প্যারিসকে প্রবল উত্তাপ থেকে রক্ষার উদ্যোগ
০৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৩ এএম | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৩ এএম
জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা ও অন্যান্য কারণে বিশেষ করে শহরাঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। প্যারিসের পৌর কর্তৃপক্ষ গ্রীষ্মকালে প্রবল উত্তাপ থেকে মানুষ ও ভবনগুলিকে রক্ষা করতে একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফল অনুযায়ী, ১৮৮৫ সাল থেকে প্যারিসের গড় তাপমাত্রা দুই দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। সে তুলনায় ফ্রান্সের বাকি অংশে সেই বৃদ্ধির হার ছিল এক দশমিক সাত ডিগ্রি। তাই পৌরসভা এখন শহরটিকে শীতল করার লক্ষ্যে কোটি কোটি ইউরো বিনিয়োগ করছে।
প্যারিসের ডেপুটি মেয়র ডান লেয়ার বলেন, ‘‘এই ঐতিহাসিক শহর নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনভাবে নির্মিত শহরগুলির একটি। সে কারণে শহরটি আসলে চুলার মতো। আরো বড় এলাকা জুড়ে ছড়ানো বসতির তুলনায় অনেক বেশি গরম। সেন্ট মার্টিন খাল ইতোমধ্যেই সাঁতারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা সেন নদীর তীরে তিনটি জায়গা স্নানের জন্য খোলার পরিকল্পনা করছি। কংক্রিটের বদলে মাটি ব্যবহারের একটা পরিকল্পনা রয়েছে। সেই মাটি বৃষ্টির পানি টেনে নিয়ে বাতাস শীতল করতে পারবে। আমরা সংস্কারের মাধ্যমে পাবলিক ভবনগুলিও ইনসুলেট করছি।''
শহরের অনেক চত্বর ইতোমধ্যেই সবুজ গাছপালায় ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেমন প্লাস দ্য লা নাসিওঁ। প্যারিসের দক্ষিণের এই রাউন্ডঅ্যাবাউটটিকে ‘আর্বান ফরেস্ট'-এ রূপান্তরিত করা হচ্ছে। কারণ গাছপালাও শহরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে সেন নদী শুধু খোলা আকাশের নীচে সুইমিং পুল হয়ে উঠছে না, এখনই সেটি শহরের উত্তাপ কমাতেও অবদান রাখছে।
সেই পরিবেশবান্ধব কুলিং সিস্টেমের নাম ‘ফ্রেশ্যোর দ্য পারি'। মাটির নীচে পানির পাইপের সেই নেটওয়ার্ক শহরজুড়ে ৭০০-রও বেশি ভবনের ওয়াটার টিউব সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত। সেই প্রণালীর অন্যতম প্রধান প্লান্টে গেলে বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। প্রণালীর মহাসচিব রাফায়েল নাইরাল বলেন, ‘‘এই পাম্পগুলি বরফের মতো শীতল পানি সিস্টেমে ঠেলে দেয়। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় পানি শীতল করার রেফ্রিজারেশন ইউনিটগুলি গরম হয়ে ওঠে। সেই উত্তাপ সেন নদীতে বিলীন হয়ে যায়। নদীর পানি দ্বিতীয় এক সার্কিটের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। প্রচলিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ইউনিটের তুলনায় এই প্রণালী চালাতে অর্ধেক পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়।''
তার উপর সেই বিদ্যুৎ সম্পূর্ণভাবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি থেকে আসে। সৌর প্যানেলই মূলত সেই বিদ্যুতের উৎস। বর্তমানে সেই নেটওয়ার্কে ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপ ছড়িয়ে রয়েছে। আগামী দুই দশকে কোম্পানি পাইপের দৈর্ঘ্য তিন গুণ বাড়াতে চায়।
‘ফ্রেশ্যোর দ্য পারি' ইতোমধ্যেই লুভ্র মিউজিয়াম ও প্যারিস সিটি হলের মতো জায়গাগুলিকে শীতল রাখতে সাহায্য করছে। কিন্তু ফ্রান্সের এক বিশেষজ্ঞের মতে, নদীর পানি ব্যবহার করে চালানো এয়ার কন্ডিশানিং সিস্টেম অন্তহীনভাবে সম্প্রসারণ করা সম্ভব নয়। এফিকাসিটি প্রকল্পের ম্যানেজার মর্গান কলোমব্যার বলেন, ‘‘ফ্রেশ্যোর দ্য পারি-র মতো প্রণালী নদীর পানি উষ্ণ করে তোলে। স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষার স্বার্থে একটা নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত সেটা নিরাপদ। অর্থাৎ এমন সিস্টেম একটা গোটা শহর শীতল করতে পারে না। কোন ভবন এভাবে শীতল রাখতে চাই, আমাদের সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।''
ভবিষ্যতে ‘ফ্রেশ্যোর দ্য পারি' স্কুলগুলির সঙ্গেও সংযুক্ত করা হবে। কয়েকটি স্কুল ইতোমধ্যেই আরো সবুজ সড়ক ও পথচারীদের জন্য নির্দিষ্ট এলাকার সুবিধা ভোগ করছে। সেইসঙ্গে গোটা শহর জুড়ে রাজপথে গাড়ির অংশ কমিয়ে সাইকেলের ট্র্যাক আরো বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু বাইসাইকেলের এমন রমরমার ফলে সবাই মোটেই খুশি নয়। এর ফলে ব্যস্ত এলাকায় যানজট বাড়ছে।
অন্যান্য পরিকল্পনাকে ঘিরে বিতর্কের মাত্রা কম। যেমন নতুন এক ইনস্টলেশন, যা প্যারিসের উত্তরে স্বল্প আয়ের পাড়াগুলিতে ছায়া দিয়ে মাথার উপর কড়া রোদ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। প্যারিসের ডেপুটি মেয়র ডান লেয়ার বলেন, ‘‘সেই ছাদের নীচে দশ ডিগ্রি পর্যন্ত শীতল হতে পারে। আমরা এখানে নতুন এক স্প্রে ফাউন্টেনও বসিয়েছি।'' প্যারিসে গ্রীষ্মকালে উত্তাপ বাড়লে এমন সব পদক্ষেপ ভবিষ্যতে আরো জরুরি হয়ে উঠবে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নতুন কোচ আমোরি
কন্যার নাম প্রকাশ করলেন রণবীর-দীপিকা দম্পতি,দিয়েছেন মিষ্টি ছবি
তুরস্কে বিজয়ী বাংলাদেশের হাফেজ মুয়াজকে অভিনন্দন জানালেন পীর সাহেব চরমোনাই
সিলেট মহানগর ‘বৈষম্য বিরোধী হকার ঐক্য পরিষদ’র ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন
শেরপুরে তারে জড়িয়ে বন্য হাতির মৃত্যু
কাঁচা সড়কে জনদুর্ভোগ
দেরি করে ভাত দেওয়ায় হত্যা
গ্রামে প্রবেশের সড়ক নেই
বন্য হাতি হামলা
পলো বাওয়া উৎসব
গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ী হাটে ময়লার স্তূপ
কুয়াকাটায় ব্যবসা বাণিজ্যে গতি ফিরছে
গারো পাহাড়ে কলার আবাদ
সেতুর পনেরো শতাংশ কাজ করতেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ
ডেঙ্গুতে ১০ মাসে মৃত্যু ৩০০
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন এবং বাস্তবতা
স্বেচ্ছায় রক্ত ও চক্ষু দানকে উৎসাহিত করতে হবে
অনন্য চিন্তক-দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে
বিদ্যুৎ সংকট আর্থ-সামাজিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে