অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে যাকাতের ভূমিকা
২২ মার্চ ২০২৫, ০১:২৯ এএম | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ০২:২১ এএম

মাহে রমজান ইবাদতের মওসুম। এ মাসে ইসলামের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সম্পাদিত হয়। ফজিলত, বরকত ও রহমতে ভরপুর এ মাসে মুমিনের হৃদয়-মন ছাওয়াবের ফোয়ারায় জেগে উঠে। রোজা ও যাকাত দুটি পর্যায় ক্রমিক ফরজ। ২য় হিজরীতে রোজা ফরজ হওয়ার পরপরই শাওয়াল মাসে যাকাত ফরজ হয়। আর মাহে রমজানে এ দুটি আনজাম দিতে হয়। এতে অতিরিক্ত সওয়াব মিলে। অবশ্য, যে কেউ যখনই তার গচ্ছিত সম্পদের বর্ষপূর্তি হবে তখনই তার যাকাত আদায় করে দিলে কোন আপত্তি নেই। হযরত ইবনে আকীল ‘আল ওয়াজেহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘যাকাত ফরজ হয়েছে রোজা ফরজ হওয়ার পর’। আর জাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। এটি ইসলামি অর্থব্যবস্থার মূল ভিত্তি। জাকাত আদায় করা হলে মানুষের ধন-সম্পদ থেকে গরিবের হক আদায় হয়। ফলে তা হালাল ও পবিত্র হয়। আবার জাকাতের মাধ্যমে শ্রেণিবৈষম্য দূর হয়, সমাজে দারিদ্র্যের হার কমতে থাকে এবং সচ্ছল মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সে অর্থেই জাকাত অর্থ বৃদ্ধি করা।
ইসলাম একমাত্র আল্লাহর মনোনীত জীবন বিধান। এটি বিশ্ব মানবতার মহান মুক্তির সনদ। মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ,রাজনৈতিক,স্বাংস্কৃতিক,অর্থনেতিক,ধর্মীয় ও আর্ন্তজাতিক তথা - সার্বিক জীবনের সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে, মহান রাব্বুলআলামীনের ঐশি পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কোরআনুল কারীমের মধ্যে। এ শাশ্বত জীবন বিধান মানব সমাজে দ্যুাতি ছড়িয়ে পথ-পদর্শন করেছে যুগ যুগান্তরে। এর পরশে আলোকিত হয়েছে বর্বর জাহিলি সমাজ। ঘন ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত জাতি পরিণত হয়েছে গোটা বিশ্বের অনুকরণীয় আদর্শে । সে কালজ্বয়ী আদর্শ শাশ্বত জীবন বিধান ইসলাম পাঁচটি মূলভিতিত্তির উপর সুপ্রতিষ্ঠিত যথা- ১. ঈমান বা বিশ্বাস ২.সালাত বা নামাজ ৩.সাওম বা রোজা ৪. হজ ও ৫. যাকাত। আজকের আলোচ্য বিষয় হলো-ইসলামের পাঁচটি মূলভিত্তির পঞ্চম ভিত্তি যাকাত।
যাকাত শব্দের অর্থ : যাকাত শব্দের অর্থ যা পরিশুদ্ধকর, এটি হলো ইসলাম র্ধমরে পঞ্চস্তম্ভবের একটি । প্রত্যকে স্বাধীন, র্পূণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে তা গরীব-দুঃস্থদরে মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়। সাধারণত নির্ধারিত সীমার অধিক সম্পত্তি হিজরি ১ বছর ধরে থাকলে মোট সম্পত্তরি ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা ১/৪০ অংশ বিতরণ করতে হয়। ইসলামরে পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাত শুধুমাত্র র্শতসাপক্ষে সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক হয়।
