রমজান : মুমিন হৃদয়ের বসন্ত
২২ মার্চ ২০২৫, ০১:২৯ এএম | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ০১:২৯ এএম

প্রচণ্ড খরার পর বৃষ্টি যেমন জমিনের বুকে প্রাণস্পন্দন নিয়ে আসে তেমনি ১১ টি মাস ঘুরে রমজান আসে মুমিনের হৃদয়ের প্রাণস্পন্দন হয়ে। অবারিত রহমত, বরকত আর ক্ষমার বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয় রমজান। হাদীসে এই রমজান মাসকে মুমিনের বসন্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়, শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে ফেলা হয়, কবরের আজাব বন্ধ করে দেয়া হয়। আর এ মাস যে কারণে সবচেয়ে বেশি মাহাত্ম্যপূর্ণ তা হচ্ছে এই মাসেই মানবজাতির হেদায়েতের জন্য পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন নাযিল করা হয়েছে। এ মাসেই রয়েছে হাজার রাতের চেয়ে সর্বোত্তম রাত লাইলাতুল কদর।
এই যে এতো এতো মাহাত্ম্য নিয়ে রমজান মাস আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে আমরা কি আসলেই একে কাজে লাগাতে পারছি? নিজেদের শুধরে নেবার যে সুযোগ আমাদের কাছে এসেছে, নিজের গুনাহ গুলোকে মাফ করিয়ে নেবার যে অপার সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে সে সুযোগগুলোকে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজে লাগাতে আমরা পারছি কি? হাদীসে এসেছে- হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন- যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের বিশ্বাসে রমজানের রোজা রাখে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি রমজানের রাত্রি জাগরণ করে ইবাদতে লিপ্ত থাকে তারও পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি শবে কদরের রাতে ঈমান ও একীন সহকারে ইবাদত করে তারও সকল গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (সহীহ বুখারী -৩৮ )।
তাই রোজা রাখতে হবে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তবে কেবল না খেয়ে থাকাই রোজা নয় বরং এর সাথে সাথে সকল ধরনের গুনাহ থেকেও নিজেকে বিরত রাখতে হবে। রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা, গীবত বা পরচর্চা করা, অন্যের ওপর অন্যায় জুলুম করা হলে সে রোজা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। হাদীসে এসেছে। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (সহীহ বুখারী-১৯০৩)। এজন্য রোজাকে প্রশিক্ষণের মাসও বলা হয়েছে। এই পূর্ণ এক মাস ব্যক্তি নিজেকে সকল ধরনের পাপকাজ থেকে বিরত রাখার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে নিতে পারে। এই প্রশিক্ষণ কেবল এই এক মাসের জন্যই নয় বরং এই এক মাসের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাকি ১১ মাসও যেন সে প্রশিক্ষণ অনুযায়ী চলতে পারে তার জন্য। রমজান আমাদের কীভাবে প্রশিক্ষণ দেয়?
এছাড়াও রোজার মাধ্যমে ধৈর্যের প্রশিক্ষণ হয়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাবার খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সারাদিন না খেয়ে থাকা এবং এর পাশাপাশি সকল পাপকাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা ধৈর্যর ব্যাপার। দীর্ঘ একটি মাস এভাবে নিজেকে সব ধরনের খারাপ কাজ, সব ধরনের গুণাহের কাজ থেকে বিরত রাখার মাধ্যমে মানুষের ধৈর্যের প্রশিক্ষণ হয়। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেন- কেবল আহারাদি থেকে বিরত থাকার নাম রোজা নয়। অশ্লীল কথাবর্তা ও অশালীন আলোচনা থেকে দূরে থাকাই আসল রোজা। অতএব হে রোজাদার! যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় বা তোমার সাথে অভদ্রতা করে তাহলে তাকে বলো: আমি রোজাদার। (ইবনে খোযায়মা-১৯৯৬)।
আর সবাই যখন ব্যক্তিগত যায়গা থেকে নিজেকে শুধরে নিতে পারবে সমাজের চিত্র তখন আপনা-আপনি বদলে যাবে। কারণ ব্যক্তি নিয়েই সমাজ আর সমাজের সেই ব্যক্তিরা যদি ঠিক হয় তাহলে সমাজও ঠিক থাকবে। তাই ব্যক্তিগত জীবন গঠন, নৈতিক মান উন্নয়ন, সমাজের উন্নয়ন এর জন্য রমজান মাস এক মোক্ষম সুযোগ। আবার এ রোজার মাধ্যমে শুধু ইহকালীন কল্যাণই লাভ হয় না বরং পরকালীন মুক্তির অন্যতম এক মাধ্যম এই রোজা। উসমান ইবনে আবিল আস রা. বর্ণনা করেন, কে বলতে শুনেছি : রোযা হল জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল, যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের ঢালের মত। (সুনানে ইবনে মাজাহ-১৬৩৯)।
রোজাদারদের জন্য কেয়ামতের দিন আলাদা দরজা থাকবে যার নাম রাইয়ান। এ দরজা দিয়ে কেবল রোজাদারগণই প্রবেশ করতে পারবে। শুধু তাই নয় রোজাদারগণ কেয়ামতের দিন সিদ্দীকিন ও শহীদগণের দলভুক্ত হবে। রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধের চাইতেও প্রিয়। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- সেই সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, রোযাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়। (মুসলিম - ১১৫১)। রোজার প্রতিদানের কথা বলতে গিয়ে রাসূল (সা.) হাদীসে কুদসীতে বলেন : প্রত্যেক ইবাদতই ইবাদতকারী ব্যক্তির জন্য, পক্ষান্তরে রোজা আমার জন্য আমি নিজেই এর প্রতিদান দিবো। (সহীহ বুখারী- হাদীস নং ১৯০৪)।
ইতিহাসের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও সংঘটিত হয়েছিলো এই রমজান মাসে। এ মাসেই ইসলামের প্রথম যুদ্ধ অর্থাৎ বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো। মক্কা বিজয়ও হয় এ রমজান মাসেই। এ মাসেই পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহ নাজিল হয়। আর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামান্বিত রাতের কথা তো আমরা সবাই জানি। সুতরাং এ মাসের মাহাত্ম্য বর্ণনা করে শেষ করার মতো নয়। রিক্ত শীতের পর বসন্ত যেমন গাছে গাছে সবুজ পাতা আর নানা রঙের ফুলের বাহার নিয়ে হাজির হয় তেমনি রমজানও মুমিনের জন্য হাজারো মাহাত্ম্য নিয়ে হাজির হয়। হাজির হয় অফুরন্ত কল্যাণ, ক্ষমা আর রহমত, বরকতের ডালা নিয়ে। আর এতে উপকৃত হয় কেবল সে ব্যাক্তি যে এ ডালা থেকে লুফে নিতে পারে এ অফুরন্ত সুযোগ।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সল্ট-কোহলির ঝড়ে অন্যরকম শুরু বেঙ্গালুরুর

চ্যাম্পিয়ন বিকেএসপি

‘বিদেশি’ আনছে ভারতও!

কর্ণফুলীতে বন্যহাতির আক্রমণে শিশুর মৃত্যু

কিশোরগঞ্জে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত

ঝিনাইদহে জমে উঠেছে ঈদের বাজার ক্রেতাদের ঝোঁক দেশি পোশাকে

সুশীল বিপ্লবীরা আ.লীগের পুনর্বাসন করতে চায় : রাশেদ খান

ধানমন্ডিতে নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীরের ৭ সদস্য রিমান্ডে

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৯০% ভোট পেয়ে বিএনপি জয়লাভ করবে : কায়কোবাদ

আপন চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে ৪ বছরের বোনকে ধর্ষণের অভিযোগ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে : মাহমুদুর রহমান মান্না

টিভিতে দেখুন

অমর একুশে হল ছাত্রদলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

বিশ্বকাপে এক পা আর্জেন্টিনার

মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ায় হাফেজ ছেলের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নামাজরত অবস্থায় বাবা নিহত

‘‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ কিংবদন্তি জর্জ ফোরম্যান আর নেই

বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে : নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী

৬ এপ্রিল ক্যাম্পে ফিরছেন সাবিনারা

আর্জেন্টিনা ম্যাচে ‘বেকার’ আলিসনও

ইউট্যাবের ইফতার মাহফিলে খালেদা জিয়ার সুস্থতার কামনা