ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মাসিকের আগে সমস্যা

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১০ এএম

মহিলাদের মাসিক পূর্ববর্তী সমস্যাকে বলা হয় প্রি ম্যানস্টুয়াল সিনড্রোম বা পিএমএস। এ সমস্যায় অনেক নারীই ভুগে থাকেন। যদিও এর মূল কারণ এখনও অজানা। প্রজননক্ষম অবস্থায় নারীরা শতকরা ৪০ ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে অবস্থা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তবে বলা যায়, শরীরে হরমোনের ওঠানামাই এ সমস্যার জন্য দায়ী। মারাত্মক অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজ শরীরের প্রেজেস্টেরনের প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিচ্ছে এই সমস্যা। অনেকে পিএমএসকে নারীর সাধারণ শরীরবৃত্তিয় সমস্যা বলেই মনে করেন। জীবন ধারা এবং সামাজিক চাপ এ সমস্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। যারা সামাজিক ও মানসিক চাপে বেশি ভোগে, লবণসমৃদ্ধ খাবার বেশি খায়, নিয়মিত ব্যায়াম করে না তারা এ সমস্যায় সাধারণত বেশি ভোগে। ঋতুচক্র চলাকালীন প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তত সাতদিন পর্যন্ত এ উপসর্গগুলো মোটেও থাকে না। এরপর সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে শুরু হয়। পরবর্তী মাসিকের এক সপ্তাহ বা দুই সপÍাহ আগে এটা শুরু হয় পেটভরা, বড় ঢেকুর আসা, মাথা ব্যথা বা মাথা ধরা, মুড সুইং এই রোগের প্রাথমিক সমস্যা। তবে মাসিক শুরু হওয়ার সাথে সাথেই এই সমাস্যা ধীরে ধীরে এক থেকে তিন দিনের মধ্যেই চলে যায়। একে মেডিকেল সমস্যা হিসেবে তখনই চিহ্নিত করা হয় যখন পরপর তিনটি মাসিক চক্রেই এ সমস্যা হয়ে থাকে এবং সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক জটিলতাও থাকে।

এ রোগের উপসর্গ একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম। অনেকে ব্যথায় কষ্ট পায়, কারো ক্ষেত্রে অল্প-স্বল্প কিছু সমস্যা হলেও সাধারণত জীবন-যাত্রায় প্রভাব ফেলে না। এতে ১৫০ বা তারও অধিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
তবে সচরাচর দেখা দেয়া উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে:
স্তনে ব্যথা, মাথা ব্যথা, পেটে অস্বস্তিবোধ বা তলপেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া, সবসময় বিরক্তি ভাব, অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ করা, কোমরে ব্যথা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, ব্রনের আক্রমণ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া, বিষণœœতা বোধ, কোষ্ঠকাঠিণ্য হওয়া, শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া, সন্দেহ প্রবণতা, ভয়ভীতি বেড়ে যাওয়া, কান্না কান্না ভাব বা ইমোশনাল হয়ে যাওয়া, রুচি কমে যাওয়া, হাত পা ফুলে যাওয়া, কোন কিছুতে মনোযোগ দিতে সমস্যা শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে অসমর্থ্য সহ আক্রমনাত্মক মনোভাব ফুটে উঠতে পারে।
এমন সমস্যা ঋতু¯্রাব শুরু হওয়ার সাথে সাথে আস্তে আস্তে চলে যায়। পিএমএস সম্পর্কে সুনিশ্চিত হতে অন্তত: তিনমাস এসব উপসর্গের হিসেব রাখতে হবে, কখন হচ্ছে, কখন ভাল হচ্ছে তাও থাকতে হবে নজরে। এসব বিচার বিশ্লেষণে চিকিৎসক রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করবেন। সাধারণত মাসিক ঋতুচক্রের মধ্যসপ্তাহে হলে ধরে নেয়া যায় আপনি এ সমস্যায় আক্রান্ত। ম্যাগসেনিয়াম, মেঙ্গানিজ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ভিটামিন ই এবং লিনোলেইক এসিডের ঘাটতি হলে এ সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। পিএমএস স্বাভাবিক জীবন-যাত্রায় প্রভাব ফেললে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মতে চলতে হবে।

এ সমস্যায় নিয়মিত শরীরচর্চা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অহেতুক বিষণœতায় ভুগবেন না। জিজ্ঞেস করে দেখুন আপনার কোন সহকর্মী অথবা বান্ধবী ও হয়ত একই সমস্যায় ভুগছে। মাথা ব্যথার জন্য সাধারণ ব্যথার ওষুধ খেতে পারেন। প্রজেস্টোজেন পিল নিয়মিত খেয়েও অনেকে ভাল থাকে। কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট খাওয়া শুরু করুন। দই ও সবুজ শাকসবজি বেশী খান-যেখানে ক্যালসিয়াম একটু বেশী থাকে। কফি খাওয়া কমিয়ে দিবেন। ক্যাফেইন পিএমএস’র উপসর্গকে উসতে দিতে পারে। প্রচুর পানি খাবেন। পুষ্টিকর খাবার খাবেন। ফাস্ট ফুড ও ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার যতোটা সম্ভব কম খাবেন, লবণ ও চিনি খাওয়া কমিয়ে দিবেন, সবুজ শাক-সবজি বেশি খাবেন, ফল খাবেন প্রয়োজন মতো। অনেকে কলা খায় ভিটামিন বি৬ ও পটাশিয়াম বাড়াতে, ফলে এই লক্ষণগুলি হতে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তিন ঘণ্টার বেশি উপোষ থাকবেন না। ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিময়ামসমৃদ্ধ খাবার বেশি খাবেন।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, শর্করাসমৃদ্ধ পানিয় পিএসএস’র উপসর্গকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। গবেষকরা বলছেন, এ নির্দিষ্ট পানিয় দিনে দু’বার করে পাঁচদিন খেলে ঋতুচক্রের আগে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। সেরোটোনিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে শরীরের উপর। এই পানিয়তে আছে শর্করা, ভিটামিন এবং মিনারেল। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ গায়নেকোলজী এন্ড অবস্ট্যাট্রিকসএ নিবন্ধনিতে আরো বলা হয়েছে এ পানিয় পানে পরীক্ষায় উপকারের নির্দশন পাওয়া গেছে। সামান্য থেকে মোটামুটি মাত্রায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এ পানিয় বিশেষ উপকারী।
পরিশেষে বলা যায় ঘাবড়ে না গিয়ে নিজেরমত করে জানতে হবে কিসে তার আরাম হয়, আর কখন কোন ওষুধ তাকে আরাম দেয় সেটা ডাক্তারের পরামর্শে নেয়া যেতে পারে। আগের ওষুধে কাজ না হলে অবশ্যই ডাক্তারের উপদেশ মেনে তা পরিবর্তণ করা যেতে পারে।

ডা. তানিয়া নাসরীন
ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, মিরপুর, ঢাকা।


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কাঁচকলার উপকারিতা
অপরিণত নবজাতকরাও ফিরবে স্বাভাবিক জীবনে
বিমান ভ্রমণে জেট ল্যাগ
চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার
ডায়াবেটিস রোগীর হৃদরোগের ঝুঁকি
আরও

আরও পড়ুন

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি

‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’

‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

মুসলিম চিকিৎসক

মুসলিম চিকিৎসক

শীর্ষে দিল্লি

শীর্ষে দিল্লি

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা