ইসলামে ইমামের অনন্য মর্যাদা

Daily Inqilab ইসমাঈল সিদ্দিকী

০৪ মে ২০২৪, ১২:৩০ এএম | আপডেট: ০৪ মে ২০২৪, ১২:৩০ এএম

ইমামতি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব, ইমাম সর্বস্তরের মানুষের সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র। আমাদের নবি কারিম সা. ও ইমাম ছিলেন। যতদিন বেঁচে ছিলেন এই মহান দায়িত্ব তিনিই পালন করেছেন। আর যুগে যুগে যারাই এই মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দিবে তারা নবিজির দোয়া লাভে ধন্য হব। ইরশাদ হয়েছে, ‘ইমাম হলেন (সালাতের সার্বিক) জিম্মাদার। আর মুয়াজ্জিন হলেন আমানতদার। হে আল্লাহ, ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি : ২০৭)।
ইমামের অবদান : শিশুরা মানবজাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আজকের শিশুরাই আগামী দেশ ও জাতির কর্ণধার। এই ভবিষ্যত কর্ণধারদের সুশিক্ষা বাস্তবায়নে একজন ইমামের যথেষ্ট অবদান থাকে। কারণ প্রায় প্রতিটি মুসলিম শিশু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার যাত্রা শুরু হয় মকতব শিক্ষার মধ্য দিয়ে। আর মক্তবে সাধারণত ইমামরাই শিক্ষক হয়ে থাকে। সমাজের নানারকম বিশৃঙ্খলা তথা ধর্মীয় হানাহানী, মানবতা বিরোধী কর্মকা-, সাম্প্রদায়িক সম্পৃৃতি রক্ষায়, সমাজের স্থিতিশীল উন্নয়ন ধরে রাখা এবং পরিবেশ শান্ত রাখার ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। অবক্ষয়মুক্ত সমাজ গঠনে, অপরাধী, মাদক নেশা, ইভটেজিং, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ তাদের বক্তব্য ও ভূমিকা অন্য সব কর্মসূচীর চেয়ে ফলদায়ক হবে।

ইসলামে ইমামের মর্যাদা : ইসলাম একজন ইমামকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছে। হাদিসে বিভিন্নভাবে ইমামের মর্যাদার কথা উল্লেখ রয়েছে। ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমামকে পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, অনুসরণ করার জন্যই ইমাম নির্ধারণ করা হয়। কাজেই তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে না। তিনি যখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। তিনি যখন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলেন, তখন তোমরা ‘রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদ/ রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে। তিনি যখন সিজদা করবেন তখন তোমরাও সিজদা করবে। তিনি যখন বসে সালাত আদায় করেন, তখন তোমরাও বসে সালাত আদায় করবে। আর তোমরা সালাতে কাতার সোজা করে নেবে। কেননা কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। (বুখারি : ৭২২)।

ইমাম মুসল্লিদের প্রতিনিধিত্ব করেন : একজন ইমাম তার অধীন লোকদের পক্ষ থেকে আল্লাহর দরবারে প্রতিনিধিত্ব করেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মধ্যকার উত্তম ব্যক্তিকে তোমাদের ইমাম নিয়োগ করবে। কারণ তিনি হবেন তোমাদের পক্ষে তোমাদের প্রতিপালকের প্রতিনিধি।’ (দারাকুতনি, হাদিসদ : ১৮৮১)।

ইমাম মিশকের কস্তুরির উপর থাকবেন : যে ব্যক্তি কোনো কওমের ইমামতি করে আর তারা তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকে কিয়ামতের দিন তিনি বিশেষ মর্যাদা লাভ করবে। হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি কেয়ামতের দিন মিশকের কস্তুরির স্তূপের ওপর থাকবে- ১. যে ক্রীতদাস আল্লাহ ও তার প্রভুর হক ঠিকমতো আদায় করে, ২. যে ব্যক্তি কোনো কওমের ইমামতি করে আর তারা তার প্রতি সন্তুষ্ট এবং ৩. যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য প্রত্যেক দিন ও রাতে আজান দেয়।’ (জামে তিরমিজি : ১৯৮৬)।

ইমামদের মূল্যায়ন করা আবশ্যক : খুবই আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, সম্প্রতি বিভিন্ন জায়গায় এ মহান দায়িত্ব পালনকারী মহান মানুষগুলো হেনস্তার শিকার হচ্ছে। নানাভাবে তাদের ছোটো করা হচ্ছে। তাদের অবদানকে অস্বীকার করা হচ্ছে। বাচনিক আঘাতে অযাচিত আর অন্যায্য সমালোচনায় তাদের জর্জরিত করছে। বর্তমান সময়ে বাজারের অবস্থা সম্পর্কে কে না জানে! দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থাও যে ব্যয়বহুল এ ব্যাপারে সবাই অবগত আছে। কিন্তু একজন ইমামের বেলায় সব যেন নাই হয়ে যায়। সারা মাস খেটে একজন ইমাম মাত্র আট, দশ হাজার টাকা বেতন পায়। তা দিয়ে চিকিৎসা খরচ চালাবে নাকি পরিবার মুখে দুমুঠো আহার তুলে দিবে এ নিয়ে একজন ইমামকে বেশ টেনশনে থাকতে হয়।

