মুমিনের জীবনে সালাতের গুরুত্ব ও প্রভাব
১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

মুমিনের জীবনে সালাতের গুরুত্ব: একজন মুমিনের জন্য ঈমানের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হচ্ছে সালাত বা নামায। কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফের যত জায়গায় ঈমানের আলোচো হয়েছে, তার প্রায় সকল জায়গাতেই ঈমানের পরেই সালাতের আলোচনা হয়েছে। সূরা বাকারার শুরুতেই ইরশাদ হয়েছে- এটি সেই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। মুত্তাকীদের জন্য পথপ্রদর্শক। যারা ঈমান রাখে গায়বের প্রতি, নামায আদায় করে এবং আমি তাদেরকে যা দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে। (সূরা বাকারা : ২-৩) সাহাবী ইবনে উমর রা. এর বাচনিক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি : ১. সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। ২. সালাত আদায় করা। ৩. যাকাত প্রদান করা। ৪. হজ্ব করা। ৫. রমযানের রোযা রাখা।’ (সহীহ বুখারী ১/৬) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে যখন কেউ ইসলাম গ্রহণ করত, তখন তিনি তাকে সর্বপ্রথম সালাতের অঙ্গীকার করাতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্বের নবী-রাসূলগণও তাওহীদের পরেই নামাযের আদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-‘তাদেরকে তো আদেশ করা হয়েছিল একনিষ্ঠভাবে ইখলাসের সাথে আল্লাহর ইবাদত করতে এবং নামায কায়েম করতে ...।’ (সূরা বায়্যিনাহ ৫)
মুমিনের জীবনে সালাতের প্রভাব: একজন মুমিনের জীবনে সালাত বা নামাযের অনেক প্রভাব রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে সালাত মুমিনকে অন্যায় ও গুনাহ থেকে রক্ষা করে। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সূরা আনকাবূত : ৪৫) এখানে প্রশ্ন হতে পারে, আমরা তো সালাত আদায় করি। কিন্তু সালাত তো আমাদের গুনাহ থেকে রক্ষা করে না? সালাতও আদায় করি আবার গুনাহও করি। এক সাথে দু‘টোই চলে। এর উত্তর বর্ণিত আয়াতেই রয়েছে। পরের অংশে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহর যিকর তথা স্মরণ সবচেয়ে বড়’। এ অংশে আল্লাহ তাআলা গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখার প্রকৃত রহস্য বলে দিয়েছেন। অর্থাৎ অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে রক্ষাকারী হচ্ছে আল্লাহর যিকর বা স্মরণ। যার নামাযে আল্লাহর স্মরণ যত বেশি হবে নামায তাকে তত বেশি গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। আমাদের নামায সম্পর্কে যদি চিন্তা করি তাহলে আমাদের নামাযের প্রকৃত অবস্থা নিজেরাই অনুধাবন করতে সক্ষম হব। আমাদের তো গাফলতের কারণে এমনই অবস্থা যে, অনেক সময় নামাযের শেষে মনেও করতে পারি না যে, কোন কোন সূরা পড়েছি। আর মোটামুটি খেয়াল করে নামায পড়লেও আমরা কি খেয়াল করি যে, আমার রবের সাথে আমার কী কী কথোপকথন হল? এগুলো চিন্তা করলেই আমরা বুঝে যাব আমাদের সালাত আমাদেরকে কেন অন্যায় ও গুনাহ থেকে বাঁচাতে পারে না? সালাতের আরেকটি প্রভাব হলো, সালাতের দ্বারা গুনাহ মাফ হয়। এক হাদীসে হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা কি বলতে পার যদি তোমাদের কারো দরজার সামনে একটি নদী থাকে আর সে ঐ নদীতে পাঁচবার গোসল করে তাহলে তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবীগণ উত্তর দিলেন, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযও ঠিক এমনই। আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা গুনাহসমূহ ধুয়ে মুছে ছাফ করে দেন।’ (সহীহ বুখারী ১/৭৬) হযরত আবু যর রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শীতকালে একবার বের হলেন। ঐ সময় গাছের পাতা ঝরছিল। তিনি একটি গাছ থেকে দুটি ডাল নিয়ে সেগুলো নাড়া দিয়ে পাতা ফেলতে থাকেন এবং বললেন, আবু যর! আমি বললাম, লাববাইক ইয়া রাসূলুল্লাহ। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই কোনো মুসলমান যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নামায আদায় করে তখন তার গুনাহগুলো এভাবে ঝরে যায় যেমন এই গাছ থেকে পাতাগুলো ঝরে যাচ্ছে। (মুসনাদে আহমদ ৫/১৭৯)
সালাতের মাধ্যমে রবের সাথে বান্দার সম্পর্ক তৈরি হয়
মুমিনের জীবনে সালাতের তাৎপর্য ও প্রভাব অত্যন্ত গভীর। মাসায়িল মোতাবেক নামাযের রোকনগুলো আদায় করার পাশাপাশি অন্তরের ইখলাস ও খুশু-খুযূ এবং নামাযের প্রতি মুহাববত সালাতের পূর্ণাঙ্গতার জন্য অপরিহার্য। এই পূর্ণাঙ্গ সালাতের মাধ্যমে স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির নিকটতম সম্পর্ক তৈরি হয়। আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও মুহাববত লাভের এবং প্রেমাষ্পদের সঙ্গে যোগাযোগ ও কথোপকথনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে সালাত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- (তরজমা) ‘আমাকে স্মরণ করার জন্য নামায পড়।’ (সূরা ত্বহা : ১৪) এক হাদীসে কুদসী থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও ভালোবসা সবচেয়ে বেশি সালাতের মাধ্যমে, বিশেষত নফল সালাতের দ্বারা অর্জিত হয়। এজন্য নামায সঠিকভাবে আদায়ের সাথে সাথে অন্তরে সালাতের প্রতি মুহাববত ও ভালবাসা তৈরি করা জরুরি।
সালাতের দ্বারা হৃদয় ও মন শান্ত হয়
নামাযের প্রতি মুহাববতের কারণেই আল্লাহর প্রকৃত নেক বান্দাগণ যখন নামাযে দাড়ান তখন তাদের দিলের সব অস্থিরতা ও পেরেশানি দূর হয়ে যায়। হৃদয় ও মন শান্ত ও প্রশান্ত হয়। দিলে সুকূন ও সাকীনা অনুভব করেন। অপরদিকে কোনো কারণে নামায আদায়ে বিলম্ব হলে কিংবা কোনো অসুবিধা হলে তারা অস্থির ও বিচলিত হয়ে পড়েন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র সীরাতের দিকে লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাই তিনি বলেছেন নামাযে আমার চোখের শীতলতা। অন্য এক হাদীসে হযরত বেলাল রা.কে আদেশ করেছেন, ‘হে বেলাল! নামায কায়েম করে আমাদেরকে প্রশান্তি দাও।’ (সুনানে আবু দাউদ ২/৬৮১)
লেখক : সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া মাখযানুল উলূম, তালতলা মোমেনশাহী।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গোপন ঢাকামুখী যাত্রা, গোয়েন্দা তথ্যে চাঞ্চল্য

