সবকিছুই আল্লাহর সামনে সিজদাবনত
০৪ মে ২০২৪, ১২:৩০ এএম | আপডেট: ০৪ মে ২০২৪, ১২:৩০ এএম
‘তুমি কি দেখো না আল্লাহর সামনে সিজদানত সবকিছুই যা আসমানে ও পৃথিবীতে-সূর্য, চন্দ্র, তারকা, পাহাড়, গাছপালা, জীবজন্তু এবং বহু ও এমন বহু লোক যাদের প্রতি আযাব অবধারিত হয়ে গেছে? আর যাকে আল্লাহ লাঞ্ছিত ও হেয় করেন তার সম্মানদাতা কেউ নেই। আল্লাহ যা কিছু চান তাই করেন।’ (সুরা হজ্জ : ১৮)। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘আল্লাহকে সিজদা করছে পৃথিবী ও আকাশের প্রত্যেকটি বস্তু ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় এবং প্রত্যেক বস্তুও ছায়া সকাল-সাঁেঝ তাঁর সামনে নত হয়।’ (সুরা রা’দ : ১৫)। আল্ল্হা আরো বলেন, ‘আর তারা কি আল্লাহর সৃষ্ট কোনো জিনিসই েেদখে না, কিভাবে তার ছায়া ডাইনে বাঁয়ে ঢলে পড়ে আল্লাহকে সিজদা করছে? সবাই এভাবে দীনতার প্রকাশ করে চলছে। পৃথিবী ও আকাশে যত সৃষ্টি আছে প্রাণসত্তা সম্পন্ন এবং যত ফেরেশতা আছে তাদের সবাই রয়েছে আল্লাহর সামনে সেজদাবনত। তারা কখনো অবাধ্যতা প্রকাশ করে না।’ (সুরা নাহল : ৪৮-৪৯)।
সিজদা মানে আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য ঝুঁকে পড়া, আদেশ পালন করা এবং পুরোপুরি মেনে নিয়ে মাথা নত করা। পৃথিবী ও আকাশের প্রত্যেকটি সৃষ্টি আল্লাহর আইনের অনুগত এবং তাঁর ইচ্ছার চুল পরিমাণও বিরোধীতা করতে পারে না- এ অর্থে তারা প্রত্যেকেই আল্লাহকে সিজদা করছে। মু’মিন স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে তাঁর সামনে নত হয়ে কিন্তু কাফেরকে বাধ্য হয়ে নত হতে হয়। কারণ আল্লাহর প্রাকৃতিক আইনের বাইরে চলে যাওয়ার ক্ষমতা তার নেই। যারা নিছক বাধ্য হয়েই নয় বরং ইচ্ছাকৃতভাবে, সানন্দে ও আনুগত্যশীলতা সহকারেও তাকে সিজদা করে। আর মানব সম্প্রদায়ের অন্য যে দলের কথা বলা হচ্ছে তারা স্বেচ্ছায় আল্লাহর সামনে নত হতে অস্বীকার করে। কিন্তু অন্যান্য স্বাধীন ক্ষমতাহীন সৃষ্টির মতো তারাও প্রাকৃতিক আইনের বাঁধন মুক্ত নয় এবং সবার সাথে বাধ্য হয়ে সিজদা করার মধ্যে তারাও রয়েছে। নিজেদের ক্ষমতার পরিসরে বিদ্রোহের নীতি অবলম্বনের কারণে তারা আযাবের অধিকারী হয়।
দেহ বিশিষ্ট সমস্ত জিনিসের ছায়া থেকে এ আলামতই জাহির হচ্ছে যে, পাহাড়-পর্বত, গাছ-পালা, জন্তু-জানোয়ার বা মানুষ সবাই একটি বিশ্বজনীন আইনের শৃংখলে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। সবার কপালে আঁকা আছে বন্দেগী ও দাসত্বের টিকা। আল্লাহ সার্বভৌম ক্ষমতার ক্ষেত্রে কারোর সামান্যতম অংশও নেই। কোন জিনিসের ছায়া থাকলে বুঝতে হবে, সেটি একটি জড় বস্তু। আর জড় বস্তু হওয়ার অর্থ হলো, সেটি একটি সৃষ্টি এবং সৃষ্টিকর্তার গোলাম। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। শুধু পৃথিবীই নয় আকাশেও এমন সব বস্তু, পি- বা সত্তা যাদেরকে প্রচিীনকাল থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত অনেক মানুষ দেব দেবী এবং আল্লাহর আত্মীয় স্বজন গণ্য করে এসেছে। মূলত : তারাও গোলাম ও তাবেদার ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের মধ্যেও কারোর আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতায় কোন অংশ নেই।
পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত সর্বত্র একই আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব পূর্ণ শক্তিতে ও সর্বব্যাপীভাবে চলছে, সমগ্র বিশ্ব-জাহানের ব্যবস্থা এ কথারই সাক্ষ্য দিচ্ছে। পৃথিবীর একটি ক্ষুদ্রতম ধূলিকণা শুরু করে আকাশের বড় বড় গ্রহ-নক্ষত্র পর্যন্ত সবাই একটি আইনের শৃংখলে বাঁধা রয়েছে এবং তা থেকে এক চুল পরিমাণ এদিক ওদিক নড়ার ক্ণমতা কারোর নেই। মু’িমন তো অন্তর থেকেই তাঁর কাছে মাতা নত করে কিন্তু নাস্তিকটি তাঁর অস্তিত্বই অস্কীকার করে এবং মুশরিকটি প্রতিটি ক্ষমতাহীন সত্তার সামনে মাথা নত করে সেও আল্লাহর মুখাপেক্ষী। তাকে তাঁর প্রাকুতিক বিধানের দ্বারস্থ হতে হয়। তাঁর আলো, বাতাস, অ´িজেন, রোদ ও বৃষ্টি সমান তালে ভোগ করতে হয়। এমনকি তারা যাদের সামনে মাথা নত করে তারাও তাঁর আলো, বাতাস ও পানির মতো সমানভাবে তার আনুগত্য করতে বাধ্য। কোন ফিরিশতা, জিন, নবী, অলী ও দেবদেবীর মধ্যে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের গুণাবলী ও ক্ষমতার সামান্যতম নামগন্ধও নেই। তাদেরকে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব ক্ষমতা ও উপাস্য হবার মর্যাদা দান করা অথবা বিশ্বজাহানের মালিক ও প্রভুর সমজাতীয় ও সদৃশ গণ্য করার কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না।
কোন শাসকবিহীন আইন, ¯্রষ্টাবিহীন প্রকৃতি ও পরিচালকবিহীন ব্যবস্থার পক্ষে এত বড় বিশ্ব-জাহানের অস্তিত্ব দান করা, নিজেই তাকে সুষ্ঠু নিয়ম-শৃংখলার সাথে পারচালনা করা এবং বিশ্ব-জাহানের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা ও প্রজ্ঞার বিস্ময়কর কর্মকুশলতা দেখানো কোনক্রমেই সম্ভব নয়। বিশ্ব-জাহানের এ উন্মুক্ত গ্রহটি সামনে থাকার পরও যে ব্যক্তি নবীদের কথা মানে না এবং বিভিন্ন মনগড়া বিশ্বাস অবলম্বন করে আল্লাহর ব্যাপারে বিরোধে প্রবৃত্ত হয় তার মিথ্যাশ্রয়ী হওয়া ঠিক তেমনিভাবে প্রমাণিত যেমন ক্যিয়মতের দিন প্রমাণিত হবে। আর এটিই লাঞ্ছিত ও হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার পথ। সত্য অস্বীকার করা এবং সত্য অনুসরণ করার অনিবার্য ফল লাঞ্ছনা ও সম্মান আকারে দেখা যায়। যে ব্যক্তি চোখ মেলে প্রকাশ্য ও উজ্জল সত্য দেখে না এবং যে তাকে বুঝায় তার কথাও শোনে না সে নিজেই নিজের জন্য লাঞ্ছনা ও অবমাননার ডাক দেয়। সে নিজে যা প্রার্থনা করে আল্লাহ তার ভাগ্যে তাই লিখে দেন। তারপর আল্লাহই যখন তাকে সত্য অনুসরণ করার মর্যাদা দান করেননি তখন এ মর্যাদায় অভিষিক্ত করার ক্ষমতা আর কার আছে।