জাকাতের নিসাব ও হিসাব : ক. সোনা ৭.৫ তোলা=৯৫.৭৪৮ গ্রাম (প্রায়)। খ. রুপা ৫২.৫ তোলা=৬৭০.২৪ গ্রাম (প্রায়)। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৩৯৪; আল ফিকহুল ইসলামী : ২/৬৬৯)। দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও ব্যাবসায়িক পণ্যের নিসাব নির্ধারণে সোনা-রুপা হলো পরিমাপক। এ ক্ষেত্রে ফকির-মিসকিনদের জন্য যেটি বেশি লাভজনক হবে, সেটিকে পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করাই শরিয়তের নির্দেশ। তাই মুদ্রা ও পণ্যের বেলায় বর্তমানে রুপার নিসাবই পরিমাপক হিসেবে গণ্য হবে। যার কাছে সাড়ে ৫২ তোলা সমমূল্যের দেশি-বিদেশি মুদ্রা বা ব্যাবসায়িক পণ্য মজুদ থাকবে, তার ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে। যে সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ, তার ৪০ ভাগের এক ভাগ (২.৫০ শতাংশ) জাকাত দেওয়া ফরজ। সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করে শতকরা আড়াই টাকা বা হাজারে ২৫ টাকা হারে নগদ অর্থ কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কাপড়চোপড় বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিলেও জাকাত আদায় হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৭২; সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬২৩)।
যাকাতের র্শতসমূহ : স্বাধীন, র্পূণবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে কতিপয় র্শতসাপক্ষে তার উপর যাকাত ফরয হয়ে থাকে। যেমন:-সম্পদের উপর পূর্ণ মালিকানা : সম্পদের উপর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য সম্পদের মালকিানা সুনর্দিষ্টি হওয়া আবশ্যক। র্অথাৎ সম্পদ, মালিকের অধিকারে থাকা, সম্পদের উপর অন্যের অধিকার বা মালিকানা না থাকা এবং নিজের ইচ্ছামতো সম্পদ ভোগ ও ব্যবহার করার র্পূণ অধিকার থাকা। যে সকল সম্পদের মালিকানা সুস্প শীল ষ্ট নয়, সেসকল সম্পদের কোনো যাকাত নেই, যেমন: সরকারি মালিকানাধীন সম্পদ। অনুরূপভাবে জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য ওয়াক্ফকৃত সম্পদের উপরে যাকাত র্ধায হবে না। তবে ওয়াক্ফ যদি কোনো ব্যক্তি বা গোত্ররে জন্য হয়, তবে তার উপর যাকাত দিতে হবে।
সম্পদ উৎপাদনক্ষম হওয়া: যাকাতরে জন্য সম্পদকে অবশ্যই উৎপাদনক্ষম, প্রবৃদ্ধিশীল হতে হবে, র্অথাৎ সম্পদ বৃদ্ধি পাবার যোগ্যতাই যথেষ্ট। যেমন- গরু, মহিষ, ব্যবসার মাল, নগদ র্অথ ব্যবসায়িক উদ্দশ্যেক্রীত যন্ত্রপাতি ইত্যাদি মালামাল র্বধনশীল র্অথাৎ যেসকল মালামাল নিজের প্রবৃদ্ধি সাধনে সক্ষম নয়,সেসবের উপর যাকাত র্ধায হবে না, যেমন: ব্যক্তিগত ব্যবহারের মালামাল, চলাচলের বাহন ইত্যাদি। মৌলিক প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ থাকা : সারা বছররে মৌলিক প্রয়োজন মটিয়ে যে সম্পদ উদ্ধৃত থাকবে, শুধুমাত্র তার উপরই যাকাত ফরয হবে। এ প্রসঙ্গে আল-কুরআনে উল্লেখ রয়েছে : লোকজন আপনার নিকট (মুহাম্মদের (সা:) নিকট) জানতে চায়, তারা আল্লাহর পথে কী ব্যয় করবে? বলুন, যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত। আল্লাহ এভাবেই তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট বিধান বলে দেন।’ মুহাম্মদ (সা:) এর সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন : ‘অতিরিক্ত বলতে পরিবারের ব্যয় বহনের পর যা অতিরিক্ত বা অবশষ্টি থাকে তাকে বুঝায়।’ ইউসুফ আল-কারযাভীদর মতে স্ত্রী, পুত্র, পরিজন ও পিতা-মাতা এবং নিকটাত্মীয়দের ভরণ-পোষণও মৌলিক প্রয়োজনের অর্ন্তভুক্ত।
ঋণ মুক্ততা : নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলেও ব্যক্তির ঋণমুক্ততা, যাকাত ওয়াজিব হওয়ার অন্যতম র্শত। যদি সম্পদের মালিক এত পরিমাণ ঋণগ্রস্থ হন যা, নিসাব পরিমাণ সম্পদও মিটাতে অক্ষম বা নিসাব পরিমাণ সম্পদ তার চেয়ে কম হয়, তার উপর যাকাত ফরয হবে না। ঋণ পরিশোধের পর নিসাব পরমিাণ সম্পদ থাকলেই কেবল যাকাত ওয়াজিব হয়। তবে এক্ষেতে দ্বিতীয় মতটি হলো: যে ঋণ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয় সে ঋণের ক্ষেতে যে বছর যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হয়, সে বছর সে পরিমাণ ঋণ বাদ দিয়ে বাকিটুকুর উপর যাকাত দিতে হয়। কিন্তু ঋণ বাবদ যাকাত অব্যাহতি নেওয়ার পর অবশ্যই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় সে সম্পদরে উপর যাকাত দিতে হবে। সম্পদ এক বছর আয়াত্তাধীন থাকা : নিসাব পরিমাণ স্বীয় সম্পদ ১ বছর নিজ আয়াত্তাধীন থাকা যাকাত ওয়াজিব হওয়ার র্পূবর্শত।তবে কৃষিজাত ফসল, খনিজ সম্পদ ইত্যাদির যাকাত (উশর) প্রতিবার ফসল তোলার সময়ই দিতে হবে। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানীর ক্ষেতে বছর শেষে র্বণিত সম্পদ ও দায়-দেনা অনুসারে যাকাতের পরমিাণ নির্ধারিত হবে।
বিশষে ক্ষেত্রে যাকাত : অপ্রাপ্তবয়স্ক ও পাগলের যাকাত: সম্পদের মালিক অপ্রাপ্তবয়স্ক কিংবা পাগল হলে, তার যাকাত তার আইনানুগ অভিভাবককে আদায় করতে হবে। যৌথ মালকিানাধীন সম্পত্তরি যাকাত: কোনো সম্পদে যৌথ মালিকানা থাকলে সম্পদের প্রত্যেক অংশীদার তাঁর স্ব-স্ব অংশের উপরে যাকাত দিবেন, যদি তা নিসাব পরিমাণ হয় বা তার অতিরিক্ত হয়। র্অথাৎ সম্পদের স্বীয় অংশের মূল্য অন্যান্য সম্পদের সাথে যোগ করে হিসাব করে যদি দেখা যায় তা নিসাব পরিমাণ হয়েছে বা অতিক্রম করেছে, তবে যাকাত দিতে হবে। নির্ধারিত যাকাত: যাকাত নির্ধারিত হওয়াা সত্ত্বেও যে পরিশোধের আগেই সম্পদের মালিকের মৃত্যু হলে তার উত্তরাধীকারগণ অথবা তার তত্ত্বাবধায়ক তার সম্পত্তি থেকে প্রথমে যাকাত বাবদ পাওনা ও কোনো ঋণ থাকলে তা পিেরশাধ করবনে। এরপর অবশষ্টি সম্পত্তি, উত্তরাধকিারীদের মধ্যে ব›টিত হবে।
তত্ত্ববধায়কের দায়িত্বে ন্যস্ত সম্পদের যাকাত: মালিকের পক্ষ থেকে নিয়োগকৃত আইনানুগ তত্ত্বাবধায়কের কাছে সম্পত্তি ন্যস্ত থাকলে মালিকের পক্ষে উক্ত তত্ত্বাবধায়ক সে যাকাত পিেরশাধ করবনে। বিদেশস্থ সম্পদের যাকাত: যাকাত ওয়াজিব হবার জন্য সম্পত্তি নিজ দেশে থাকা র্শত নয়। বরং সম্পত্তি অন্য েেদশ থাকলেও তার উপর যাকাত দিতে হবে। তবে উক্ত দশে ইসলামী রাষ্ট্র হলে এবং দেশের সরকার যাবতীয় সম্পদের উপর যাকাত দিলে তা আর আলাদা করে দিতে হবে না।
যাকাত বণ্টনের খাতসমূহ : পবিত্র কুরআনরে সূরা আত-তাওবা যাকাত বন্টনে আটটি খাত আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করছেন এই খাতগুলো সরাসরি কুরআন দ্বারা নির্দিষ্ট, এবং যেহতেু তা আল্লাহদর নির্দেশে, তাই এর বাইরে যাকাত বণ্টন করলে যাকাত ইসলামী শরয়িত সম্মত হয় না : ১. ফকির (যার কিছুই নেই)। ২. মিসকীন (যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই)। ৩. যাকাত আদায়ে নিযুক্ত র্কমচারী (যার অন্য জীবিকা নেই)। ৪. অমুসলিমদের মন জয় করার জন্য। ৫. ক্রীতদাস (মুক্তির উদ্দেশ্যে)। ৬. ধনী সম্পদশালী ব্যক্তি যার সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশী। ৭. (স্বদেশ ধনী হলেও বিদেশে) আল্লাহর পথে জিহাদরত ব্যক্তি। ৮. মুসাফির (যিনি ভ্রমণকালে অভাবে পতিত)। অনেকে যাকাতের র্অথে শাড়ী ক্রয় করে তা বন্টন করে থাকেন। এভাবে যাকাত আদায় হয়ে গেলেও আসলে প্রকৃতপক্ষে যাকাত গ্রহণকারীর তেমন উপকার হয়না। তাই যাকাত বন্টনের উত্তম পন্থা হলো যাকাত যাদেরকে প্রদান করা যায়, তাদেরে একজনকইে বা একটি পরবিারকেই যাকাতের সর্ম্পূণ র্অথ দিয়ে স্বাবলম্বী করে দেয়া ।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সল্ট-কোহলির ঝড়ে অন্যরকম শুরু বেঙ্গালুরুর

চ্যাম্পিয়ন বিকেএসপি

‘বিদেশি’ আনছে ভারতও!

কর্ণফুলীতে বন্যহাতির আক্রমণে শিশুর মৃত্যু

কিশোরগঞ্জে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত

ঝিনাইদহে জমে উঠেছে ঈদের বাজার ক্রেতাদের ঝোঁক দেশি পোশাকে

সুশীল বিপ্লবীরা আ.লীগের পুনর্বাসন করতে চায় : রাশেদ খান

ধানমন্ডিতে নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীরের ৭ সদস্য রিমান্ডে

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৯০% ভোট পেয়ে বিএনপি জয়লাভ করবে : কায়কোবাদ

আপন চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে ৪ বছরের বোনকে ধর্ষণের অভিযোগ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে : মাহমুদুর রহমান মান্না

টিভিতে দেখুন

অমর একুশে হল ছাত্রদলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

বিশ্বকাপে এক পা আর্জেন্টিনার

মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ায় হাফেজ ছেলের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নামাজরত অবস্থায় বাবা নিহত

‘‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ কিংবদন্তি জর্জ ফোরম্যান আর নেই

বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে : নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী

৬ এপ্রিল ক্যাম্পে ফিরছেন সাবিনারা

আর্জেন্টিনা ম্যাচে ‘বেকার’ আলিসনও

ইউট্যাবের ইফতার মাহফিলে খালেদা জিয়ার সুস্থতার কামনা