ইমামদের মূল্যায়ন করা, সম্মানজনক বেতন-ভাতা ধার্য করা, তাদের জীবন-যাপনের স্তরকে উন্নীত করা আমাদের জন্য আবশ্যক, যাতে করে বিনা টেনশনে একাগ্রতার সঙ্গে দিনের এই মহান খেদমত তিনি আঞ্জাম দিতে পারেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের বোঝার তাওফিক দান করুক।

 


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রোহিঙ্গাসংকট: সমাধানের পথ খুলুক দ্রুত
মাইজভা-ার শরিফ : ঐশ প্রেক্ষিত
রমজানে খাদ্য গ্রহণে সচেতন হোন
রমজানের রহমত-মাগফিরাত-নাজাতের বানে ভেসে যাক পাপ
আল্লাহ ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নাই
আরও
X

আরও পড়ুন

মতলব মুন্সীর হাট বাজারে আগুনে পুড়েছে ১৭ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

মতলব মুন্সীর হাট বাজারে আগুনে পুড়েছে ১৭ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

আর্টেমিস অ্যাকর্ডে যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশকে স্বাগত জানাল যুক্তরাষ্ট্র

আর্টেমিস অ্যাকর্ডে যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশকে স্বাগত জানাল যুক্তরাষ্ট্র

দেশের চার অঞ্চলে দুপুরের মধ্যেই ঝড়ের শঙ্কা, নদীবন্দরগুলোকে সতর্ক বার্তা

দেশের চার অঞ্চলে দুপুরের মধ্যেই ঝড়ের শঙ্কা, নদীবন্দরগুলোকে সতর্ক বার্তা

সাগরে ডাকাতি: ২ কোটি টাকার মালপত্র লুট, ২৫ ঘণ্টা পর ৬৮ জেলে উদ্ধার

সাগরে ডাকাতি: ২ কোটি টাকার মালপত্র লুট, ২৫ ঘণ্টা পর ৬৮ জেলে উদ্ধার

ইসরাইলি অবরোধে অপুষ্টিতে ভুগছে গাজার ৬০,০০০ শিশু : জাতিসংঘ

ইসরাইলি অবরোধে অপুষ্টিতে ভুগছে গাজার ৬০,০০০ শিশু : জাতিসংঘ

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গোপন ঢাকামুখী যাত্রা, গোয়েন্দা তথ্যে চাঞ্চল্য

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গোপন ঢাকামুখী যাত্রা, গোয়েন্দা তথ্যে চাঞ্চল্য

ঢাকায় তাপমাত্রা কমার আভাস, শীতল দিনে স্বস্তির সম্ভাবনা

ঢাকায় তাপমাত্রা কমার আভাস, শীতল দিনে স্বস্তির সম্ভাবনা

হঠাৎ বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল, ভারতের উদ্দেশ্য কী ছিল?

হঠাৎ বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল, ভারতের উদ্দেশ্য কী ছিল?

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৯ জিএমকে ডিএমডি পদে পদোন্নতি

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৯ জিএমকে ডিএমডি পদে পদোন্নতি

নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের দাবিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি ডিসি'র

নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের দাবিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি ডিসি'র

ইসরায়েলের বর্বরতার প্রতিবাদে রাজধানীতে মোটরসাইকেল র‌্যালি

ইসরায়েলের বর্বরতার প্রতিবাদে রাজধানীতে মোটরসাইকেল র‌্যালি

সৈয়দপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার বাড়ি থেকে বোমা সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার

সৈয়দপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার বাড়ি থেকে বোমা সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার

বিনিয়োগকারীদের চোখ আগামী নির্বাচিত সরকারের দিকে: খসরু

বিনিয়োগকারীদের চোখ আগামী নির্বাচিত সরকারের দিকে: খসরু

ভারতজুড়ে ওয়াকফ আইন নিয়ে তীব্র বিক্ষোভ ও আইনি লড়াই

ভারতজুড়ে ওয়াকফ আইন নিয়ে তীব্র বিক্ষোভ ও আইনি লড়াই

ভক্ত, দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত মোরেলগঞ্জের লক্ষীখালি বারুনী স্নানোৎসব ও ধর্মীয় মাতুয়া মেলা

ভক্ত, দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত মোরেলগঞ্জের লক্ষীখালি বারুনী স্নানোৎসব ও ধর্মীয় মাতুয়া মেলা

ইসরায়েলি অবরোধে ত্রাণহীন গাজায় মানবিক বিপর্যয়

ইসরায়েলি অবরোধে ত্রাণহীন গাজায় মানবিক বিপর্যয়

ড. ইউনূসের নেতৃত্ব বাংলাদেশের সমৃদ্ধি আনবে, প্রত্যাশা আমিরাত প্রেসিডেন্টের

ড. ইউনূসের নেতৃত্ব বাংলাদেশের সমৃদ্ধি আনবে, প্রত্যাশা আমিরাত প্রেসিডেন্টের

নদীতে গোসল করতে নেমে প্রাণ গেল দুই বোনের

নদীতে গোসল করতে নেমে প্রাণ গেল দুই বোনের

জীবিত অভিবাসীদের ‘মৃত’ ঘোষণা করে তাড়াচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

জীবিত অভিবাসীদের ‘মৃত’ ঘোষণা করে তাড়াচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

বঙ্গোপসাগরে ৪ ট্রলারে ডাকাতি, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৮

বঙ্গোপসাগরে ৪ ট্রলারে ডাকাতি, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৮