প্রশ্ন: দিশেহারা মানুষ, নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার?

Daily Inqilab ইনকিলাব

৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১২ এএম | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১২ এএম

উচ্চহারে মূল্যস্ফীতিতে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। চাল, ডাল, মাছ, আলু, সবজি, ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেভাবে লাগামহীন হারে বাড়ছে তাতে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তসহ সকল শ্রেণীর ক্রেতাদের মাঝে নানা ক্ষোভ অসন্তোস দেখা দিয়েছে। সিন্ডেকেটের থাবা থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত তথ্য থেকে দেখা যায় আগস্ট ২০২৩ মূল্যস্ফীতির হার ৯.৯২ শতাংশে দাড়িয়েছিল, যা জুন ও জুলাই এ ছিল যথাক্রমে ৯.৭৪ ও ৯.৬৯ শতাংশ। আগষ্টের সার্বিক মূল্যস্ফীতির মধ্যে রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি। এ হার ছিল ১২.৫৪ শতাংশ, যা গত সাড়ে এগারো বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অথচ সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল মূল্যস্ফীতি ৬শতাংশে নামিয়ে আনা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য যেমন আলু, তেল, পেয়াজ, ডিম ইত্যাদির দাম বাড়িয়ে চলেছে। সরকার কিছু কিছু পন্যের দাম নির্ধারন করে ঘোষণা করলেও বাজারে তার প্রতিফলন নেই। কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলেছে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ ও অসাধুদের অতি মুনাফা রোধে সরকার এ একাধিক বার একাধিক পণ্যের দাম নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সেই দাম কার্যকর করা যায়নি। ক্রেতাদের বাড়তি দরেই পণ্য কিনতে হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা অনেক সুবিধা গ্রহণ করলেও এবার আর তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। আলু, পিয়াজ, ডিমসহ একেক সময় একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে তারা ভোক্তাদের পকেট কেটেছে। তাই ভোক্তার স্বার্থে অসাধুদের কঠোর ভাবে দমন করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছুদিন আগেও নিত্য প্রয়োজনীয় কৃষি পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পণ্যের দাম নির্ধারনের কথা বললেও বাজারে তার প্রতিফলন নেই। পত্রিকার খবর ও সরেজমিনে ক্রেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী দেখা যায় প্রতি কেজি পেয়াজ পাইকারী আড়তে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা ও খুচরা বাজারে ৮০-৯০ টাকা। প্রতি পিচ ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৪ টাকা সরকার পণ্যের দাম নির্ধারন করে দায়িত্ব শেষ মনে করে বসে থাকে, অথচ ভোক্তারা অসহায়ের মতো বাড়তি টাকা ব্যয় করতে করতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এক বক্তব্যে বলেন পণ্যের দাম কার্যকর করনে সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ঘোষিত মূল্য কার্যকর করতে কাজ চলমান আছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সংক্রান্ত সিন্ডিকেট নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলছেন। কিন্তু এসব সিন্ডিকেট, অসাধু ব্যবসায়ীদের থেকে ভোক্তাদেরকে কে রক্ষা করবে? কে কার নিকট জবাবদিহি করবে ? নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষসহ সাধারণ ভোক্তারা আজ সিন্ডিকেটের থাবায় বন্দী। মাছ মাংষের কাছে ঘেষতে পাড়ছে না অনেকে। আলু ভর্তা, ডিম, ডাল জোগাড় করাও কঠিন হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি সাধারন সবজি তরকারিসহ আদা রশুনের দাম ও মারাত্বক চড়া। অথচ আমাদের কৃষকেরা সঠিক মূল্য পায় না। তাদের কৃষি কাজের পিছনে যে উৎপাদন খরচ হয় তাও তারা মেটাতে কষ্ট হয়। মধ্যস্বত্তভোগী ও সিন্ডিকেট অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে মানুষ দিশেহারা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিবেদন এ বলা হয়েছে, প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের ১০.৫০ টাকা খরচ হচ্ছে। কৃষকতো সর্বোচ্চ ১৫ টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছে যা খুচরা বাজারে ৩২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয় অথচ বাজারে আলুর দাম কেজি প্রতি ৪৫-৫০ টাকা। এদিকে দাম বৃদ্ধির পিছনে কারা দায়ী তা সরকারী সংস্থাও জানে। তারপরও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কয়েক মাস ধরে বাড়তি দরে ডিম বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৬০ টাকা যা গত বছরে একই সময় ডজন প্রতি ডিম বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা। প্রতি কেজি মসুরডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা যা আগে ১১৫ টাকা ছিল। আর ছোট দানা মসুরডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা। বাজারে বয়লার মুরগি কেজি প্রতি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কক মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা। এভাবে লাগামহীন ভাবে যখন নিত্যপন্যের দাম বাড়ছে তখন মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতি হারের অনেক নিচে। মূল্যস্ফীতির হার যখন ৯.৯২ শতাংশ তখন মজুরি বৃদ্ধির হার ৭.৫৮ শতাংশ। এভাবে সমাজে শ্রেণী বিণ্যাস-বৈষম্য দেখা দেয়। সমাজে মধ্যবিত্তরা নিম্ন মধ্যবিত্তে, নিম্নমধ্যবিত্তরা দরিদ্র এবং দরিদ্ররা অতিদরিদ্রের কাতারে নেমে আসছে। দেশে দরিদ্রের হার বেড়ে যাচ্ছে। দেশের মূল্যস্ফীতি উর্ধ্বহার হ্রাসে সরকারকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধীকার দিতে হবে। নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণে সরকারও কি অসহায় ? অথচ বাজারে নিত্য পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থাও স্বাভাবিক।

উত্তর দিচ্ছেন: মো: মাঈন উদ্দীন, অর্থনীতি বিশ্লেষক।


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়দিনের ধর্মীয় ইতিহাস ও তাৎপর্য
ইসলামি অর্থনীতির স্বরূপইসলামি অর্থনীতির স্বরূপ
হাজারো পীর-আউলিয়ার শিরোভূষণ সৈয়দ সুফি ফতেহ আলী ওয়াইসি (র.)
আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
ঘুষ : দেয়া-নেয়া দুটিই অপরাধ
আরও

আরও পড়ুন

বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর

বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর

চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ

প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ

কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন

কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন

বিহারিরা কেমন আছে

বিহারিরা কেমন আছে

লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন

আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন

মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে

মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে

১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর

১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর

আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি

মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি

কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব

কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব

অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক

অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক

সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ

সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ

আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি

নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি

কিউবায় সমাবেশ

কিউবায় সমাবেশ

ঈশ্বরদীতে দূর্বৃত্তের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আহত

ঈশ্বরদীতে দূর্বৃত্তের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আহত

থিনেস্ট স্বাস্থ্যের

থিনেস্ট স্বাস্থ্যের