্তারকে শাস্তি

জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে তার সঙ্গেই আছি : আইনমন্ত্রী

জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে তার সঙ্গেই আছি : আইনমন্ত্রী