ঢাকায় তাপমাত্রা কমার আভাস, শীতল দিনে স্বস্তির সম্ভাবনা

হঠাৎ বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল, ভারতের উদ্দেশ্য কী ছিল?

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৯ জিএমকে ডিএমডি পদে পদোন্নতি

নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের দাবিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি ডিসি'র

ইসরায়েলের বর্বরতার প্রতিবাদে রাজধানীতে মোটরসাইকেল র্যালি

সৈয়দপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার বাড়ি থেকে বোমা সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার

বিনিয়োগকারীদের চোখ আগামী নির্বাচিত সরকারের দিকে: খসরু

ভারতজুড়ে ওয়াকফ আইন নিয়ে তীব্র বিক্ষোভ ও আইনি লড়াই

ভক্ত, দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত মোরেলগঞ্জের লক্ষীখালি বারুনী স্নানোৎসব ও ধর্মীয় মাতুয়া মেলা

ইসরায়েলি অবরোধে ত্রাণহীন গাজায় মানবিক বিপর্যয়

ড. ইউনূসের নেতৃত্ব বাংলাদেশের সমৃদ্ধি আনবে, প্রত্যাশা আমিরাত প্রেসিডেন্টের

নদীতে গোসল করতে নেমে প্রাণ গেল দুই বোনের

জীবিত অভিবাসীদের ‘মৃত’ ঘোষণা করে তাড়াচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

বঙ্গোপসাগরে ৪ ট্রলারে ডাকাতি, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৮

এক সপ্তাহে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার ৬০৮

নিউইয়র্কে নদীতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, শিশুসহ নিহত ৬

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৪০ ফিলিস্তিনি

রামগতিতে চাঁদা না দেয়ায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের হামলায় দিনমজুর আহত, আটক ১

দোয়ারাবাজার সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে বাংলাদেশী নিহত