আগেই বলা হয়েছে মানুষের মধ্যে যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না, তারা অনিচ্ছা সত্বেও তাঁর কাছে নত হতে হয়। আল্লাহর নির্ধারিত প্রাকৃতিক বিধানের কাছে সে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা আছে। ইচ্ছা করলেই কেউ আল্লাহর সেই প্রাকৃতিক বিধানের বাইরে যেতে পারে না। আল্লাহর বিধান অস্বীকার করার পরও আল্লাহ তাকে খাদ্য দেন। কেউ রাগ করে আল্লাহর খাদ্য প্রত্যাখ্যান করে চলতে পারে না। আবু মুসা আশ’আরী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কষ্টদায়ত কোন কথা শ্রবণ করার পর আল্লাহ তা’আলা থেকে অধিক ধৈর্যশীল আর কেউ নেই। মানুষ আল্লাহর সাথে শরীক করে এবং তাঁর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে; এরপরও তিনি তাদেরকে খাদ্য দেন এবং তাদেরকে রিযিক দেন।’ (মুসলিম : ৬৯৭৩, কিতাবুস সিফাতিল কিয়ামা,,,,বাবু লা আহাদা আসবারু..., ই.ফা : ৬৮২১)। বাধ্যগত অবাধ্যগত সকলেই প্রত্যক্ষভাবে আল্লাহর অনুগ্রহের মুনাফেক্ষী। প্রত্যেককে তাঁর আলো, বাতাস,অ´িজেন,মেঘ-বৃষ্টি ও অন্যান্য সম্পদ ভোগ করতে হয়। প্রত্যেক বিদ্রোহীর শরীরে কার্যকর যন্ত্রগুলো মুসলিম হিসাবে আল্লাহর হুকুম তামিল করে যাচ্ছে। এই যন্ত্রগুলোর কোন একটি মাঝে মধ্যে আকার্যকর হলে আল্লাহই তা আবার কার্যকর করে দেন। বিদ্রোহীগুলো এ দিক দিয়েও আল্লাহর মুখাপেক্ষী।
মানুষ সবাই একটি বিশ্বজনীন আইনের শৃংখলে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। সবার কপালে আঁকা আছে বন্দেগী ও দাসত্বের টিকা। সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ যখন মাঝ দরিয়ায় ঘেরাও করে তখন বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কি অবস্থা হয়? আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘আর যখন(সমুদ্রে) একটি তরঙ্গ তাদেরকে ছেয়ে ফেলে ছাউনির মতো তখন তারা আল্লাহকে ডাকে নিজেদের আনুগত্যকে একদম তাঁর জন্য একান্ত করে নেয়। তারপর যখন তিনি তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলদেশে পৌঁছিয়ে দেন তখন তাদের কেউ কেউ মাঝপথ বেছে নেয়। আর প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতক ও অকৃতজ্ঞ ছাড়া আর কেউ আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে না।’ (সুরা লোকমান : ৩২)। সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের কাছে অসহায় হয়ে শিরক ও নাস্তিক্যবাদ পরিহার করে সবাই এক আল্লাহকে ডাকতে থাকে সাহায্যের জন্য। তখন টনক নড়ে এবং বুদ্ধি ঠিকমত কাজ করতে থাকে। কিন্তু তাদের এ উপলব্ধি বেশীক্ষণ টিকে থাকে না। নিরাপদে উপকূলে পৌঁছে যাবার পর আবার নিজেদের কুফরী, নাস্তিকতা ও শিরকের দিকে ফিরে যায়। ঝড়-তুফানের সময় তারা আল্লাহর অস্তিত্বের এবং একক আল্লাহর অস্তিত্বের কিছু চিহ্ন ও নিদর্শন বাইরে ও নিজেদের মনে মধ্যেও পেয়েছিল এবং এ সত্যের স্বতস্ফুর্ত অনুভূতিই তাদেরকে আল্লাহর শরণাপন্ন হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল এ কথা তারা মানতে চায় না। যারা নাস্তিক তারা তাদের এ কাজের যে ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে তা হচ্ছে এই যে, এ তো ছিল একটা দুর্বলতা। কঠিণ বিপদের সময় অস্বাভাবিক অবস্থায় আমরা এ দুর্বলতার শিকার হয়েছিলাম। নয়তো আসলে আল্লাহ বলতে কিছুই নেই। ঝড়-তুফানের মুখ থেকে কোন আল্লাহ আমাদের বাঁচায়নি। অমুক অমুক কারণে ও উপায়ে আমরা বেঁচে গেছি। আর মুশরিকরা তো সাধারণভাবেই বলে থাকে অমুক অমুক সাধুবাবা অথবা দেবদেবীর ছায়া আমাদের মাথার ওপর ছিল। তাদের কল্যাণেই আমরা এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছি। অর্থাৎ সুস্পষ্ট শিরকে লিপ্ত হয়।
