নবী করিম (সা.) ছিলেন পৃথিবীর জন্য রহমত

Daily Inqilab মুফতি আইয়ুব নাদীম

০৪ মে ২০২৪, ১২:৩০ এএম | আপডেট: ০৪ মে ২০২৪, ১২:৩০ এএম

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) পুরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া-মায়া, মমতা, ভালবাসায় মহা সাগর স্বরূপ ছিলেন। বহতা নদীর মতো তাঁর দয়া-মায়া, মমতা ও ভালোবাসা থেকে পৃথিবীর প্রত্যেকটা সদস্য উপকৃত হয়েছে, হচ্ছে, এবং কিয়ামত অবধি হবে। মানব ইতিহাসের সূচনা লগ্ন থেকে আজ অবধি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মতো মানব দরদী কেউ আসে নাই, কেয়ামত পর্যন্ত আসবেও না। উম্মতের প্রতি তার অগাধ ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দৃষ্টান্ত উপমাহীন। উম্মতের নাজাত-মুক্তি ও সর্বাঙ্গীন সফলতা ও কল্যাণ কামনায় তাঁর হৃদয় সদা ব্যাকুল ও অস্থির থাকতো। অতুলনীয় ও উপমাহীন সে ভালোবাসার বিবরণ কুরআন ও হাদিসের বিশাল অংশজুড়ে, বিস্তৃত আকারে বর্ণিত হয়েছে।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘(হে মানুষ!) তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকেই তোমাদের কাছে এক রাসূল এসেছে। তোমাদের যেকোনও কষ্ট তার জন্য অতি পীড়াদায়ক। সে সতত তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, পরম দয়ালু।’ (সূরা তাওবা : ১২৮)। উপরিউক্ত আয়াত দ্বারা বোঝা গেল, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টি জীবের প্রতি বিশেষত, মুসলমানদের প্রতি তাঁর দয়া,মায়া, স্নেহশীলতা, কতটা গভীর ছিল। আমাদের মতো উম্মতকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহ তা’আলা নিজের দুটি নাম তাঁর হাবিবের সাথে যুক্ত করে দিয়েছেন একটি ‘রউফ’ আরেকটা ‘রহিম’। এত মায়া-দয়ার পরেও যখন মক্কার কাফের-মুশরিরা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে বৈরী আচরণ করতে থাকল এবং নানাভাবে কষ্ট দিতে থাকল। আর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনে দুঃখ পেলেন, তখন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা তার প্রিয় হাবিবকে সান্ত¡নার বাণী শোনালেন।

এ ব্যাপারে একটি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘(হে নবী অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়) তারা (কোরআনের) বাণীর প্রতি ঈমান না আনলে যেন তুমি আক্ষেপ করে করে তাদের পেছনে নিজের প্রাণনাশ করে বসবে।’ (সূরা কাহাফ : ৬)। আরেকটা আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,‘লোকে কি বলে নবী নিজে একটা রচনা করে নিয়েছে? না, (হে নবী!) এটা তো সত্য, যা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে, যাতে তুমি এর মাধ্যমে সতর্ক কর এমন এক সম্প্রদায়কে, যাদের কাছে তোমার আগে কোন সতর্ককারী আসেনি, যাতে তারা সঠিক পথে এসে যায়।’(সূরা আহযাব:৩) ওপর একটা আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,‘হে আমার প্রতিপালক! ওইসব প্রতিমা বিপুল সংখ্যক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে। সুতরাং যে-কেউ আমার অনুসরণ করবে, সে আমার দলভুক্ত। আর যে-কেউ আমাকে অমান্য করলে (তার বিষয়টা আমি আপনার উপর ছেড়ে দিচ্ছি) আপনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা ইব্রাহীম : ৩৬)

এর দ্বারা বুঝা গেল, আমি আমার সন্তান-সন্ততি ও অন্যান্য লোকদেরকে মূর্তিপূজা হতে বেঁচে থাকার আদেশ করতে থাকব। যারা আমার আদেশ মত কাজ করবে, তারা আমার অনুসারী বলে দাবি করার অধিকার রাখবে। কিন্তু যারা আমার কথা মানবে না, তারা আমার দলের থাকবে না। তবে আমি তাদের জন্য বদ-দোয়া করি না। তাদের বিষয়টা আমি আপনার উপর ছেড়ে দিচ্ছি। আপনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সুতরাং আপনি তাদেরকে হেদায়েত দিয়ে মাগফিরাতের ব্যবস্থাও করতে পারেন। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. সূত্রে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য পিতৃতুল্য। আমি দ্বীনের বিষয় সমূহ তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়ে থাকি।’ (আবু দাউদ : ৮)। উপরিউক্ত হাদিস দ্বারা বোঝা গেল, রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতের জন্য পিতৃতুল্য। অর্থাৎ একজন পিতা যেমন সন্তানের জন্য, আমি আমার উম্মতের জন্য অনুরূপ। তথা উম্মতের ভালো-মন্দ সকল বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করি এবং তাদের সুখ-শান্তির ও সর্বাঙ্গীন উন্নতি ও সফলতা কামনা করি। সাথে সাথে পরকালীন জীবনে কেয়ামতের দিনে এবং জাহান্নামের নানাবিধ কষ্ট থেকে উম্মাত যেন বাঁচতে পারে, সেজন্য তাদেরকে নানাভাবে সতর্ক, সচেতন করে থাকি।

আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, ‘আমার ও মানুষের উদাহরণ এমন লোকদের মতো, যে আগুন জ্বালালো, যখন তার চারদিক আলোকিত হয়ে গেল, কীটপতঙ্গ (যেগুলো আগুনে পড়ে) তারা তােেত পড়তে লাগল, তখন সে সেগুলোকে ফিরানোর চেষ্টা করল, কিন্তু সেগুলো তাকে পরাজিত করে, আগুনে পতিত হল। অনুরূপভাবে আমি তোমাদের কোমর ধরে ধরে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি, কিন্তু তোমরা তাতেই(শয়তানের প্ররোচনায়) পতিত হয়ে যাও।’ (বুখারী : ৬৪৮৩)। আরেকটা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক নবীকে এমন একটি বিশেষ দোয়ার অধিকার দিয়েছেন, যা কবুল করা হবে, প্রত্যেক নবী সেই দোয়া দুনিয়াতে করেছেন এবং তা কবুলও হয়েছে। আর আমি সেই বিশেষ দোয়াটি কেয়ামতের দিন আমার উম্মতের সুপারিশের জন্য রেখে দিয়েছি।’ (বুখারী : ৬৩০৪)।

সুতরাং উম্মতের জন্য জরুরী হলো- রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আদেশ ও হুকুম-আহকাম বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার অতুলনীয় দয়ামায়ার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করা, এবং তার ভালোবাসা লাভে সচেষ্ট হওয়া। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সবাইকে দুনিয়ার যাপিত এই জীবনে, প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালামের সুন্নাহর অনুসরণের মাধ্যমে তার ভালোবাসা অর্জন করে, চিরস্থায়ী ও চির সুখের জান্নাতে রাসূলের সাথে থাকার তাওফিক দান করুন।


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আলেগ্রিকে ছাঁটাই করল ইউভেন্তুস

আলেগ্রিকে ছাঁটাই করল ইউভেন্তুস

অভিনব উপায়ে আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ জার্সি উন্মোচন

অভিনব উপায়ে আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ জার্সি উন্মোচন

বাংলাবাজার খানকায়ে নেছারিয়ায় মাসিক তা'লিমী জলসা অনুষ্ঠিত

বাংলাবাজার খানকায়ে নেছারিয়ায় মাসিক তা'লিমী জলসা অনুষ্ঠিত

সমতায় শেষ নাসের-হিলাল দ্বৈরথ

সমতায় শেষ নাসের-হিলাল দ্বৈরথ

মিডল্যান্ড ব্যাংক শীর্ষস্থানীয় বীমা কোম্পানি প্রগতি ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের সাথে ব্যাংকাসুরেন্স চুক্তি স্বাক্ষর

মিডল্যান্ড ব্যাংক শীর্ষস্থানীয় বীমা কোম্পানি প্রগতি ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের সাথে ব্যাংকাসুরেন্স চুক্তি স্বাক্ষর

প্যাট্রিয়ট দিয়ে খারকভের মুক্তি ঠেকাতে পারবে না ইউক্রেন

প্যাট্রিয়ট দিয়ে খারকভের মুক্তি ঠেকাতে পারবে না ইউক্রেন

জাতিকে নেতৃত্ব দিতে রাজধানীতে ইসলামী আন্দোলনের ভিত্তি আরও মজবুত করতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান

জাতিকে নেতৃত্ব দিতে রাজধানীতে ইসলামী আন্দোলনের ভিত্তি আরও মজবুত করতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান

পিটিয়ে রিকশাচালকের পা ভেঙে দিলো ট্রাফিক পুলিশ, সড়ক অবরোধ

পিটিয়ে রিকশাচালকের পা ভেঙে দিলো ট্রাফিক পুলিশ, সড়ক অবরোধ

আত্মহত্যা

আত্মহত্যা

শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক

শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক

উপকূলবাসীর জীবনমান উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

উপকূলবাসীর জীবনমান উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

মন্ত্রী ও মেয়রদের কথার সাথে কাজের মিল থাকতে হবে

মন্ত্রী ও মেয়রদের কথার সাথে কাজের মিল থাকতে হবে

দোয়ারাবাজারে মঈন উদ্দিন হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ

দোয়ারাবাজারে মঈন উদ্দিন হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ

মেরুকরণই হাতিয়ার মোদির!

মেরুকরণই হাতিয়ার মোদির!

স্বামীর উপহারের টাকায় লটারি কিনে কোটিপতি স্ত্রী

স্বামীর উপহারের টাকায় লটারি কিনে কোটিপতি স্ত্রী

কলকাতায় ফের করোনা আতঙ্ক, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫

কলকাতায় ফের করোনা আতঙ্ক, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫

পশ্চিমবঙ্গে বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু

পশ্চিমবঙ্গে বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু

‘অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা’ তত্ত্ব একেবারে ভিত্তিহীন : চীন

‘অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা’ তত্ত্ব একেবারে ভিত্তিহীন : চীন

ইউরোপের নির্বাচনে কড়া শরণার্থী নীতি কতটা প্রভাব ফেলবে?

ইউরোপের নির্বাচনে কড়া শরণার্থী নীতি কতটা প্রভাব ফেলবে?

ফ্রান্সে ইহুদি উপাসনালয়ে আগুন

ফ্রান্সে ইহুদি উপাসনালয়ে আগুন