ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

কুরআন তিলাওয়াত ও তারাবির তিলাওয়াত আমাদের অসতর্কতা-১

Daily Inqilab মাসরূর বিন মনযূর

০২ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩২ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:০৮ পিএম

কুরআনুল কারিম আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কালাম। মহান প্রভুর মহান বার্তা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : যারা অত্যন্ত পবিত্র তারাই কেবল একে স্পর্শ করে। এটা জগৎসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। (সূরা ওয়াকেয়া : ৭৯-৮০)। আমরা কুরআন তিলাওয়াত করি। তিলাওয়াত কুরআনের বড় একটি হক। আল্লাহ তায়ালা আদেশ করেছেন : (হে নবী!) ওহির মাধ্যমে তোমার প্রতি যে কিতাব নাজিল করা হয়েছে তা তিলাওয়াত কর। (সূরা আনকাবূত : ৪৫)।

তিলাওয়াতের অনেক গুরুত্ব, অনেক ফজিলত। তিলাওয়াতকারীর লাভ ও সওয়াবকে অল্লাহ এমন ব্যবসার সাথে তুলনা করেছেন, যে ব্যবসা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে (সৎকাজে) ব্যয় করে গোপনে ও প্রাকশ্যে। তারা এমন ব্যবসায়ের আশাবাদী, যাতে কখনও লোকসান হয় না। (সূরা ফাতির : ২৯)।

মহান আল্লাহ তায়ালার কালাম তিলাওয়াতের বিশেষ নিয়ম ও আদব রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : কুরআন তিলাওয়াত কর ধীর-স্থির ভাবে, স্পষ্টরূপে। (সূরা মুজ্জাম্মিল : ৪)। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে : সুন্দর সূরের মাধ্যমে কুরআনকে (এর তিলাওয়াতকে) সৌন্দর্যম-িত কর। (সুনানে আবু দাউদ : ১৪৬৮)।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, (কিয়ামতের দিন) কুরআনের তিলাওয়াতকারী বা হাফেজকে বলা হবে : তিলাওয়াত করতে থাক এবং উপরে উঠতে থাক। ধীরে ধীরে তিলাওয়াত কর, যেভাবে ধীরে ধীরে দুনিয়াতে তিলাওয়াত করতে। তোমার অবস্থান হবে সর্বশেষ আয়াতের স্থলে যা তুমি তিলাওয়াত করতে। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১৪৬৪; জামে তিরমিজি, হাদিস-২৯১৪

এই ধীর-স্থির বা তারতীলের সাথে তিলাওয়াত কেমন হবে তা প্রিয় নবী (সা.) দেখিয়ে গেছেন, শিখিয়ে গেছেন। হযরত উম্মে সালামাহ (রা.)-কে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নামাজ ও তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তাঁর তিলাওয়াত ছিল : প্রতিটি হরফ পৃথক পৃথকভাবে উচ্চারিত। (জামে তিরমিজি : ২৯২৩)। অর্থাৎ কোনো জড়তা, অস্পষ্টতা ও তাড়াহুড়া ছিল না।

সাহাবায়ে কেরামের তিলাওয়াতের বৈশিষ্ট্যও এমনই ছিল। ধীর-স্থিরভাবে তিলাওয়াত করতেন তাঁরা। নিজেরা করতেন, অন্যদেরকেও তাগিদ দিতেন। হযরত আলকামাহ (রাহ.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর সাথে নামাজ পড়লাম দিনের শুরু থেকে ফজর পর্যন্ত। তিনি তিলাওয়াত করছিলেন তারতীলের সাথে, ধীর-স্থিরভাবে। (মুখতাছারু কিয়ামিল লাইল পৃ.-১৩১)।

আলকামাহ (রাহ.) একবার হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.)-কে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাচ্ছিলেন। তিনি সুমধুর কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন। (তো তিনি কিছুটা দ্রুত পড়ে যাচ্ছিলেন) তখন ইবনে মাসউদ রাযি. বললেন, আমার বাবা-মা তোমার ওপর কুরবান হোক! ধীর-স্থিরভাবে তারতীলের সাথে তিলাওয়াত কর। এটা কুরআনের (তিলাওয়াতের) ভূষণ। (মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল, পৃ. ১৩১)।

হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) কে এক ব্যক্তি বলল, আমি এক রাকাতেই মুফাস্সালের সূরা ক্বাফ থেকে সূরা নাস পর্যন্ত, (ফাতহুল বারী ২/২৫৮) সব সূরা পড়ে নিই। হযরত ইবনে মাসউদ রাযি তখন বললেন, সে তো কবিতা আওড়ানোর মতো পাঠ করা। অনেক মানুষ কুরআন তিলাওয়াত করে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালির নিচেও যায় না। অথচ কুরআন তিলাওয়াত তখনই (পরিপূর্ণ) উপকারী হয় যখন তা অন্তরে গিয়ে বসে। (সহিহ মুসলিম : ৮২২)।

হযরত ইবনে আবী মুলাইকা (রাহ.) বলেন, এক সফরে মক্কা থেকে মদীনায় যাওয়ার পথে আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর সাথে ছিলাম। দিনভর আমরা পথ চলতাম আর রাতে কোথাও তাবু ফেলে বিশ্রাম করতাম। হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. মাঝরাতে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং খুব ধীরে ধীরে থেমে থেমে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। এক একটি শব্দ স্পষ্ট ও পৃথক পৃথক শোনা যেত। আর নামাজে তিনি ডুকরে ডুকরে কাঁদতেন। এমনকি তাঁর হেঁচকির আওয়াজ পর্যন্ত শোনা যেত। (মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল পৃ. ১৩১)।

উলামায়ে কেরাম বলেন, কুরআন তারতীলের সাথে পড়া সুন্নত হওয়ার কয়েকটি কারণ : ১. তারতীলের সাথে তিলাওয়াত করা হলে কুরআনে বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি মনোনিবেশ করা যায়। ২. আল্লাহ তায়ালার কালামের প্রতি অধিক সম্মান প্রদর্শিত হয়। ৩. অন্তরে অধিক ক্রিয়া সৃষ্টি করে। (আলইতকান ফী উলূমিল কুরআন ১/১০৬)।

সুতরাং যারা অর্থ বুঝেন না তাদের জন্যও ধীরে তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। কারণ কুরআনের অর্থ বুঝতে না পারলেও কুরআনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও অন্তরে ক্রিয়া সৃষ্টি হওয়া তো অবশ্যই সম্ভব। উলামায়ে কেরাম এ বিষয়েও একমত যে, কুরআন তিলাওয়াত খুব দ্রুত করা ক্ষেত্রবিশেষে নাজায়েজ।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান