রমজানের রোজা যেভাবে ফরজ হলো
২২ মার্চ ২০২৫, ০১:২৯ এএম | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ০১:২৯ এএম

পবিত্র কোরআনে সাওম শব্দটি এক জায়গায় (সূরা মারইয়াম, আয়াত:২৬), আর সিয়াম শব্দটি ১ জায়গায় সুরা: বাকারাহ, আয়াত- ১৮৩, ১৮৭ (দুইবার), ১৯৬ (দুইবার)। সুরা নিসা, আয়াত- ১২ সুরা মায়িদা, আয়া: ৮৯, ৯৫, সুরা মুজাদালা, আয়াত: ৪) ব্যবহার হয়েছে। বিভিনড়ব হাদিসে শব্দ দুটির প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। সাওম ও সিয়ামের মূল অক্ষর একই। ইসলামি পরিভাষায় সাওম বা সিয়াম হলো, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকা। যুগে যুগে রোজার বিধান ছিল এবং ইসলামেও এ বিধান প্রবর্তন হয়েছে।
ইসলাম-পূর্ব যুগে রোজা: ইসলাম-পূর্ব সব যুগেই রোজায় বিধান ছিল। আলী (রা.) ও হাসান বসরি (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে যে আদম (আ.)-এর যুগ থেকে শুরু করে সব উম্মতের ওপরই রোজা ফরজ ছিল। (ইজুম্মল মিশকাত, দ্বিতীয় খ-, পৃষ্ঠা-৬৫৬)। মূসা (আ.)-এর রোজা প্রসঙ্গে কোরআন মজিদে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করে, মুসার জন্য আমি ৩০ রাত নির্ধারিত করি এবং আরও ১০ দ্বারা তা পূর্ণ করি, এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত সময় ৪০ রাতে পূর্ণ হয়।’ (সুরা: আরাফ, আয়াত: ১৪২) মুসা (আ.) তাওরাত প্রাপ্তির জন্য প্রথমে ৩০ দিন, পরে আরও ১০ দিন বাড়িয়ে মোট ৪০ দিন রোজাসহ ইতিকাফ ভাবস্থায় ধ্যানমগড়ব থেকে ছিলেন।
ইহুদিদের আশুরার রোজা প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আগমন করে দেখলেন যে ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করে। তিনি তাদের এদিনের রোজার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বলল, এদিনে মুসা (আ.) ফেরাউনের ওপর বিজয় লাভ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা (মুসলমানরা) মুসা (আ.)-এর অধিক নিকটবর্তী। কাজেই তোমরাও রোজা পালন করো। (সুনান আদ-দারিমি, হাদিস। ১৭৫৯) দাউদ (আ.)-এর রোজা সম্পর্কে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আল-আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেন, তুমি কি সব সময় রোজা রাখ আর রাতভর নামাজ আদায় করে থাক? আমি বললাম, হ্যাঁ ।তিনি বলেন, এরূপ করলে তোমার চোখ বসে যাবে এবং শরীর দুর্বল হয়ে যাবে। বছরজুড়ে রোজা রাখল সে যেন রোজাই রাখল না।
আর তুমি প্রতি মাসে তিন দিন করে রোজা রাখ, তাই বছরজুড়ে রোজা রাখা বা বছরজুড়ে রোজা রাখার মতো। তিনি বলেন, আমি এর চেয়ে বেশি সামর্থ্য রাখি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাহলে তুমি দাউদ (আ.)-এর মত রোজা রাখ। তিনি একদিন রোজা রাখতেন আর একদিন রোজা ছেড়ে দিতেন। তিনি শত্রুর সম্মুখীন হলে পালায়ন করতেন না। (ধূখারি, হাদিস: ১৮৭৮)। ইসলাম-পূর্ব যুগের সামগ্রিক রোজা বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা। তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ (সুরা বাকারাহ, আয়াত ১৮৩)।
ইসলামে রোজার প্রবর্তন : ইসলাম-পূর্ব সব যুগে রোজার বিধান থাকলেও সেসব শর্ত, প্রকৃতি ও ধারাবাহিকতায় ইসলামে রোজা ফরজ হয়নি। বরং ইসলামে রোজা স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। আত্মিক, নৈতিক ও চারিত্রিক কল্যাণের আঁধার। রহমত, বরকত ও মাগফিরাত তারা সমৃদ্ধ। স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যে ভরপুর মাসব্যাপী এই রোজা দ্বিতীয় হিজরিতে ফরজ করা হয়। রাসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার দ্বিতীয় বছরে শাবান মাসের শেষ দশকে রমজানের রোজা আদায়ের নির্দেশনা সংবলিত সূরা বাকারার ১৮৩-১৮৫ আয়াত অবতীর্ণ হয়। অবশ্য রমজানের রোজ ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা (১০ মহররম) এবং আইয়ামে বিচ তথ্য চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর সেসব রোজার বিধান নফলে পরিণত হয়েছে। মুত্তাজ ইবন জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাজ তিন ধাপে পরিবর্তিত হয়েছে এবং রোজাও ভিন ধাপে পরিবর্তিত হয়েছে। রোজার তিন বাগের তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। প্রথম ধাপ: রসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি মাসে তিন দিন (আইয়ামে বিজ তথা মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা) এবং আশুরার রোজা (১০ মহররম) পালন করতেন।
দ্বিতীয় ধাপ এরপর অবতীর্ণ হয় (হে মুমিনরা। তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পুরো করে নিতে হবে। অ যাদের অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য, এর পরিবর্তে ফিদয়া একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সং কাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যানকর। আর রোজা পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যানপ্রসূ যদি তোমরা জানতে)। (সুরা। বাকারাহ, আয়াত। ১৮৩-১৮৪)। তখন যে চায় রোজা রাখে আর যে চায় রোজা না রেখে এর পরিবর্তে ফিদয়া একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করে। এভাবে এক বছর যায়।
তৃতীয় ধাপ এর পর অবতীর্ণ হয়, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সল্ট-কোহলির ঝড়ে অন্যরকম শুরু বেঙ্গালুরুর

চ্যাম্পিয়ন বিকেএসপি

‘বিদেশি’ আনছে ভারতও!

কর্ণফুলীতে বন্যহাতির আক্রমণে শিশুর মৃত্যু

কিশোরগঞ্জে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত

ঝিনাইদহে জমে উঠেছে ঈদের বাজার ক্রেতাদের ঝোঁক দেশি পোশাকে

সুশীল বিপ্লবীরা আ.লীগের পুনর্বাসন করতে চায় : রাশেদ খান

ধানমন্ডিতে নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীরের ৭ সদস্য রিমান্ডে

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৯০% ভোট পেয়ে বিএনপি জয়লাভ করবে : কায়কোবাদ

আপন চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে ৪ বছরের বোনকে ধর্ষণের অভিযোগ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে : মাহমুদুর রহমান মান্না

টিভিতে দেখুন

অমর একুশে হল ছাত্রদলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

বিশ্বকাপে এক পা আর্জেন্টিনার

মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ায় হাফেজ ছেলের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নামাজরত অবস্থায় বাবা নিহত

‘‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ কিংবদন্তি জর্জ ফোরম্যান আর নেই

বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে : নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী

৬ এপ্রিল ক্যাম্পে ফিরছেন সাবিনারা

আর্জেন্টিনা ম্যাচে ‘বেকার’ আলিসনও

ইউট্যাবের ইফতার মাহফিলে খালেদা জিয়ার সুস্থতার কামনা