আমার নামাজ আমার অনুভুতি

Daily Inqilab মুন্সি আব্দুল কাদির

০৯ মে ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৪, ১২:১৮ এএম

কোন কাজ যত সামনে দিকে যায়, তত সে গভীরতা পায়। যত সামনের দিকে যায় তত শেষের দিকে আগায়। এই আগানোর মধ্যে চিন্তার স্থিরতা, নিবিড়তা, ধ্যান সবকিছুই বাড়তে থাকে। আমি নামাজের প্রথম রাকাত শেষ করেছি। আবারও আমি মহান রবের শ্রেষ্ঠত্ব বড়ত্বের ঘোষনা দিয়ে দাঁড়াচ্ছি। আমার নামাজের শুরু থেকে এখন কি মধুরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। না কি কখন নামাজ শেষ হবে, কত কাজ ফেলে নামাজে এসেছি এমন অস্থিরতা বাড়ছে। জীবন্ত নামাজ মানে জীবন্ত ইমান। ইমানে যার গভীরতা বেশি, তার নামাজেই মধুরতা বেশি। সে যখন নামাজে দাড়ায় পৃথিবীর কোন ধ্যান আর থাকে না। সে মাওলার ধ্যানে বিভোর হয়ে যায়। কিন্তু আমার নামাজ তাদের মত নয়। বছরের পর বছর নামাজ পড়ে যাচ্ছি। জীবনে হাজার হাজার রাকাত নামাজ পড়েছি, লক্ষ লক্ষ সেজদা করেছি। কই আমার পরিবর্তন কই?

আল্লাহর প্রিয়গন ইমান আমলে খুব যতœবান। আমি প্রথম রাকাতে সব কাজ শেষ করেছি। দ্বিতীয় রাকাতে দন্ডায়মান আবার মাওলার সামনে মানব জীবনের সর্ব শ্রেষ্ঠ দোয়া পেশ করব। আমার ভাব, আমার চাহনী, আমার পেরেশানী কিছুতেই পরিবর্তন নেই। প্রতি রাকাতে প্রথমেই আমাকে এই সুরা পাঠ করতে হয়। তার গুরুত্ব, তার প্রয়োজনীয়তা কোনটাইর চিন্তাই আমার দেমাগে নেই। মুখস্ত আছে পড়ছি। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।

যার মূল্য যত বেশি তার যতœই বেশি নেওয়া হয়। তার যথাযথ হেফাজত হয়েছে কি না বার বার ফিরে তাকানো হয়। সুরা ফাতেহায় আমার জীবনের সব চাওয়া পাওয়া। প্রতি নামাজের প্রতি রাকাতে তাকে বার বার পড়া হয়। তাকে ছেড়ে দিলে নামাজ আদায় হয় না। কী তার ওজন, কী তার মাহাত্ম! প্রথম রাকাতে পড়লাম। আবার দ্বিতীয় রাকাতে পড়র্ছি বার বার পড়তেই থাকব। তার ওজন তার মর্যাদা জানা না থাকলে আমার মধ্যে কোন ভাবান্তর জাগ্রত হবে না। কোন পরিবর্তন আমার মধ্যে আসবে না। সালাতে মনোযোগী, সালাতে খুশু খুজু ওয়ালা ব্যক্তিই কেবল সফলকাম। আমার প্রয়োজন আমি যত উপলব্ধি করতে পারব। আমার দরকার যত আমি বুঝতে পারব। তার প্রতি আমার মনোযোগ আমার চেষ্টা সাধনা তত বেশি নিয়োজিত করব। সুরা ফাতেহা ই যে আমার জীবনের চাওয়া পাওয়া এই উপলব্ধি আমার মধ্যে যত বেশি মজবুত হবে। সুরা ফাতেহার প্রতি টান, ভালবাসা তত বেশি থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর প্রয়োজনীয়তা আমার উপলব্ধিতে না থাকার কারনে তোতা পাখির মত শুধু আওড়াতে থাকি। সে আমার মধ্যে কোন ভাবান্তর সৃষ্টি করতে পারে না।

আমি প্রতিদিন আমার দায় নিয়ে নামাজে দাড়াই। আমার মনের বদ্ধমূল ধারনা যে আমি শুধু এভাবে হাজিরা দিতে থাকলেই আমার দায়িত্ব শেষ। দায় মুক্তি আর ভালবাসা কখনো এক জিনিস হতে পারে না। এখানে রবের প্রতি মহব্বতের টান অনুপস্থিত।

আমি সুরা ফাতিহার সাথে আবার অন্য সুরা পড়ব, রুকু করব সেজদা করব সবই আগের রাকাতের মত করতে থাকব। একজন আল্লাহ ওয়ালা যখন নামাজে আগাতে থাকেন মাওলার প্রতি তার নিবিড়তা বাড়তে থাকে অন্যদিকে আমার তাড়াহুড়া বাড়তে থাকে। এই তাড়াহুড়া মাওলার সাথে আমার ভালবাসাহীনতা নির্দেশ করে। আমি দায়সারা গুছের নামাজ আদায় করি।

নামাজের প্রত্যেকটি কাজের মূল্যায়ন যদি আমার যথাযথ থাকত এই নামাজের মাধ্যমে আমি আল্লাহওয়ালা হয়ে যেতে পারতাম। আমি আমার নামাজ নিয়ে সন্তুষ্টির ঢেকুর তুলছি। প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাজ, প্রিয় সাহাবাগনের নামাজ, আল্লাহ ওয়ালাদের নামাজের প্রতি আমাদের কোন খেয়াল নেই। তাদের নামাজ কেমন ছিল, তা জানার চেষ্টাও করছি না। তাদের নামাজের মত আমার নামাজকে সাজাতে চাচ্ছি না। এতে করে এমনিতেই আমার নামাজ আল্লাহর খুব প্রিয় হয়ে যাবে। কোন ত্রুটি বিচ্যুতি থাকবে না। এমনটি কি হতে পারে!

নামাজের দ্বীনের খুঁটি, হৃদয়ের প্রশান্তি, কষ্টে দুশ্চিন্তায় সুশীতল ছায়া, দুখের উপশম, পেরেশানীতে শান্তির পরশ, মহান রবের সাথে বান্দার ত্রুটিহীন সংযোগ। এমন ইবাদাতে আমার মন উজাড় করে দেওয়ার কথা। কই আমার মধ্যেতো তেমন কিছু নেই। এক রাকাতের পর এক রাকাত শেষ করছি। কেমন যেন গা ছাড়া ভাব আমার। সময় বয়ে যাবে, নামাজও এক এক রাকাত করে শেষ হবে। আমার লাভ কী হবে, এই চিন্তাটা কি আমি শুরু করতে পারি না।

হ্যা আমি পারি। কিন্তু আমার নাফসকে আমি এতো বেশি হৃষ্ট পোষ্ট করেছি। সে আর আমার কথা শোনতে চায় না। বরং সেই আমাকে তার কথা মত চলতে বাধ্য করছে। তাকে আমি আমার বিবেকের দাস বানাতে পারিনি বরং আমি নিজেই তার মুরিদ হয়ে বসে আছি। এই রমজান তার নাকে রশি লাগানোর সময়। এই রমজানে যদি আমি সফল হই তবে আমার রোজা যেমন সুন্দর হয়ে যাবে তেমনি ভাবে আমার নামাজও অনেক অনেক সুন্দর হয়ে যাবে। তাই আসুন রোজা আর নামাজকে প্রাণবন্ত জীবন্ত করতে চিন্তা ফিকির শ্রম দেই।

লেখক: ইসলামী চিন্তাবিদ, কলামিষ্ট।


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রোহিঙ্গাসংকট: সমাধানের পথ খুলুক দ্রুত
মাইজভা-ার শরিফ : ঐশ প্রেক্ষিত
রমজানে খাদ্য গ্রহণে সচেতন হোন
রমজানের রহমত-মাগফিরাত-নাজাতের বানে ভেসে যাক পাপ
আল্লাহ ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নাই
আরও
X

আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গোপন ঢাকামুখী যাত্রা, গোয়েন্দা তথ্যে চাঞ্চল্য

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গোপন ঢাকামুখী যাত্রা, গোয়েন্দা তথ্যে চাঞ্চল্য

ঢাকায় তাপমাত্রা কমার আভাস, শীতল দিনে স্বস্তির সম্ভাবনা

ঢাকায় তাপমাত্রা কমার আভাস, শীতল দিনে স্বস্তির সম্ভাবনা

হঠাৎ বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল, ভারতের উদ্দেশ্য কী ছিল?

হঠাৎ বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল, ভারতের উদ্দেশ্য কী ছিল?

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৯ জিএমকে ডিএমডি পদে পদোন্নতি

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৯ জিএমকে ডিএমডি পদে পদোন্নতি

নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের দাবিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি ডিসি'র

নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের দাবিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি ডিসি'র

ইসরায়েলের বর্বরতার প্রতিবাদে রাজধানীতে মোটরসাইকেল র‌্যালি

ইসরায়েলের বর্বরতার প্রতিবাদে রাজধানীতে মোটরসাইকেল র‌্যালি

সৈয়দপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার বাড়ি থেকে বোমা সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার

সৈয়দপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার বাড়ি থেকে বোমা সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার

বিনিয়োগকারীদের চোখ আগামী নির্বাচিত সরকারের দিকে: খসরু

বিনিয়োগকারীদের চোখ আগামী নির্বাচিত সরকারের দিকে: খসরু

ভারতজুড়ে ওয়াকফ আইন নিয়ে তীব্র বিক্ষোভ ও আইনি লড়াই

ভারতজুড়ে ওয়াকফ আইন নিয়ে তীব্র বিক্ষোভ ও আইনি লড়াই

ভক্ত, দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত মোরেলগঞ্জের লক্ষীখালি বারুনী স্নানোৎসব ও ধর্মীয় মাতুয়া মেলা

ভক্ত, দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত মোরেলগঞ্জের লক্ষীখালি বারুনী স্নানোৎসব ও ধর্মীয় মাতুয়া মেলা

ইসরায়েলি অবরোধে ত্রাণহীন গাজায় মানবিক বিপর্যয়

ইসরায়েলি অবরোধে ত্রাণহীন গাজায় মানবিক বিপর্যয়

ড. ইউনূসের নেতৃত্ব বাংলাদেশের সমৃদ্ধি আনবে, প্রত্যাশা আমিরাত প্রেসিডেন্টের

ড. ইউনূসের নেতৃত্ব বাংলাদেশের সমৃদ্ধি আনবে, প্রত্যাশা আমিরাত প্রেসিডেন্টের

নদীতে গোসল করতে নেমে প্রাণ গেল দুই বোনের

নদীতে গোসল করতে নেমে প্রাণ গেল দুই বোনের

জীবিত অভিবাসীদের ‘মৃত’ ঘোষণা করে তাড়াচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

জীবিত অভিবাসীদের ‘মৃত’ ঘোষণা করে তাড়াচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

বঙ্গোপসাগরে ৪ ট্রলারে ডাকাতি, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৮

বঙ্গোপসাগরে ৪ ট্রলারে ডাকাতি, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৮

এক সপ্তাহে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার ৬০৮

এক সপ্তাহে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার ৬০৮

নিউইয়র্কে নদীতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, শিশুসহ নিহত ৬

নিউইয়র্কে নদীতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, শিশুসহ নিহত ৬

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৪০ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৪০ ফিলিস্তিনি

রামগতিতে চাঁদা না দেয়ায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের হামলায় দিনমজুর আহত, আটক ১

রামগতিতে চাঁদা না দেয়ায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের হামলায় দিনমজুর আহত, আটক ১

দোয়ারাবাজার সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে বাংলাদেশী নিহত

দোয়ারাবাজার সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে বাংলাদেশী নিহত