বিদ্রোহীরা তাদের বিদ্রোহের ফলে যদি বলে যে, আল্লাহর কোন সৃষ্টির সহযোগীতা আমরা গ্রহণ করবো না। আল্লাহর আলো, বাতাস,পানি ও খাদ্য গ্রহণ করবো না অথবা বলে আল্লাহর সৃষ্টি এই পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও চলে যাবে। তা তারা কখনো কিছুতেই পারবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘হে জিন ও মানবগোষ্ঠী, তোমরা যদি পৃথিবী ও আকাশ ম-লের সীমা পেরিয়ে কোথাও পালিয়ে যেতে পার তাহলে গিয়ে দেখ, পালাতে পারবে না, এ জন্য বড় শক্তি প্রয়োজন।’ (সুরা রাহমান : ৩৩) অর্থাৎ অন্যত্র যাওয়ার যদি সক্ষমও হয়, সেখানেও আল্লাহর প্রভুত্ব বা সার্বভৌম প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহর প্রভুত্ব থেকে বের হয়ে যাওয়ার কোন ক্ষমতা তাদের নেই। যদি কেহ এ ধরণের অহমিকা পোষণ করে থাকে তাহলে সর্বশক্তি নিয়োগ করে দেখুক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ওমরজাই-গুরবাজ জুটির ৫০
কোন অপশক্তি নেই, রুখতে পারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রযাত্রা - দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরাম
মুস্তাফিজের দ্বিতীয় আঘাত
যশোরের যবিপ্রবি এলাকা থেকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আটক
যশোরে সেনাবাহিনীর অভিযানে মাদকসহ আটক ১
যশোরের শার্শায় জাহাঙ্গীর মেম্বারের ক্ষমতার দাপট, পুলিশ নিরব
রহমতকে ফেরালেন মুস্তাফিজ
নোয়াখালী আদালতের নতুন পিপি শাহাদৎ, জিপি নুরুল আমিন
ঢাকায় স্বামীর আত্মহত্যার ৪৮ঘণ্টার পর যশোরে গলায় ফাঁস দিয়ে স্ত্রীর আত্মহত্যা
স্কুল হ্যান্ডবলে সেরা সানিডেল-ভিকারুননিসা
জাতীয় সাঁতারের তৃতীয় দিন নৌবাহিনীর এক রেকর্ড
পুরস্কারের চেক বুঝে পেলেন সাবিনারা
বিশ্বে গবেষণা নেতৃত্বে ৩২তম ইরান
বিতর্কিত উপদেষ্টা নিয়োগ শহীদের রক্তের অবমাননা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
ফারুকী-বশিরকে উপদেষ্টা করা শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি : ফ্যাসিবাদ বিরোধী বিপ্লবী ছাত্র-জনতা
গাজীপুরে সড়ক অবরোধে ছাত্রছাত্রীরা চরম দুর্ভোগে
সরকার ভৈরবে নদী বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নিচ্ছে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা
গতির ঝড় তুলে প্রথম উইকেট নাহিদের
শেরপুরে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃক হামলার শিকার সময় টিভির দুই সাংবাদিক
জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার আন্দোলনের মাধ্যেমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে : সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন