আমার আমলই আমার প্রধান ভরসা
০৯ মে ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৪, ১২:১৮ এএম
আমার আমলই আখিরাতে আমার প্রধান ভরসা। পাশ মার্ক যদি সর্বনি¤œ চল্লিশ হয় তাহলে কমপক্ষে হলেও আপনাকে সাইত্রিশ পেতে হবে। মনে রাখবেন গ্রেস মার্ক কখনো তিন এর অধিক হয় না। আরো মনে রাখবেন, গ্রেস মার্ক পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি হলো সেই ব্যক্তি, যে নিজের সকল যোগ্যতা, চেষ্টা-সাধনা,আন্তÍরিকতা ও পরিশ্রম ব্যয় করে সাইত্রিশ নাম্বার অর্জন করেছে। পাশ করার জন্য সে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছে। যার প্রমাণ নিরীক্ষক তার পরীক্ষার খাতা দেখে অনুমাণ করতে পেরেছেন। কিন্তু যে কোন যৌক্তিক কারণে সে পাশ মার্ক পায়নি। সে-ই কেবল গ্রেস মার্কের উপযুক্ত। এমনটি কি কখনো সম্ভব যে, সে খাতায় কিছুই লিখেনি, অথচ সে পাশ মার্ক পাওয়ার আশা করে। আখিরাতে মুক্তির ব্যাপারটাও ঠিক সেই রকমই হবে। সুপারিশ কেবল তাদের ভাগ্যেই জুটতে পাবে যারা আন্তরিকতার সাথে ভালো আমল করেছে। কিন্তু আপ টু দ্যা মার্ক সে পৌঁছতে পারিনি। কেউ যদি অন্যের ওপর ভরসা করে চল্লিশ মার্কের মধ্যে পুরোটাই দাবী করে, নিজের কোন কনট্রিবিউশনই না থাকে, তবে তা হবে বড়ই বোকামী ও আপসোসের বিষয়।
প্রতিটি জীন ও ইনসানের পরীক্ষার রিজাল্ট আখিরাতে প্রদান করা হবে, সে রিজাল্ট প্রকাশের আগে তাকে মৌখিক পরীক্ষারও সম্মুখীন হতে হবে। সেই পরীক্ষা নিবেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। এরপর পরীক্ষার ট্রান্সক্রিপট বা প্রতিলিপি (আমলনামা) প্রদান করা হবে। যাকে তার ডান হাতে এই প্রতিলিপি প্রদান করা হবে সে পাশ, যার বাম হাতে দেয়া হবে সে ফেল। সুতরাং নিরীক্ষকের দয়া ও সুদৃষ্টি কামনার সাথে সাথে নিজের আমল যথাসাধ্য বৃদ্ধি করুন। হয়তোবা মহান নিরীক্ষকের সুদৃষ্টি বা দয়ার উদ্রেক হওয়ার সম্ভবনা হয়ে যেতে পারে। অবহেলা ও খামখেয়ালীপনা করবেন না।
শাফায়াতের আশা করা খারাপ নয়। কিন্তু শাফায়াতকে একমাত্র মুক্তির সোপান মনে করা মারাত্মক ভূল। আপনি আপনার চুড়ান্ত সাধনা অব্যাহত রেখে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসুলুল্লাহ স: কর্তৃক প্রদর্শিত পথে নিজেকে পরিচালিত করুন। আল কুরআনের পরিভাষায় শাফায়াত সম্পুর্ণভাবে আল্লাহর ইচ্ছাধীন। কেউ নিজে নিজে ইচ্ছা করে কারোর পক্ষে শাফায়াত করার জন্য এগিয়ে আসতে পারবে না। বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অনুমতি দেন তিনিই শুধু শাফায়াত করার অধিকার পাবেন। দুনিয়ায় রাসুলুল্লাহ সা: ছাড়া আর যাদেরকে আমরা শাফায়াতের জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছেন, এটি সম্পূর্ণ ভুল আর আল্লাহ তাদেরকে অনুমতি দিলে তো।
আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়: “তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দাও”(সুরা আশ শুয়ারা:২১৪) তখন রাসুলুল্লাহ সা: দাঁড়ালেন এবং বললেন কুরাইশ সম্প্রয়দায়! অথবা অনুরূপ বাক্য, নিজেদের কিনে নাও। আমি আল্লাহর নিকট তোমাদের কোন উপকারে আসবো না। হে বনী আব্দে মানাফ! আমি আল্লাহর নিকট তোমাদের কোন উপকারে আসবো না। হে আব্বাস ইবনে আ: মোত্তালিব! আমি আল্লাহর নিকট তোমার কোন উপকারে আসবো না। হে আল্লাহর রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি তোমার কোন উপকারই করতে পারবো না। হে মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমা! আমার ধন সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চাও, কিন্তু আল্লাহর নিকট আমি তোমার কোনই উপকারে আসবো না।”(বুখারী: ৪৭৭১, কিতাবু তাফসিরিল কুরআন, বাবু ক্বাউলিহি ‘ওয়া আনযির আশিরাতাকা......., মুসলিম ৩৮৯, কিতাবুল ঈমান, বাবু ফি ক্বাউলিহি তা’আলা‘ওয়া আনযির আশিরাতাকাল আক্বরাবিন)
আল্লাহর প্রতিটি হুকুম সহীহ-শুদ্ধ,পরিচ্ছন্ন ঈমান ও সঠিক জ্ঞানের ভিত্তিতে পরিপালন করুন। নিজে আমল না করে অন্যেরা সুপারিশ করে আপনাকে পার করে দেবেন এ ধরণের ভুল ভরসা নিয়ে বসে থাকবেন না। আপনি হাত গুঠিয়ে বসে থাকবেন, শিরক, কুফর ও হালাল-হারাম গুলিয়ে জীবন যাপন করবেন আর অন্যের সুপারিশ-এর আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করবেন, আপনার কপালে সুপারিশ মেলা কঠিন। একদিকে তিনি আপনার জন্য কি সুপারিশ করবেন? সুপারিশকারী তো আপনার সামান্য পূঁিজ দেখতে পাবে না। দ্বিতীয়ত: আল্লাহ সামিউম বাছির, তিনি সর্বদ্রষ্টা, তিনি আপনার মনের খবরও জানেন, তিনি আপনার নিষ্ঠা, চেষ্টা ও সাধনার সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রেখেছেন অর্থাৎ আপনার আমলে আপনার কতটুকু খুলুছিয়াত ছিল, তার প্রেক্ষিতেই তো তিনি কাউকে আপনার সুপারিশ নিয়োগ দিবেন। এছাড়া কারো সামান্য শব্দ করার সাহস থাকবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তিনি জানেন মানুষের সামনে যা কিছু আছে এবং অগোচরে যা আছে।”(সুরা বাকারা:২৫৫)
এ আয়াতে এক শ্রেনীর মুশরিকদের চিন্তার প্রতিবাদ করা হয়েছে, যারা তাদের বুযুর্গ ব্যক্তিবর্গ, ফেরেশতা বা অন্যান্য সত্তা সম্পর্কে এই ধারণা পোষণ করতো যে, আল্লাহর কাছে তাদের বিরাট প্রতিপত্তি। তারা যে কথার ওপর অটল থাকে, তা তারা আল্লাহর কাছ থেকে আদায় করেই ছাড়ে। তারা আল্লাহর কাছ থেকে যে কোন কার্যোদ্ধার করতে সক্ষম। এখানে তাদেরকে বলা হচ্ছে, আল্লাহর ওখানে প্রতিপত্তির তো কোন প্রশ্নই উঠে না, এমনকি কোন শ্রেষ্ট নবী-রাসুল এবং নিকটতম কোন ফেরেশতাও এই পৃথিবী ও আকাশের মালিকের দরবারে বিনা অনুমতিতে একটি শব্দও উচ্চারণ করার সাহস রাখে না। তাঁর কর্তৃত্বে কেউ শরীক নেই এবং কেউ নিজের সুপারিশের জোরে তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতাও রাখে না। অন্য কেউ তাঁর কাজে কিভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে যখন তার কাছে কোন মানুষের প্রকাশ্য ও অগোচরের জ্ঞান তার কাছে নেই। শুধু তিনিই জানেন সে প্রকাশ্যে বা অন্তরালে যা করেছে। সুতরাং কোন মুসলিমের ভেতর এ ধরণের মুশরিকি চিন্তা-চেতনা থাকা উচিত নয়। বরং আপনার আমলই আপনার প্রধান ভরসা।
আপনার খুলুছিয়াতের উপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন আপনার সামান্য কমতির জন্য সুপারিশ করার অনুমতি হয়তো বা দিতে পারেন। আল কুরআনে শাফায়াতের ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশনাগুলো নি¤েœ উল্লেখ করা হলো:
“কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর সামনে সুপারিশ করতে পারে।”(বাকারাহ:২৫৫)
“সেদিন সুপারিশ কার্যকর হবে না, তবে যদি করুণাময় কাউকে অনুমতি দেন এবং তার কথা শুনতে পছন্দ করেন।(তাহা:১০৯)
“সেদিন যখন রূহ ও ফেরেশতারা সবাই কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়াবে, একটু কথা বলবে না, শুধুমাত্র সে-ই বলতে পারবে যাকে করুণাময় অনুমতি দেবেন এবং যে ন্যয়সংগত কথা বলবে।”(আননাবা:৩৮)
“আর তারা কারোর সুপারিশ করে না সেই ব্যক্তির ছাড়া যা পক্ষে সুপারিশ শোনার জন্য রাজী হবেন এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত হয়ে থাকে।”(আম্বিয়া:২৮)
“কত ফিরেশতা আকাশে আছে, তাদের সুপারিশ কোনই কাজে লাগবে না, তবে একমাত্র তখন যখন আল্লাহর কাছ থেকে অনুমতি নেবার পর সুপারিশ হরা হবে এবং এমন ব্যক্তির পক্ষে করা হবে যার জন্য তিনি সুপারিশ শুনতে চান এবং পছন্দ করেন।”(আন নাজম:২৬)
“এটি সেইদিন যখন কারোর জন্য কোন কিছু করার সাধ্য কারোর থাকবে না। ফায়সারা সেদিন একমাত্র আল্লাহর ইখতিয়ারে থাকবে।”(ইনফিতার:১৯)
উল্লেখিত শাফায়াত সম্পর্কে মাত্রাতিরিক্ত কোন ধারণা পোষণ করলে, তা আল্লাহর সার্বভৌমত্বে অবৈধ অনুপ্রবেশ করা হয় এবং তা শিরক জাতীয় গুনাহের পর্যায়ভূক্ত হবে। সুপারিশ সম্পর্কে বুখারী মুসলিমের সুদীর্ঘ হাদীস রয়েছে, যেখানে কিয়ামতে আম্বিয়ায়ে কেরামের অসহায়ত্বের অবস্থাটি আমাদেও স্মরণে রাখা উচিত। হাশরের ময়দানে যখণ আল্লাহ বিচারের দন্ড হাতে খুবই রাগান্বিত থাকবেন তখন সমস্ত মানুষ আদম আঃ থেকে শুরু করে একে একে নুহ আঃ, ইব্রাহিম আঃ, মুসা আঃ, ইসা আঃ এর কাছে যাবে, সকলেই তাদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখপূর্ব্ক অপারগতা প্রকাশ করবেন। সুতরাং চিন্তাই করতে পারছেন সুপারিশ কি ধরণের বিষয়। শাফায়াতের আশা করা ভালো, কিন্তু শাফায়াতকে ভরসা করে নিজের পূঁিজ বৃদ্ধিতে অবহেলা করা বোকামী হবে।
সুতরাং নিজের আমল বৃদ্ধিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করুন, সুচারুরূপে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের হুকুম পালন করতে থাকুন, খুলুছিয়াতের সাথে দীনকে আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করুন। আপনার চেষ্টার সবটুকু ব্যয় করুন ইনশা’আল্লাহ করুণাময় আল্লাহ হয়তোবা সামান্য পূজিঁর অভাবেব জন্য কাউকে আপনার সুপারিশের জন্য অনুমতি দিবেন।
লেখক : চিন্তাবিদ, কলামিষ্ট।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন
টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নীতি করার তাগিদ
লোকসংগীত শিল্পী নিপা আহমেদ সারাহ্ এর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি ও হার্ট ফাউন্ডেশনের কর্মশালা
বাফেদার ৩১তম এজিএম অনুষ্ঠিত
পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ
হারের বৃত্তে সিটি, নেমে গেল ছয়ে
ঈশ্বরদীতে দূর্বৃত্তের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আহত
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক